মনোয়ারা বেগমের শেষ ইচ্ছা মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর স্বীকৃতি! নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৪:৪৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০১৯ উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বামীর স্বীকৃতি নিয়ে মরতে চান নড়াইলের মনোয়ারা। সন্মুখ সমরে জীবন বাজি রেখে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রতিষ্ঠিত করেও কাজী গোলাম আশরাফ খোকন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। গত প্রায় তিন বছর আগে তিনি মারা গেছেন। এখন তার অসুস্থ স্ত্রীর আকুতি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে মরতে চান। জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের পলইডাঙ্গা গ্রামের কাজী গোলাম আশরাফ খোকন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন বীর সেনানী ছিলেন। বাইশ বছরের টগবগে যুবক ভারতের উত্তর প্রদেশের টান্ডুয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে ৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে শত্রু মুক্ত করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৮০ সালের দিকে ভাগ্যের অন্বেষনে নিজ জেলা নড়াইল ত্যাগ করে নারায়নগঞ্জ জেলায় চাকরি করেছেন। জীবিত অবস্থায় প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবার জন্য চেষ্টা করেননি। কিন্তু পরে যখন চেষ্টা করেন তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। গত ২০১৬ সালের ২০ জালাই তিনি ক্যান্সরে আক্রান্ত হয়ে নারায়নগঞ্জে মারা যান। বর্তমানে তিনি স্ত্রী, এক পূত্র ও তিন কন্যা রেখে গেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন কারনে যারা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি বর্তমান সরকার তাদেরকে ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে অনলাইনে দরখাস্ত করতে বলা হয় এবং যাচাই-বাছাই শুরু হয়। তখন গোলাম মোর্শেদ খোকনের বড় মেয়ে ইশরাত জাহান তানিয়া এ বিষয়টি জানতে পেরে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তার বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা-তদবির শুরু করেন। নড়াইলে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে দরখাস্ত করেন। কিন্তু তার নাম যাচাই-বাছাই-এর আওতায় এসেছিলো কিনা বা খোকনের নাম জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছিলো কিনা তা খোকনের মেয়ে জানেন না। জানা গেছে, বিভিন্ন কারনে সরকার যাচাই-বাছাই কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদর উপজেলার কমান্ডার এস.এ বাকি বলেন, খোকন, ৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর নড়াইল মুক্ত দিবসে পাকিস্তানি হানাদার ও এদেশীয় রাজাকারদেও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তিনি ক্ষোভের সাথে তার মতো একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কেন তালিকাভূক্ত হতে পারেনি, সেটাই আশ্চর্য়ের বিষয়। মৃত্যুর পর হলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার স্বীকৃতি পাওয়া জরুরি। ১৯৭১ সালে তৎকালীন নড়াইল মহকুমা গেরিলা বেইজ ও ডেমুলেশন কমান্ডার অ্যান্ড পলিটিক্যাল মোটিভেটর অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জিন্নাহ এবং সদর উপজেলা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ুন কবির জানান, গোলাম আশরাফ খোকন আমাদের সাথে ভারতের উত্তর প্রদেশের টান্ডুয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে একসাথে দেশে ফিরে এসে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি। ১০ ডিসেম্বর নড়াইল মুক্ত দিবসে তৎকালীন ওয়াপদা ভবনে (বর্তমান পানি উন্নয়ন বোর্ড) অবস্থিত রাজাকার এবং পাকিস্তানি বহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে সে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধুর কাছে আমরা একসঙ্গে অস্ত্র জমা দেই। দেশ স্বাধীনের পর আর্থিক কারনে খোকন নড়াইল ত্যাগ করে নারায়নগঞ্জ চলে যায়। সেখানে ছোটখাট একটি চাকরি করতেন। তার পরিবারের অবস্থা এখনো স্বচ্ছল নয়। তার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। গোলাম আশরাফের কন্যা ইশরাত জাহান বলেন, ২০১৪ সালে ‘ঢাকায় নড়াইল ফেসবুক ফ্রেন্ডস’ নামে একটি সংগঠন তার বাবাসহ নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করেন। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন একে.এম মোজাম্মেল হক। জাসদ এবং ১৪ দলীয় জোট নেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। গোলাম আশরাফের অসুস্থ স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৬০) কান্না জড়িত কন্ঠে এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমার স্বামী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি তার জীবদ্দশায় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে ভাবেননি। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে আমি মরতে চাই। এ আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা। এজন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি কামনা করেন। /আরএ Comments SHARES বিশেষ প্রতিবেদন বিষয়: