খুলনায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিনত হচ্ছে ‘দক্ষিন বেদকাশী ইউপি’

প্রকাশিত: ৩:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৯

ইমদাদুল হক, পাইকগাছা, খুলনা: সুন্দর বন সংলগ্ন দুই নদ-নদীর ক্রমশ ভাঙ্গনে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিনত হতে চলেছে খুলনার সর্ব দক্ষিনে অবস্থিত কয়রা উপজেলার দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়ন।

৩০ হাজার লোকের বসতি সম্মৃদ্ধ এই ইউনিয়নে কাস্টমস অফিস, কোষ্টগার্ডের অফিস, ফরেষ্ট অফিস,নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া নেই।

ওয়াপদার বেড়ীবাঁধগুলোর মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় যে কোনো সময় তা ভেঙ্গে গিয়ে একেবারেই আলাদা দ্বীপে পরিনত হবে দক্ষিন বেদকাশী। এমনটি আশঙ্কা প্রকাশ করছে এই এলাকার সাধারন জনগন।

কয়রা উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থিত দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়ন। যাতায়াতের জন্য কপোতাক্ষ নদের পাশের ও শাকবাড়িয়া নদীর বেড়ীবাঁধ ছাড়া আর কোন মাধ্যম নেই। তবে এই দুই বেড়ীবাঁধ দিয়ে পায়ে হেটে ছাড়া চলাই অসম্ভব।

এই ইউনিয়নে রয়েছে রায়মঙ্গল কাস্টমস অফিস, আংটিহারা নৌ-পুলিশ ক্যাম্প, কোষ্টগার্ডের স্থায়ী ক্যাম্প ও বনবিভাগের কপোতাক্ষ স্টেশন।

চারটি সরকারী কার্যালয় থেকে সরকারের কোষাগারে বিপুল পরিমান রাজস্ব জমা হলেও যাতায়াতের জন্য একমাত্র ভরসা বেড়ীবাঁধগুলো প্রতি বছরই মেরামত করা হয় নামকাওয়াস্তে।

বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয় তার অর্ধেক অংশ কাজ হয় না বলে অভিমত ব্যাক্ত করেছে অনেকেই।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়নের দুই পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে শাকবাড়িয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদ। দশ বছর আগেও দুই নদ-নদীর দূরত্ব ১০ কিলো মিটারের বেশী থাকলেও বর্তমানে ৫০০ মিটারে এসে ঠেকেছে।

২০০৯ সালে আইলার আঘাতে চার বছরের বেশী সময় পানিতে তলিয়ে থাকে ইউনিয়নের ৭০ ভাগ জমি। শেষ হয়ে যায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। বর্ষাকালে সুন্দরবন অভ্যন্তরে হওয়ায় এই ইউনিয়নে অপরাধের মাত্রা একটু বেশী।

এখানে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কোন অভিযান সচারচর করতে পারে না। বর্ষা মৌসুমে কয়রা থেকে যাতায়াতের জন্য নৌযান ছাড়া আর কোন উপায় নেই এই
ইউনিয়নে।

আংটিহারা এলাকায় একটি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হলেও তাদের যানবাহন খুবই সীমাবদ্ধ। সড়ক ব্যবস্থা অত্যান্ত খারাপ হওয়ায় মোটরসাইকেলও সহজে অনেক এলাকায় পৌছাতে পারে না।

দক্ষিন বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান কবি জিএম সামছুর রহমান বলেন, এই ইউনিয়নে চারটি সরকারী অফিস, ৯ টি বিদ্যালয়, ২৮ টি মাদ্রাসা, ২১ টি মন্দির, ৪ টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় এখন ইউনিয়নটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিনত হতে চলেছে।

তিনি আরো বলেন, ২৭ কিলো মিটার সড়কের ১৫ কিলোমিটার একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী। বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন ধরেছে। মেরামত করার জন্য পাউবো সহ বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়েছে।

আগামি বর্ষা মৌসুমের মধ্যে বাঁধগুলো মেরামত না করা হলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিনত হবে এই ইউনিয়ন। মূল ভূ-খন্ডের সাথে কোন যোগ থাকবে না।

তাই আধুনিক সভ্যতার এ যুগে এলাকাবাসী কয়রার দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়নের মানুষের জীবন মাল রক্ষায় ভেড়িবাধ গুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।

/এসএস

Comments