‘দাম্পত্যজীবনে স্বর্গীয় সুখ পেতে অবৈধ সম্পর্ক পরিহার করতে হবে’

প্রকাশিত: ১০:৪৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯

শাইখ মাহমূদ হাসান

পুরুষের জীবনে মাকসাদ থাকে প্রাপ্ত বয়সে দ্বিনদার ও সুন্দরী একজন মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। আর মেয়ে হলে দিলের তামান্না থাকে সৎ ও কর্মজীবী একজন ছেলের হাতে নিজেকে সোপর্দ করা। সবাই চায় তাঁর জীবন সাথী যেন সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়। প্রিয়জন যেন রূপে গুণে সুন্দরে হয় অতুলনীয় দৃষ্টান্তহীন। কিন্তু পাপাচারের চিত্র চোখের সামনে ভাসতেই মন বলে কজন এমন আছে যারা তাঁর মনের মত জীবন সাথী বেঁচে নিতে সক্ষম হয়েছে?

সবাই কি পারে সতী মেয়ে ও সৎ ছেলেকে আপন করে নিতে? বিবাহের পূর্বে নিজের যৌবন যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করার কারণে বর্তমান যুগের যুবক- যুবতীদের অধিকাংশই বুকে হাত রেখে নিজের পবিত্রতার ঘোষণা দিতে পারবে কি না আমার জানা নেই।

লক্ষহীন জীবন যেখানে সেখানে অবস্থান করে কোন এক রকম কাটিয়ে দেওয়া যায়। সাথীহীন জীবনে তেমন চিন্তা ভাবনা করার প্রয়োজন না হলেও যখন দুটি মনের বৈধ হয় তখন আবার উদাসীন হয়ে জীবনযাপন করা মুশকিল। সে সময় জীবন চলার পথে বিচক্ষণতার সহিত সামনে কদম বাড়াতে হয়।

বিশেষত খোদা প্রদত্ত বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যক মানুষের জন্য সচেতনতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী। এমনকি যারা বিবাহের আগে নিজের মন মতো জীবন অতিবাহিত করে, চলার পথে কারো পরামর্শের প্রয়োজন অনুভব করে না তাদের অধিকাংশই বিবাহের পর অশান্তির আগুনে পুড়ে।

যৌবনের উদ্ভ্রান্ত চলাফেরা তাদের ভবিষ্যত জীবনে সফলতার সহযোগী হয় না। আর সমাজে প্রচলিত প্রেম- ভালোবাসাও দাম্পত্যজীবনে দুটি মনকে স্বর্গীয় সুখ দিতে পারে না। প্রেমের ক্ষতি বিবাহের আগে বুঝে না আসলেও বিবাহের পর সবারই কমবেশি বুঝে আসে। বিবাহের আগে একাধিক সম্পর্কে জড়িত থাকার কারণে অধিকাংশ ছেলে- মেয়েরাই বৈবাহিক জীবনে সুখি হতে পারে না। ফলে দাম্পত্যজীবনে অশান্তির ঝড় নেমে আসে।

সুখের সংসারে যখন স্বামী-স্ত্রী একে অপর সম্পর্কে জানতে পারে যে, অবৈধ পন্থায় কোনো একজন নিজের শারীরিক চাহিদা পূরণ করছে বা স্বামী-স্ত্রীর কোনো একজন অন্য কারো সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িত তখন তালাক আর ডিভোর্স ছাড়া দুজনের পরস্পর ধন্ধ ও মনমালিন্যের নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না। তাই দাম্পত্যজীবনে চিরসুখী হতে পরিহার করতে হবে বিবাহের পূর্বাপর অবৈধ সম্পর্ক। বন্ধুত্বের নামে রমনা পার্কে প্রেমের আড্ডাবাজী জীবনের তরে ছেড়ে দিতে হবে।

