‘অপারেশন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করবেন না’ নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:২১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০১৯ বিল্লাল হোসেন, যশোর: নানা অনিয়মের কারণে স্মরণকালের ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। আলোচিত দুই একটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নজির নেই। বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, প্রয়োজনের সময় বিশেষজ্ঞ চিকৎসক না পাওয়া, নিয়মবর্হিভূতভাবে ইন্টার্ণ চিকিৎসক রোগীর অস্ত্রোপচার ও রেফার্ড করছেন, হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগানো, কমিশন বাণিজ্য, দাপট চিকিৎসাসেবায় অবহেলা, জখমী সনদ বাণিজ্য, বখশিস বাণিজ্য, বহিরাগতদের দাপট, রোগীদের মাঝে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, বিনামূল্যের ওষুধ সঠিকভাবে বিতরণ না করা, ডিজিটাল মেশিন চালু না করা, রোগী ও স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করা এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া একজনের দায়িত্ব আরেকজন পালন করা, চাকরিভাড়া দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে প্রতিদিন দ্বিগুনের বেশি রোগি ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নেন গড়ে প্রতিদিন ৯ শ থেকে ১ হাজার রোগী। যশোর ছাড়া ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়ার আশায় এখানে আসেন। এখানে আসার পর হাসপাতাল নিয়ে তাদের অভিযোগের শেষ নেই। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে যশোর শহরের খোলাডাঙ্গার ফারুক হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সালমা খাতুনকে (২৮) অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তিনি গাইনী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইলা মন্ডলের ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্বজনদের অভিযোগ, ভর্তির পর থেকে রোগীকে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়নি। মেঝেতে অবহেলায় তিন দিন পড়ে থাকার পর প্রসব যন্ত্রনা শুরু হয়। তখন স্বজনরা সেবিকা ও চিকিৎসককে ডাকাডাকি করলেও কেউ তাদের সাড়া দেননি। চিকিৎসক সেবিকার অনুপস্থিতিতে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত আয়া আয়া হেলেনা রোগী সালমাকে ডেলিভারী কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে সন্তান প্রসব হয়। সন্তান নড়াচড়া বা কান্নাকাটি না করায় শিশুটিকে কাপড়ে পেচিয়ে ওই বেডের নিচে রেখে দেন আয়া হেলেনা। পরে রাত সাড়ে সাতটার দিকে শিশুর কান্নার শব্দ পান স্বজনরা। এ সময় বেডের নিচ থেকে শিশুটিকে কাপড় জড়ানো অবস্থায় অবস্থায় উদ্ধার করে শিশু ওয়ার্ডে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। এই ঘটনায় স্বজনদের সাথে আয়া ও সেবিকাদের মধ্যে হট্টগোল হয়। স্বজনদের অভিযোগ, সন্তান প্রসবের সময় চিকিৎসক ও সেবিকা উপস্থিত না থাকার কারণেই এই অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে। এর আগেও ডাক্তার ইলা মন্ডলের অবহেলায় চিকিৎসাসেবা না পেয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার মামুন হোসেনের স্ত্রী অন্তসত্ত্বা রোক্সানা খাতুন। ৩১ আগস্ট অন্তসত্ত্বা রোক্সোনা খাতুনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে সেবিকা ও ইন্টার্ণ চিকিৎসক ডা. ইলা মন্ডলকে খবর দিলেও তিনি রোগী দেখতে আসননি। এসময় গাইনী ইউনিট- ২ এ দায়িত্বরত অন্য বিশেজ্ঞদেরও দেখা মেলেনি। অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়েও শেষ পর্যন্ত কোন চিকিৎসক না আসায় তার অপারেশন হয়নি। বাধ্য হয়ে রাতেই রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় বেসরকারি একটি হসপিটালে। সেখানেই তার সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা হয় বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। এদিন