হতাশার সাগরে ভাসতে চায় না অন্ধকার পল্লীতে জন্ম নেয়া শিশুরা নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯ বিল্লাল হোসেন: হতাশ প্রাণে স্বপ্নের বীজ বুনছে যশোর পতিতা পল্লীর শিশুরা। অন্ধকার পল্লীতে জন্ম নিলেও মোটেও হতাশার সাগরে ভাসতে চায়না তারা। পড়ালেখার মাধ্যমে জীবনকে নতুনভাবে সাজিয়ে নিতে চাই। মায়ের সূত্র ধরেই এই পেশায় কোনভাবেই নিজেদের জীবনকে জড়াতে চায় না শিশুরা। একাধিক শিশু জানিয়েছে, তাদের স্বপ্নের কথা। তাদের মধ্যে কেউ হতে চাই ডাক্তার আবার কেউ পুলিশ অফিসার। স্বপ্ন পূরণে তারা আসল পরিচয় গোপন করে লেখাপড়া করছে যশোর শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আবার অনেকেই উচ্চ শিক্ষার পেছনে ছুটছে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও তাদের সহযোগিতায় রয়েছে। বেসরকারি সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে চিল্ডেন হ্যাভেনে ৪২ জন শিশু বেড়ে উঠছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের ২টি যৌন পল্লীর মোট ৫টি গলিতে ১৮০ জন কর্মী রয়েছে। তাদের সন্তান রয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ জন। এখানকার শিশুরা একটু বোঝার মতো হলে অন্য পরিচয়ে তাদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেয়া হয়। কেননা প্রকৃত পরিচয় জানলে অনেক সময় তাদের ভর্তি নিতে চাননা স্কুল কর্তৃপক্ষ। আবার সমাজের অনেকেই তাদের বাকা চোখে দেখে। যৌন কর্মীর সন্তানদের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৪ জন এসএসসি পাশ করে কলেজে পড়ছে। এছাড়া ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত তিনজন। সরেজমিনে গিয়ে চোখে পড়ে এক বেদনাদায়ক দৃশ্য। আড়াই থেকে ৪ বছরের মধ্যে বয়স কযেকজন শিশুকে দরজার সামনে রেখেই ঘরের মধ্যে খরিদ্দারের মনোরঞ্জন নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় কর্মীদের। যেন সন্তানকে আদর যত্নের সময় নেই তাদের। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় একাধিক যৌন কর্মীর সাথে। তারা জানিয়েছেন, আমরা অন্ধকার জীবনে জড়িয়ে পড়েছি। অন্ধকার গলিতেই জন্ম হয়েছে সন্তানদের। তাদের সুন্দর একটা জীবন উপহার দেয়ার জন্যই এতো কষ্ট। যৌন কর্মীদেরও আশা তাদের ছেলে মেয়েরা যেন লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। তারা আরো জানান, অবুঝ বয়সে শিশুরা আমাদের কাছে থাকে। কিন্তু বোঝার মতো হলেই তাদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানেই থেকে তারা লেখাপড়া করে। এখানে জন্ম নেয়া তাদের সন্তানদের কখনোই এই ঘৃণিত পেশায় জড়াতে দেবে না। তারা বুঝতে পেরেছেন এখন নিজেদের জীবন কতোটুকু অভিশপ্ত। তবে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিত্ত বিনোদন ও বাসস্থানের বিষয়ে সরকারিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা করা হয়না। বেসরকারিভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান মাঝে মাঝে খোঁজ নিতে আসেন। তবে অনেকেই তাদের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা পেতে বঞ্চিত হন। জানা গেছে, যৌন কর্মীদের মধ্যে যে কর্মীর আয় রোজগার ভালো সে নিজের মতো বাসা ভাড়া করে তার সন্তানের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করছেন। বেসরকারি সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা হাসিব নেওয়াজ জানান, চিল্ডেন হ্যাভেনে বেড়ে ওঠা ৪২ জন শিশুর থাকা খাওয়া, লেখাপড়া, বিনোদন, স্বাস্থসেবার ব্যবস্থা করা হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। প্রতি শিশুদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকই কলেজে ভর্তি হয়েছে। /সিএইচ Comments SHARES বিশেষ প্রতিবেদন বিষয়: