রসের চেয়েও গুড় পাটালির দাম কম! আসল-নকল চিনবেন কীভাবে?

প্রকাশিত: ১১:২১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর জেলা প্রতিনিধি: মতিয়ার রহমান। বাড়ি খাজুরা বাজার এলাকায়। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ধামা ভর্তি পাটালি নিয়ে বসে আছেন যশোর শহরের দড়াটানা ব্রিজের পাশেই।

প্রতি কেজি পাটালি বিক্রি করছেন ১শ ৬০ খেকে ১শ ৮০ টাকার মধ্যে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মাঝে মধ্যে জোর গলায় বলছেন, আসেন খাজুরার খাঁটি পাটালি খান। অথচ চাষিদের ভাষ্যমতে, এটা যেন স্বপ্নের মতো। কেননা গ্রামাঞ্চলে প্রতি ভাড় রস বিক্রি হচ্ছে ১শ ২০ টাকা থেকে ১শ ৩০ টাকা।

অবাক ব্যাপার হলো এক ভাড় রসে গুড় তৈরি হয় আনুমানিক ৮শ গ্রাম। আর পাটালি হয় সাড়ে ৬শ থেকে ৭শ। এছাড়া জালানি খরচ তো আছেই। সেই হিসেবে এতো স্বল্প দামে খাজুরের খাঁটি পাটালি বিক্রির হওয়ার বিষয়টি কল্পনা করা যায় না। বাস্তবে এতো কম দামে খাঁটি গুড়ের পাটালি বিক্রি করা অবশ্যই ভাববার বিষয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিয়ার রহমানের মতো অনেকেই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় ও পাটালি তৈরি করে খাঁটি হিসেবেই বিক্রি করছে। ‘যশোরের জস, খেজুরের রস’ বর্তমানে এই প্রবাদের ঐতিহ্য আর নেই।

অথচ গুড় পাঠালির জন্যেই বিখ্যাত যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা অঞ্চল। তাই যশোরের খেজুরের রস ও পাটালি গুড়ের ছড়িয়ে রয়েছে দেশ ও বিদেশে। কিন্তু আজ সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে ভেজাল কারবারীদের দাপটের কাছে। ভেজাল ও নকল গুড়ের ভিড়ে এখন এ অঞ্চলে খাঁটি পাটালিগুড় পাওয়াই দায়।

চাষি তাবারক সরদার জানিয়েছেন, এক কেজি গুড় পাটালি তৈরি করতে প্রায় দুই ভাড় রসের প্রয়োজন। তাই শুধু রসের দাম আসে দুইশ টাকার উপরে। এছাড়া দীর্ঘ সময় রস জালিয়ে গুড় তৈরি কঠিন কাজটি করতে জালানি খরচ রয়েছে। তাহলে ১শ ৬০ খেকে ১শ ৮০ টাকায় খাটি পাটালি বিক্রি করা যাবে কিনা তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন।

হাসতে হাসতে তিনি বলেন এখন দেখছি রসের চেয়ে গুড়ের দাম কম। তাবারক আরো বলেন প্রতি কেজি খাঁটি গুড়ের পাটালি দাম পড়বে ৪শ ২০ টাকা থেকে সাড়ে ৪শ টাকা। শীত মৌসুমে এর কম দামে গুড়ের পাটালি বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। তবে সময় বুঝে সামান্য দাম কম বেশি হতে পারে।

যশোর শহরে গুড় পাটালি বিক্রি করতে আসা হযরত আলী জানান, খাঁটি গুড় পাটালি বেশি দামে কেউ কিনতে চায় না। তাই বাধ্য হয়েই ভেজালটা বিক্রি করতে হয়। তিনি অকপটে স্বীকার করেন যত সময় লাভ মনে হবে না তত সময় তারা গুড়ের সাথে চিনি মেশাতে থাকেন। তবে গুড়ের পরিমান থাকে খুবই কম।

হযরত আলী বলেন, ভেজাল পাটালি চেনার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। প্রকৃত খেজুরের গুড়ের পাটালি থেকে মিষ্টি সুগন্ধ ছড়ায়। খুবই নরম হয়। ঘষলেও সাদা রঙ বের হয় না। দেখতে ধুসর বাদামী বর্ণের হয়।

কিন্তু ভেজাল গুড় পাটালি শক্ত ও সুগন্ধবিহীন। দেখতে চকচকে ঘষলেই ভিতরে সাদা রঙ চোখে পড়বে।

গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা প্রকৃত গুড়-পাটালি কিনতে চান তারা আগে থেকেই গাছিদের বাড়িতে গুড়-পাটালির অর্ডার দিয়ে যান। কেননা বাজারে অধিকাংশ গুড় পাটালিতে রয়েছে ভেজাল।

/এসএস

Comments