শুধু রোক্সোনা খাতুন না তার মতো তারমতো চিকিৎসাসেবা না পেয়ে সরকারি এই হাসপাতাল ছেড়ে অন্যত্র চলে যান সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের রাজার স্ত্রী কুলসুম (২০), যশোর নওয়াপাড়া রাধানগর গ্রামের আল মাহমুদের স্ত্রী জেসমিন (২৪), সদর উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের স্বাধীনের স্ত্রী করুনা (২৮) এবং শহরতলী ঝুমঝুমপুর আবাসিক এলাকার ইযাকুব আলীর স্ত্রী শারমিন (২২)। অথচ হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্ট্রার খাতায় দেখানো হয়েছে পলাতক। এই ঘটনায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু নির্দেশে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু পরবর্তী কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঝিকরগাছা উপজেলার হাজের আলী গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে শরিফুল ইসলাম গত ২৭ আগস্ট যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। তিনি ডান পায়ের পাতায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তিনি ইউনিট-২ এর চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন। ভর্তির পরের দিন ওয়ার্ড রাউন্ডে আসেন ডা. আনম বজলুর রশিদ টুলুসহ আরো কয়েকজন। এদিন রোগীর স্ত্রীকে বলা হয় আপনার আত্মীয় স্বজনদের খবর দেন। হাসপাতালের মেশিন নষ্ট এখানে রোগীর অপারেশন হবে না। ক্লিনিকে অপারেশন করাতে হবে। একপর্যায়ে রোগীকে ৪ সেপ্টেম্বর ছাড়পত্র দেয়া হয়। পরে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের দিয়ে তদবির করিয়ে ওই দিনই ২য় বারের মতো শরিফুলকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডা. বজলুর রশিদ টুলু ভুক্তভোগীদের বলেন, শোনেন নেতা ও দলের রেফারেন্স দিচ্ছেন কেনো? অপারেশন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করবেন না আবার শাহিন চাকলাদারও করবেন না। অপারেশন করবেন ডাক্তাররা। অথচ ডাক্তারের কথা শুনছেন না। বার বার বলেছি সরকারি এই হাসপাতালের মেশিন নষ্ট, এখানে অপারেশন হবে না। তারপরেও আওয়ামী লীগের নেতাদের দিয়ে তদবির করছেন কেনো। চিকিৎসকের এমন আচরণে গত ৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় তথ্যভিত্তিক খবর প্রকাশ হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটি আমলে নিয়ে সার্জারী বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রহিম মোড়লকে সভাপতি করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুইজন হলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.আরিফুর রহমান ও মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রশিদ। এর আগেও আরো কয়েকটি ঘটনায় ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন ডা. বজলুর রশিদ টুলু। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট হসপিটালে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া রোগী হাফিজুর রহমানকে (২৮) দুইবার অপারেশন ও চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রশিদ। অথচ প্রথমে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর ওই রোগীকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছিলো। পরে রেফার্ড করা চিকিৎসকই যশোরের একটি প্রাইভেট হসপিটালে রোগীর অপারেশন করেছিলেন। কিন্তু অপারেশনের পর তার অবস্থা গুরুতর হলে হাফিজুর রহমানকে ফের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অপরদিকে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে যশোর সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মাসুদ হোসেনের স্ত্রী তাসমিনা বেগমকে (২০) হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। যার রেজিষ্টেশন নাম্বর ৪১৩০৭/২। এসময় দায়িত্বরত সেবিকারা ইন্টার্নী চিকিৎসককে ডাকেন। তারা রোগী দেখে অনকল চিকিৎসক ডা. রিনা ঘোষ ও ডা. রাজিয়া আক্তারকে খবর দেন। কিন্তু দুই চিকিৎসকের একজনও রোগী