দাম্পত্যজীবনে স্বর্গীয় সুখ পেতে ছোট কালেই অসৎ সঙ্গ ও সুযোগসন্ধানী বন্ধুদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকার শপত নিতে হবে। ডিজিটাল যুগে পবিত্র জীবন গঠন করার জন্য নিজের নফসের সাথে জিহাদ ঘোষণা করতে হবে। কারণ শরয়ী বিবাহ ছাড়া দুটি মানুষের যৌনাচার ইসলামে যেমন হারাম তেমনি সামাজের চোখেও খারাপ। বিবাহ ছাড়া শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য পার্কে বা আবাসিক হোটেলে একত্রিত হওয়ার ইচ্ছাপোষণকারীকে ভদ্রসমাজেও গবাদিপশু মনে করা হয়। যেসব মানুষ যত্রতত্র কুকুরের মত কামবাসনা পূরণ করে তারা হালাল জায়গায় কখনো সন্তুষ্ট হতে পারে না। তারা বৈবাহিক জীবনে প্রিয়জনকে রেখে পরকীয়ার মতো হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আপন নফসের খাহেশাত পূরণ করতে মানসিক রূগীরা বিবাহের পরও অবৈধ মিলনের সুযোগ খুঁজে।

তবে এ শ্রেণীর অনেকেই দাম্পত্যজীবনে খারাপ কাজ থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। নিজের প্রিয়জনকে নিয়েই সুখে থাকতে চেষ্টা করে। জীবনের পাতা থেকে পিছনের ভুল ইতিহাস মুছে আবার পবিত্র জীবন গঠনের যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের অনেকেই একটা সময় নিজের ভুল ও পাপকে স্বীকার করে খোদার কাছে খাঁটি তাওবা করে। অতীত জীবনে আমানতের খেয়ানত করার কারণে খোদার দরবারে তারা অঝোরে কাঁদে। তবে সুসময় খারাপ কাজ বর্জন করতে না পারলে অসময় সেজন্য পরিতাপ করে কোন লাভ নেই। অন্তিম মুহূর্তে আপন ভুলের আফসোস কোন কাজে আসে না।

রূহা (ছদ্মনাম) নামের অবুঝ মেয়েটির যেমন কোনো লাভ হয়নি তেমনই হবে অসময়ের পরিতাপ। প্রাপ্ত বয়েসে নিজের সম্ভ্রম হেফাযত না কারার কারণে তাকেও জীবনের শেষ বেলায় অপমানিত হতে হয়েছে। বিগত দিনে একটি ভুলই বারবার করার কারণে তাকেও পরন্ত বিকেলে বিবেকের কাঠগড়ায় আসামীর কাতারে দাঁড়াতে হয়েছে। অসময়ের কর্মকাণ্ডে লজ্জিত হওয়ার কারণে রূহার হৃদয়ে মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে নতুন যে পবিত্র আবেগ ও মনোভাব জন্মেছে তা জানতে পড়তে হবে নিচের রহস্যময় ইঙ্গিতপূর্ণ লেখাটি।

নিম্নের অনুভূতিতে রূহা নিজের দেহকে ফুলগাছ, নিজ সম্ভ্রমকে ফুটন্ত ফুল ও খারাপ বন্ধুদেরকে কখনো মৌমাছি আবার কখনো মধুপোকার সাথে তুলনা করে মুক্তমনা ছেলে-মেয়েদেরকে অবৈধ সম্পর্ক পরিহার করার আহবান জানিয়ে দরধী মালীর সুরে কিছু কথা বলছে। রূহা বলেছে, ছোটবেলাতেই সাড়ে তিনহাত গাছের মালিক আমাকে বানানো হয়েছে। বুঝার পর থেকে দেহ নামের গাছের পরিচর্যা আমাকেই একা করতে হয়েছে। উঠতি বয়সে জিনায় মন আকৃষ্ট হলেও ফুলের আমানত যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার নিয়তে কোনো মধু পোকার জন্যই আমার ফুলগাছের ডালে বসার অনুমতি ছিলো না। এমনকি কোনো ভ্রমর ফুলগাছের আশাপাশে দাঁড়াবার দুঃসাহস করতো না বিদায় মাঝেমধ্যে ফুলগাছে পানির প্রয়োজন হলে ফুলগাছ নিজেই নিজের ভিতর লুকায়িত রসে আপন তৃষ্ণা মিটাতো।

তবে যেদিন থেকে ফুলগাছের পুরাতন ফুলটি নতুন সুবাস ছড়ালো, পুরাতন ফুলের নতুন সুঘ্রাণ এদিক- সেদিক ছড়িয়ে পড়লো সেদিন থেকে অনাহারী ভ্রমর ফুলের পাপড়িতে বসতে দূর থেকে উঁকি মারতো। প্রতিদিন দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও যখন কোনো ভ্রমর ফুলের মধু আহরণের সুযোগ পায়নি তখন সকাল- সন্ধায় সকল মধুপোকা একটু সুযোগ পেতে শিয়ালের মত ওঁৎ পেতে থাকতো।

