নিখোঁজ ‘হাকর নদী’ উদ্ধারে উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ শার্শাবাসীর

প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০১৯
বিলীন হওয়া হাকর নদীতে গড়ে উঠা দালান ও পুকুর

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি: হাকর একটি নদীর নাম। নদীটি ভারত ও বাংলাদেশের দুটি অংশে বিভক্ত। বাংলাদেশের অংশের শুরু হয়েছে যশোরের শার্শা উপজেলার সাদিপুর সীমান্ত এলাকার ১৮ নম্বর পিলার থেকে।

শার্শার ৯০ নম্বর বড়আঁচড়া, ৮৯ নম্বর ছোট আচড়া, ৮৮ নম্বর ভবারবেড় ৪৮ নম্বর বেনাপোল ও ৪৭ নম্বর নারায়নপুর মৌজার মধ্য দিয়ে রঘুনাথপুরের কোদলা নদীর সাথে মিলিত ছিলো। সিএস রেকর্ডে এই নদীর মালিক ছিলেন সরকার। কিন্তু এসএ ও আর এস রেকর্ডে নদীর জমি ব্যক্তি মালিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের অংশে হাকর নদীর বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। নদীর বুকে গড়ে উঠেছে একাধিক আলীশান ভবন ও নানা স্থাপনা। খনন করা হয়েছে অনেকগুলো পুকুর। তবে ভারতের অংশে নদীটি এখনো বেঁচে আছে।

স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি নদীর জমি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তখনকার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নদীকে সমতল ভূমি দেখিয়ে অনেকেই নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্থানীয়দের দাবি ২৭ সালের রেকর্ডের সূত্র ধরে হাকর নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাকর নদীর জমি স্বত্ব দখলীয় হিসেবে ছিলেন কুমুদিনী দাসী ও সূর্যকান্ত রায় চৌধুরী। পরে তা সরকারের নামে হয়। ২৭ সালের সিএস রেকর্ড পর্যন্ত সরকারের নামেই ছিলো। কিন্তু ৬২ সালের এসএ জরিপে ছোটআচড়া মৌজার ১ নম্বর দাগে ৮.১৩ একর, বড় আচড়া মৌজার ১নম্বর দাগের ৫.৬০ একর, ভবার বেড় মৌজার ১ নম্বর দাগের ৪.২৩ একর ও বেনাপোল মৌজার ১,৩৭২ ও ৪১১ দাগে ২৪.৩৯ একর জমি বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানায় রেকর্ড হয়।

বর্তমানে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ ব্যক্তি সরকারি জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করে ভোগ দখর করে আসেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারতের অংশে হাকর নদী ঠিকই আছে। কিন্তু বাংলাদেশের অংশে এই নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই।

আনুমানিক সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদীর বুকে গড়ে উঠেছে শ’শ’ আলীশান ভবন। যেখানে সেখানে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। আবার বিভিন্ন ফসলেরও আবাদ করছে ভোগদখলকারীরা। সেখানে যে একটি নদী ছিলো তা কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই।

নামায গ্রামের বাসিন্দা সাহেব আলী জানান, শুনেছি এক সময় হাকর নদীতে স্রোত প্রবাহিত হতো। কিন্তু বর্তমানে রুপ সম্পূর্ন ভিন্ন। অসাধুরা যে যার মতো করে নদীর জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে।

সাহেব আলীর সাথে একমত পোষণ করে আজিজুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, জসিম উদ্দিন, গোলাম রহমানসহ আরো অনেকে জানান, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি নদী দখলমুক্ত করতে সোচ্চার ভূমিকায় রয়েছেন। তিনি যদি উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাহলে শার্শাবাসী হাকর নদী ফিরে পাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের জোর দাবি,অবৈধভাবে সরকারি জমির মালিক সেজে থাকা ব্যক্তিদের কব্জা থেকে হাকর নদী উদ্ধার করা হোক। তাহলে এই অঞ্চালের মানুষ নানাভাবে উপকৃত হবে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বেনাপোল ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারি কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোল্যার সাথে। তিনি জানিয়েছেন, অবৈধভাবে মালিক সেজে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে হাকর নদী রক্ষা করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত পরিপত্র পাঠিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোন সাড়া মেলেনি।

তিনি জানান, জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ২০ (২ক) ধারা মোতাবেক হাকর নদী সরকারের ১ নম্বর খতিয়ানে রেকর্ড হওয়াই যুক্তিযুক্ত ছিলো। কিন্তু বিগত দিনের অসাধুরা কর্মকর্তারা নদীর জমি সমতল ভুমি দেখিয়ে করেছেন উল্টোটা। সরকারি জমি কৌশলে ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড করে নিয়েছে। নদীটি দখলমুক্ত করতে তিনি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের কাছে আবারো লিখিত পরিপত্র পাঠাবেন।

বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান জানান, অনেক প্রভাবশালীরা অসৎ উপায়ে আরএস রেকর্ডে সরকারি হাকর নদীর জমির মালিক বনে গেছেন। এদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।

তিনি দাবি করেন সিএস রেকর্ড অনুযায়ী হাকর নদী আবারো দখলমুক্ত করা হোক। সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ যদি হাকর নদী রক্ষায় এগিয়ে না আসে তাহলে সাধারণ জনগনকে সাথে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করা হবে।

শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌসুমী জেরিন কান্তা জানান, হাকর নদী অবৈধ দখলদারদের কারণে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। নদীটি এখন নিখোঁজ বললেই চলে।

তিনি জানান, সরকারি জমি কখনোই ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তখনকার সময় সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বর্তমান দখলদাররা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে। হাকর নদী দখলমুক্ত করতে তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করবেন।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল জানান, হাকর নদী দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মামলার বিষয়েও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। হাকর নদী দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারি নদীর জমি কিভাবে ব্যক্তি মালিকানা হিসেবে রেকর্ড হলো এটা তার বোঁধগম্য নই।

শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু জানান, বাংলাদেশের অংশে হাকর নদী অবৈধ দখলদারদের কব্জায় চলে গেছে। অথচ ভারতের অংশে নদী নদীর মতো আছে। সিএস রেকর্ডের মালিকানা ধরে নদীটি দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

/আরএ

Comments