দেখতে আসেননি বলে স্বজনদের অভিযোগ। ক্রমেই রোগীর অবস্থা খারাপ হলে স্বজনরা রোগী ও গর্ভের সন্তানকে বাচাতে সাড়ে তিনটার দিকে হাসপাতালের সামনে জেস ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে ডা. নাঈম হাসান তাসমিয়াকে দ্রুত সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করেন। এই ঘটনায় সোমবার রোগীর স্বামী মাসুদ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলার কারণে স্ত্রীর চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ আমলে নেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু। তার নির্দেশে গাইনী ডা. মনিকা রানী মোহন্তকে প্রধান করে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অর্থোপেডিক বিভাগের আরেক চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম আব্দুর রউফ এক রোগীর সাথে অশালীন আচরণ করে সমালোচিত হন। ১৬ আগস্ট ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মৃত আজিজুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান ভর্তি হয়ে মডেল ওয়ার্ডে ৩২ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৩ আগস্ট এক চিকিৎসক রাউন্ডে এসে রোগীর অপারেশন করা হবে বলে মালামাল কেনার তালিকা দেন। কোন দোকান থেকে কিনতে হবে তাও বলে দেয়া হয়। কিন্তু ৪ আগস্ট ওয়ার্ড রাউন্ডে যান ডা. এ এইচ এম আব্দুর রউফ। তার নির্দেশে রোগী মিজানুর রহমানকে রেফার্ড করা হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তিনি ঢাকায় না যেয়ে সেখানেই ছিলেন। ১৬ আগস্ট ডা. রউফ রোগী মিজানুর রহমানকে বলেন, এই তুমি এখনো যাওনি। তোমাকে না বলেছি তোমার অপারেশন এই হাসপাতালে হবে না। জোর করে অপারেশন করতে চাও। যদি চলাফেরা করতে চাও তাহলে জমি বিক্রি করে টাকা আনো। নতুবা আত্মীয় স্বজনকে খবর দাও। এখানে শুয়ে থেকে লাভ নেই। রেফার্ড করা আছে ঢাকায় চলে যাও। যদি যেতে না চাও তাহলে প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে অপারেশন করে নাও। অন্যথায় ক্র্যাচে ভর দিয়ে বেড়াতে হবে। ১০ এপ্রিল চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের আড়শিংড়ী গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের (৭৫) জমিজমা নিয়ে জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন । তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির সময় জরুরি বিভাগে দায়িত্বে ছিলেন ডা. কল্লোল কুমার সাহা। ১২ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ওই দিনই জখমী সনদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিস্তু তাদের সাথে গোপন চুক্তি করেন জখমী সনদ সিন্ডিকেটের সদস্য হাসপাতালের জমাদ্দার সরদার ইমরান হোসেন টপি। তিনি সনদপত্রটি গ্রিভিয়াস করার নামে রোগির স্বজনদের সাথে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। জমাদ্দার সর্দার টপি এসময় তিনি নিজেকে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাষ্টার পরিচয় দেন। প্রথম কিস্তিতে রোগীর স্বজনদের কাছে থেকে টপি সাড়ে ১২ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেন। দুই দফায় ঘুষের টাকা পরিশোধ করা হলেও প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রোগীর স্বজনদের ঘুরানো হয় নানা অজুহাতে। ভুক্তভোগীরা ২১ এপ্রিল টাকা নিয়ে সনদ দিতে টালবাহানার বিষয়টি অবগত করেন হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটুকে। এসময় তত্ত্ববধায়ক জখমী সনদ সিন্ডিকেটের ২ সদস্যকে ধরেন। তত্ত্ববধায়কের নির্দেশে ২৩ এপ্রিল সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রহিম মোড়লকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুজন হলেন অর্থোপেডিক বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শেখ মোহাম্মদ আলী ও মেডিকেল অফিসার ডা.