গ্রামীণফোনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ থাকছে না নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৭:৫৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯ দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনকে সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সিগনিফিকেন্ট মার্কের পাওয়ার বা তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতাধর হিসেবে ঘোষণায় মার্কেটে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে গ্রামীণফোনের করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ করে দিতে পারবে বিটিআরসি। রোববার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে গ্রামীণফোনকে এ তথ্য জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য অপারেটরকেও তার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। কাজেই এখন টেলিকম খাতে গ্রামীণফোনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ওপর লাগাম টানতে পারবে বিটিআরসি। বিটিআরসির প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, খুচরা মোবাইল সেবা সংশ্লিষ্ট বাজারের নির্ণায়কসমূহ তথা গ্রাহক সংখ্যা, অর্জিত রাজস্ব ও কমিশন কর্তৃক বরাদ্দকৃত তরঙ্গ-এই তিনটি নির্ণায়কের মধ্যে কোনো মোবাইল অপারেটর ন্যূনতম একটিতে মোট বাজারের অন্তত ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করলেই সেটিকে এসএমপি হিসেবে নির্ধারণের বিধান রয়েছে। এর মধ্যে গ্রাহক সংখ্যা ও রাজস্ব আয়ের দিক থেকে এসএমপির শর্তের মধ্যে পড়েছে গ্রামীণফোন। বিটিআরসির চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, প্রবিধানমালা অনুসারে এসএমপি অপারেটর হিসেবে গ্রামীণফোনের করণীয় ও বর্জনীয় সংক্রান্ত নির্দেশ পরবর্তীতে জারি করা হবে। গত ডিসেম্বরের তথ্যানুসারে, গ্রামীণফোন বর্তমানে ৪৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ গ্রাহক নিয়ে সবার ওপরে রয়েছে। এছাড়া গত কয়েক বছরে রাজস্ব আয় ৫০ শতাংশের ওপরে। ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত সাত কোটি ২৭ লাখ সক্রিয় গ্রাহক ছিল গ্রামীণফোনের। আর গত বছরে মুনাফা ছিল ৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এসএমপির বিষয়ে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, এসএমপি রেগুলেশনের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন আর্ন্তজাতিক ও টেলিযোগাযোগ খাতের সর্বোচ্চ মানসম্মত নিয়মগুলো বিবেচিত হবে বলে প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়ন এবং প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সবার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের আগস্টে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (টেলিযোগাযোগ প্রতিযোগিতা) প্রবিধানমালা, ২০১১’ অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায় বিটিআরসি। পরের বছরের জানুয়ারিতে প্রবিধানমালায় আরো বেশকিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে তা পাঠানোর জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। গ্রামীণফোনকে দেয়া বিটিআরসির চিঠি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংশোধিত প্রবিধানমালা অনুমোদনের জন্য আবার পাঠায় বিটিআরসি। তবে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২-এর আলোকে এ প্রবিধানমালাটি যাচাই-বাছাই করে পাঠাতে একই বছরের জুলাইয়ে বিটিআরসিকে অনুরোধ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২-এর আলোকে প্রবিধানমালার বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই শেষে ওই বছরের অক্টোবরে তা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হয়। এরপর প্রবিধানমালাটি অনুমোদনের জন্য ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে তাগাদা দিয়ে অনুরোধ করা হয়। বিটিআরসির এ তাগাদার পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের এপ্রিলে আরো একটি চিঠি দেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এতে প্রবিধানমালাটি আবারো পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ বোর্ড, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে বলা হয়। বিটিআরসি ওই বছরের জুনে বিনিয়োগ বোর্ড, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে আলাদা চিঠি দেয়। পাশাপাশি মতামত ও পরামর্শের জন্য ২০১৫ সালের জুলাইয়ে সব অপারেটরের সঙ্গে বৈঠক করে। অপারেটরদের মতামত ও পরামর্শ এবং বিনিয়োগ বোর্ডের মতামত যুক্ত করে প্রবিধানমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়। সংশোধিত এ প্রবিধানমালা ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায় বিটিআরসি। তবে এরপর প্রবিধানমালাটির অনুমোদনের বিষয়ে কোনো ধরনের অগ্রগতি না থাকায় কমিশন প্রবিধানমালার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি দেয়। গত বছর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভায় টেলিযোগাযোগ প্রতিযোগিতা প্রবিধানমালা, ২০১৮-এর পরিবর্তে এসএমপি রেগুলেশন, ২০১৮ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত বছর নভেম্বরে এসএমপি নীতিমালার অনুমোদন দেয় সরকার। ওই মাসেই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, বাজারে মোবাইল অপারেটরগুলোসহ এ খাতে লাইসেন্সধারী কোনো কোম্পানিকে এসএমপি ঘোষণার আগে তার গ্রাহক, রাজস্ব ও স্পেকট্রামসহ অন্যান্য সম্পদের বিষয় বিবেচনা করা হবে। দীর্ঘ আট বছর নানান জল্পনা কল্পনা শেষে রোববার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করলো বিটিআরসি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আগে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকায় ৫৫ শতাংশ, নেপালে ৩৫ ও পাকিস্তানে ৫৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার এসএমপির আওতাভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। /সিএইচ Comments SHARES অর্থ-বাণিজ্য বিষয়: