উঠতি বয়সেই পেশাদার খুনি!

প্রকাশিত: ৩:৫৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি: যশোর শহরের অধিকাংশ পেশাদার খুনি হলো উঠতি বয়সের। তারা অল্প সময়ের মধ্যে হয়ে উঠেছে ভয়ংকর।

প্রভাবশালীদের ছত্র-ছায়ায় থেকে নানা অপরাধ করছে। টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খুনিদের কেউ কেউ পুলিশের হাতে আটক হচ্ছে। আবার অনেকেই থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১লা জানুয়ারি যশোর শহরের ঈদগাহ মোড়ে মোটর যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম শাফা খুন হয়। মোটরসাইকেল থেকে নামার সময় সন্ত্রাসীরা তার গলা কেটে প্রকাশ্যে হত্যা করে। ডিবি পুলিশ সিসি ফুটেজের মাধ্যমে খুনিদের সনাক্ত করে।

পুলিশের ভাষ্যমতে, সাফা খুনের মিশনে ছিলো যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার রানা মোল্লা, শাহাবুদ্দিন ও রিপন। অভিযান চালিয়ে ডিবি রানা মোল্লাকে আটক করে। আদালতে সে খুনের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

রানার দেয়া তথ্যে পুলিশ পরে খুনি শাহাবুদ্দিনকে আটক করে। পুলিশকে তারা নিশ্চিত করে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে সাফাকে খুন করেছে। এই খুনের ঘটনায় দুইজন আটক হলেও কিলার রিপনকে এখনো ধরা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, রিপনকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে অন্য দুটি খুনের মামলায় সম্প্রতি সি আই ডি পুলিশের কাছে আটক হয়েছে যশোর সদর উপজেলার রামনগর খাঁ পাড়ার নুর মোহাম্মদের ছেলে শাহিন ওরফে চোর শাহিন।

সে ভয়ঙ্কর খুনিদের একজন। বয়স ২৫ পার না হতেই দুই জনকে খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই সোহেল রানাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে ও ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়া ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশ্য দিবালোকে রামনগরে ছাত্রদল কর্মী রাসেলকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে শাহিন ও তার ক্যাডাররা।

এই মামলায় শাহিনের বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রদান করেছে পুলিশ। এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মাত্র ২৭ বছর বয়সে এলাকায় ভয়ংকর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পুরাতন কসবা কাজীপাড়া গোলামপট্টির মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে ইয়াছিন মোহাম্মদ কাজল।

এই পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে তিনজনকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে কাজীপাড়ায় নিজ বাড়ির কাছে সোহাগকে, ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শহরের পুরাতন কসবা চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে ডিশ মানিককে কুপিয়ে ও কাজীপাড়া তেঁতুলতলায় ভৈরব নদের পাড়ে রুহুল নামে এক যুবককে জবাই করে হত্যার অভিযোগ ওঠে সন্ত্রাসী কাজলের বিরুদ্ধে।

এইসব খুনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। খুনি ইয়াছিন মোহাম্মদ কাজলকে পুলিশ এখনো আটক করতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরে আরও একজন উঠতি বয়সের খুনি রয়েছে। তার নাম অনুরাগ ইসলাম অপু। ২৫ বছর বয়সে তার বিরুদ্ধে দুই জনকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে।

২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর যশোর বড়বাজারে মাছ ব্যবসায়ী পাপ্পুকে ছুরিকাঘাত হত্যা করা হয়। এই ঘটনার কয়েকদিন আগে বড়বাজার এলাকায় সবুজ নামে এক যুবককে খুন করার অভিযোগ ওঠে অপুর বিরুদ্ধে। ভয়ংকর খুনি অপুকে সম্প্রতি পাপ্পু হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আটক করেছে।

উঠতি বয়সের খুনিদের বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অপূর্ব হাসান সাংবাদিকদের জানান, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে উঠতি বয়সের অনেক খুনি আটক হয়েছে। খুনের মামলায় আত্মগোপনে থাকা অন্যদেরও খোঁজা হচ্ছে।

/সিএইচ

Comments