ওয়াহিদুজ্জামান ডিটু। বিষয়টি নিয়ে ২৬ এপ্রিল কমিটি তদন্ত বোর্ডে রোগী আবু তাহেরসহ স্বজনেরা ওই ঘটনার বর্ণনা করেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরও ইমরান হাসান টপির বিরুদ্ধে কোন নব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া টাকার বিনিময়ে ভুয়া জখমী সনদ দিয়ে ব্যপাক সমালোচিত হয়েছেন। ঘটনা প্রমাণ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও বিচারাধীন রয়েছে। চুড়ামনকাটি গ্রামের জুলিয়া খাতুন নামে এক নারী জানান, ১২ সেপ্টেম্বর তা মা ফাতেমা বেগমকে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু রোগীকে বিনামূল্যের কোন ওষূধ দেয়া হয়নি। ইনজেকশন ওমিপ্রাজল, সেফট্রিএ্যাকসন পর্যন্ত তাকে কিনে আনতে হয়েছে। জুলিয়ার মতো একাধিক রোগীর স্বজন জানান, তাদের রোগীর জন্য অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। তবে হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র বলছে, গরিব মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারীভাবে এই হাসপাতালে ৮৪ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ কর হয়। এর মধ্যে ইডিসিএল ৪৪ প্রকার ও স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্থানীয় অর্থে টেন্ডারের মাধ্যমে অবশিষ্ট ৪০ প্রকার ওষুধ কর্তৃপক্ষ কেনেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জানা যায়, এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন সেফট্রিএ্যাকসন, সেফ্রাডিন হাইড্রোকরটিসন, ওমিপ্রাজল, মেট্রোনিডাজল, ক্যাসিন, ক্যাপসুল সেফ্রাডিন, ক্লিনডামাইসিন, এমোক্সাসিলিন, সেফিক্সিম, ক্লিনডামাইসিন, ওমিপ্রাজল ৪০এমজি ও নাভিতে দেয়া ইনজেকশন, ট্যাবলেট এ্যালবেনডাজল, কারভিস্টা, সেফুরএক্সিম, সিটিরিজিন, ইটোরাক, ইসোরাল, হিস্টাসিন, লপিরিল, লপিরিল প্লাস, লোসারটন, মন্টিলোকাস্ট, ন্যাপ্রোক্সিন, অফলোক্সাসিন, প্যান্টোনিক্স, স্যালবোটল, রাবিপ্রাজল, সিরাপ এ্যামব্রোক্স বি-কমপ্লেক্স, সেফুরএক্সিম, ডমপেরিডন, লবুপ্রোফেন, ড্রপ সিপ্রোসিন, কেমিক্যাল রি এজেন্ট, সার্জিক্যাল গজ, ব্যান্ডেজ, ক্যাথেটার, মাইক্রোপর, জিপসোনা, সফ্টরোল, ক্রেপ ব্যান্ডেজ রোল, সার্জিক্যাল গ্লোভস, সোফরাটোলা, বালিশ, বালিশের কভার, মশারি নেট, লংক্লথ, টেট্রন ক্লথ, এ্যাডোমিনালসিট। কিন্তু বাস্তবতা বরাবরই ভিন্ন। গুরুত্বপূর্ণ দামী কোন ইনজেকশন, ওষুধ, লিলেন সামগ্রী ও গজ-ব্যান্ডেজ রোগীদের দেয়া হয়না। যৎ সামান্য ওষুধ দেয়া হয়। প্রায় ওষুধ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। রোগী ও স্বজরা চাইলেই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকারা বলেন শেষ হয়ে গেছে। কথা বাড়ালেই করা হয় দুর্ব্যবহার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়ার্ড রাউন্ডে এসে চিকিৎসকেরা রোগী ও স্বজনদের আতংকগ্রস্থ করে তোলে। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো রোগ সম্পর্কে জটিল ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের দুর্বল করে ফেলা। পরে কৌশলে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যক্তিগত হসপিটাল ও ক্লিনিকে। অভিযোগ রয়েছে, কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হাসপাতালে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। প্রয়োজনের সময় তাদের ডেকেও দেখা মেলেনা। ইন্টার্ণরা যেন রোগীদের শেষ ভরসা। বিশেষজ্ঞদের অবহেলায় রোগীর ভাগ্যে ফলোআপ চিকিৎসা জোটেনা ঠিকমতো। ইন্টার্ণরা ওয়ার্ড রাউন্ডে এসে ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেন ‘রিপিট অল’। অর্থাৎ আগে যে চিকিৎসা ছিলো তাই চলবে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে দায়িত্বরত অধিকাংশ চিকিৎসক রোগীদের জিম্মি করে কমিশন বাণিজ্যে মেতে রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, তারা রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে সরাসরি পাঠিয়ে দিচ্ছেন পছন্দের ক্লিনিকে। অথচ ওই পরীক্ষা সরকারি এ হাসপাতালেই সম্ভব। