হৈবতপুরে মিন্টুর মদদে নান্নুর ক্যাডাররা সক্রিয়

প্রকাশিত: ৯:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০১৯

যশোর প্রতিনিধি: যশোরের ত্রাস মোখলেছুর রহমান নান্নু। তিনি যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের সাইফুল ইসলাম ছাফুর ছেলে। পেশাদার খুনি ও অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে তাকে সবাই চিনতেন।

২০১৭ সালে ৮ আগস্ট নান্নু ভারতের বনগাঁয় খুন হয়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। পরিবার থেকেও নিশ্চিত করা হয় তার মৃত্যুর খবরটি। কিন্তু নান্নু বাহিনীর ক্যাডাররা থেমে নেই। স্থানীয় মিন্টু নামে এক ব্যক্তির মদদে নান্নু বাহিনীর ক্যাডারা আবারো সংগঠিত হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া ও নানা অপকর্ম থেকে রক্ষা পেতে মিন্টু এই বাহিনীকে সক্রিয় করে তুলেছে। অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে নান্নু বাহিনী নিয়ন্ত্রন করছে সেকেন্ড ইন কমান্ড একাধিক হত্যা মামলার আসামি ললিতাদহের সাদ্দাম। তারই দখলে রয়েছে নান্নুর রেখে যাওয়া অস্ত্র ভান্ডার। তার প্রভাবে নান্নু বাহিনীর এখন সাদ্দাম বাহিনী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাদ্দাম ছিলো নান্নুর সবচেয়ে আস্থাভাজহন। বাহিনী প্রধান সাদ্দামের সহযোগী হিসেবে তার সাথে সাতমাইল বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা দাপিয়ে নলিতাদহ গ্রামের আনার, সোহাগ ও ডহেরপাড়ার রাজ্জাক। তাদের কাছে সব সময় থাকে বিদেশি আরমান পিস্তল। এছাড়া এই বাহিনীর অন্য ক্যাডারদের কাছে থাকে বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র। তাদের পদভারে এলাকা আবারো প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে।

সুত্র জানায়, ২৯ মার্চ বারীনগর-সাতমাইল বাজারে এক সময়ের চরমপন্থি নেতা ইদ্রিস আলীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার পর থেকে সাদ্দাম এলাকায় বড় ত্রাস হিসেবে পরিচিতি পায়। ঘটনার সময় তার সাথে ছিলো নান্নু। এই খুনের পর থেকে নান্নু ভারতে পাড়ি জমায়। আর সাদ্দামও গাঁ ঢাকা দেয়।

ভারতের বনগাঁয় নান্নু খুন হওয়ার খবর পেয়ে বাহিনীর সবাই আত্মগোপনে চলে যায়। বর্তমানে এই বাহিনীর সদস্যরা খুন জখম, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মামলা আসামি হওয়া সত্ত্বেও এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে।

অভিযোগ উঠেছে, মিন্টু নিজের স্বার্থের জন্য নান্নু বাহিনীর ক্যাডারদের সক্রিয় করে তোলেছে। তার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে হৈবতপুর ইউনিয়নে একক আধিপত্য বিস্তার করা। এছাড়া বিগত দিনে প্রতারণা ও অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থ আয়ের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা কেউ যেন ভয়ে মুখ খুলতে না পারে। এই জন্য নান্নু বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড সাদ্দামের সাথে হাত মিলিয়ে মিন্টু- ক্যাডারদের আবারো একত্র করেছে।

তারা সবাই মিন্টুর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর এই সুযোগে মিন্টু শালিস বিচারের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন। ওই ক্যাডাররা তার সুদে কারবারও দেখভাল করে থাকে।

নলিতাদহ গ্রামের জয়নাল ২ লাখ টাকা সুদে নিয়ে কয়েক লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। তবুও সুদে আসলে দ্বিগুন টাকা দাবি করা হয়। দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের হুমকিতে জয়নাল এখন বাড়ি ছাড়া।

এলাকাবাসী জানয়েছেন, বিগত দিনে এই মিন্টু সরকারি চাকরি দেয়া ও বিদেশ পাঠানোর নাম করে একাধিক মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা।

সরকারি চাকরি দেয়ার কথা বলে চাঁনপাড়া গ্রামের হাসানের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা, জাহিদের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নেয়া হলেও আজ অবধি তাদের চাকরি দিতে পারেননি। এছাড়া বিদেশ পাঠানোর নাম করে রনি নামে এক যুবকের কাছ ৫ লাখ টাকা নেয়ার পর তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলে উল্টো তাদের হুমক ধামকি দেয়া হয়। এভাবে প্রতারণা ও অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে তিনি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। এক সময় খালি হাতে সাতমাইল বাজারে আসা মিন্টু এখন হয়েছেন আলীশান বাড়িসহ অঢেল ধন সম্পদের মালিক।

তার কাছে পাওনাদাররা এসে যেন চাপ সৃষ্টি না করতে পারে তার জন্য সব সময় দুই তিনজন ক্যাডারকে সাথে রাখা হয়। বর্তমানে তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহার করানো হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, মিন্টুর নির্দেশেই মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। কিন্তু ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ করেন না। কারণ সাদ্দাম ও তার বাহিনীর সদস্যদের চাঁদা চাওয়ার স্টাইলেই সাধারণ মানুষ কম্পমান। বারীনগর বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, স্থানীয় বারীনগর বাজার, বারোবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সাদ্দাম বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ীকে নীরবে চাঁদা দিতে হয়।

জানা গেছে,ললিতাদাহ খোরশেদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, আশরাফুলের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা, টোটনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা, জাকিরের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা, বাবুলের কাছ থেকে দেড় লাখ, হাকিমের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ছলেমানের স্ত্রীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, কাদেরের স্ত্রীর কাছ থেকে ৩০ হাজার, ছেলে মানিকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ও রেজাউলের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, ছালামের কাছ থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে।

এছাড়া ললিতাদাহ গ্রামের ভৈরব নদের পাড়ে বসতি স্থাপন করে দিয়ে এই সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া বড় হৈবতপুর গ্রামের আমির হোসেনের কাছে ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সাদ্দাম বাহিনী। ওই টাকা পরিশোধ না করায় তার ৪ টি গরু ধরে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাদ্দাম বাহিনীর সকল অপরাধের সাহস দিচ্ছে মিন্টু। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পাশাপাশি কাডাররা প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করছে। এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে মিন্টু সাংবাদিকদের জানান, প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। তিনি কোনো সন্ত্রাসী ক্যাডারকে আশ্রয় দেন না। কারো কাছ থেকে প্রতারণা বা অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন করেননি।

সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সুকুমার কুমার কুন্ডু জানান, এলাকায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। সন্ত্রাসী সাদ্দাম ও তার ক্যাডারদের সশস্ত্র অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারলেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

/আরএ

Comments