অসংখ্য মধুপোকা তখন ফুস্ফটিত ফুলের মধু নিতে গাছের গোড়ায় কলিংবেল বাঁজাতো। কিন্তু আফসোস এই যে, সবসময় সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করার পরও দিনের আলোতে বা রাতের আঁধারে কোনো এক ভ্রমর গাছের সীমানায় প্রবেশ করেই বিনা অনুমতিতে ফুলের মধু আহরণ করে। সেদিন বিদায় নিলেও এরপর থেকে প্রায়শই ফুলের মুধু খেতে ভ্রমর পুণরায় ফুলগাছের ডালে বসতো।

আর ফুলগাছও ক্ষুধার্ত ভ্রমরের মধু আহরণে একধরনের আত্নতৃপ্তি পাওয়ার কারণে নিজ ফুলের মধু বিলাতে কোন কার্পণ্য করতো না। অনেকসময় নিজ প্রয়োজন পূরণের জন্যই ফুলগাছ বিভিন্ন মধুপোকাদের নিজের উপর বসতে দিতো। ফলে প্রায়ই ভ্রমরগুলো ফুলের মধু খেয়ে নিজেদের ক্ষুধা মিটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। তবে দিনশেষে যখন ফুলের মধু শেষ হয়ে গেল, ফুলগাছের যখন নতুন ফুল জন্মানোর শক্তি শেষ হয়ে গেল তখন ফুল ও ফুলগাছের কোন মূল্যই নজরে পড়তো না অপেক্ষমাণ ভ্রমরগুলোর কাছে।

তাই জীবনের যৌবন ফুরিয়ে হায়াতের শেষ মুহূর্তে ফুলগাছের প্রতিকৃতি অসহায় রূহা পৃথিবীর উদাসীন মানুষগুলোকে জানান দিতে চায় যে, রূহা প্রাপ্ত বয়সে নিজের ফুলের দাম বুঝতে না পারলেও জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে সে নিজের সম্ভ্রমের মূল্য অনুধাবন করেছে। আর নিজের সতীত্বের দাম যে কত বেশি ছিলো আজ তা রূহার ঘুমন্ত বিবেকে আঘাত করেছে বিধায় প্রগতিশীল বন্ধুদেরকে সে বলতে চায় যে, সময় থাকতে নিজের সম্ভ্রমকে হেফাযত করতে সচেষ্ট হোন। খোদার ভয়ে হারাম পন্থায় যৌনমিলন পরিহার করুন। সময় থাকতে সুযোগসন্ধানী বন্ধু- বান্ধবদের আড্ডা ছাড়ুন।

রাতভড় নাইটক্লাবে বসে গল্পগুজব করার নিচু মনমানসিকতা মাথা থেকে বের করে দিন। কবরে প্রবেশের পূর্বে নিজ নফসের খাহেশাতের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করুন। বৈবাহিক জীবনে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে আকর্ষণীয় ও মধুময় হতে বিবাহের পূর্বাপর অবৈধ মিলামিশা বর্জন করুন।

দাম্পত্যজীবনে স্বর্গীয় সুখ পেতে অবৈধ সম্পর্ক পরিহার করুন। হালাল উপায়ে নিজের প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণ করতে প্রাপ্ত বয়সেই দ্বিনদার মানুষের সাথে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হোন।  তবেই জীবনের শেষ বেলায় আমার মত অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জিত হতে হবে না।

অন্তিমকালে আপন ভুলের আফসোস করে নির্বোধ ও বোকা সাঁজতে হবে না। হারাম পন্থায় নিজের ইজ্জত, সম্মান ও সম্ভম হারিয়ে ফকিরের মত রাস্তায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে না। অবৈধভাবে শারীরিক সম্পর্ক পূরণ কারার কারণে জীবনের খারাপ পরিণতি যদি আমার মত আর কেউ দেখতে না চান তবে আজই পর্দার মতো ফরয বিধান পালনে সচেষ্ট থাকুন। এবং নিজের পবিত্রতা রক্ষার জন্য ধর্মীয় সকল বিধান পালন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় তার দিকে রুজু করুন।

লেখক: মুফতি ও নাযেমে দারুল ইকামা, জামিয়া আরাবিয়া শামসুল উলূম খিলগাঁও ঢাকা।

Comments