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য রোগীকে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানোর কারণে হাসপাতালে রাজস্ব কমছে তেমনি সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। টিকিটে কোনো প্রকার ওষুধ না লিখে পরীক্ষা করতে রোগীকে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে প্রথম দিনে হাসপাতালে এসে অনেক রোগীর ভাগ্যে চিকিৎসা জোটে না। এদিকে, রোগির স্বজন রোজি খাতুন, আজম আলী, মিন্টু হোসেনসহ অনেকেই জানান, বর্তমানে এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় নানা অনিয়ম বেড়েছে। টাকা ছাড়া কোন কাজ করতে চান না কেউ। হাসপাতালে রোগী ভর্তির সময় জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে নেয়া থেকে শুরু করে ছাড়পত্র হতে পাওয়ার আগ মুহুর্ত নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা হয়। জেনারেল হাসপাতালের ২৫০ শয্যা ও করোনারি কেয়ার ইউনিটের ২৮ শয্যার মোট ২৭৮ জন রোগির প্রতি সপ্তাহের ২ দিন সোমবার ও শুক্রবার দুই বেলা (দুপুর ও রাত) ভাতের সাথে খাশির মাংস ও ৫ দিন বড় সাইজের রুই মাছ এবং প্রতিদিন সকালে ২শ গ্রামের পাউরুটি, দুটি শবরি কলা দুটি ডিম সরবরাহ করার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর এই নির্দেশনা মানা হচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। রোগীদেরকে নিয়মিতভাবে পোল্ট্রি মুরগীর ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম পরিমানে মাংস, ছোট সাইজের সিলভারকার্প ও মৃগেল মাছ দেয়া হচ্ছে। যেনতেনভাবে রান্না করা এই খাবার রোগীরা বাধ্য হয়ে খাচ্ছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। আর সকালে নাস্তার জন্য দেয়া হচ্ছে ১শ গ্রামের রুটি, ১টি সাগর কলা ও ১টি ডিম। আবার নিয়ম থাকলেও কোন দিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য আটার রুটি ও ভাত খেতে না পারা রোগির জন্য দুধ দেয়া হয়না। এদিকে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও খাদ্য সরবরাহের তালিকা ঝুলানো হয়নি। কেননা তালিকা ঝুলানো হলেই জেনে যাবেন সরকারিভাবে কি কি খাবার কোন পরিমানে জন্য বরাদ্দ দেয়া আছে। অথচ ওয়ার্ডে খাদ্য সরবরাহের তালিকা ঝুলানোর ব্যাপারে সরকারিভাবে নির্দেশনা রয়েছে। এদিকে হাসপাতালে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি সংকট থাকা সত্ত্বেও ডিজিটাল মেশিনগুলো অজ্ঞাত কারনে অব্যবহৃত রাখা হয়েছে। অথচ রোগীদের সুবিধার্থে ১৯ প্রকারের উন্নত মানের যন্ত্রপাতি অনুদান দিয়েছিলেন বিদেশী সংস্থা টিকা। সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধোধনও করা হয়েছিলো। এখানকার বাথরুমগুলোর নোংরা পরিবেশ, কয়েকটি ওয়ার্ডে দুর্গন্ধে রোগীদের নাভিশ্বাস হলেও সহসা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটে না। ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার চিত্র নিজ চোখে দেখে নাখোস হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক ম্যানেজমেন্ট) অধ্যাপক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছিলেন এখানে রোগির চিকিৎসাসেবার কোন পরিবেশ নেই। পরতে পরতে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন অনিয়ম ও দুর্নীতি দুরে ঠেলে রোগির সেবা নিশ্চিত করার। কিন্তু ৫ অনিয়ম দুর্নীতি মোটেও পরিবর্তন হয়নি। এরপরেও স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক উর্ধবতন কর্মকর্তারা এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে অসন্তোষ প্রকাশ করে গেছেন। সার্বিক বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, তিনি দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে হাসপাতালের সকল কর্মকান্ড নিয়মের মধ্যে পরিচালনা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রোগিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই তার প্রধান লক্ষ। বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। /সিএইচ Comments SHARES বিশেষ প্রতিবেদন বিষয়: