সড়ক উন্নয়নে পাল্টে গেছে খাগড়াছড়ির যোগাযোগ ব্যাবস্থার চিত্র

প্রকাশিত: ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯

মো: লোকমান হোসেন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: সড়ক উন্নয়নের ফলে বদলে যাচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী ২টি উপজেলা সড়কের যোগাযোগ চিত্র। চলমান সড়ক উন্নয়নে প্রায় ৪শ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

এর ফলে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে। প্রশস্ত সড়কে অনায়াসে চলাচল করছে খাগড়াছড়িবাসী।

ইতোমধ্যে ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের জাইকা’র আওতায় ১৫২.৫৩ কোটি টাকার ১৪টি সেতুর কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে ও জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাটিরাঙ্গা-তানাক্কাপাড়া সড়ক উন্নয়নে ১৪.৯৭ কোটি টাকার ৩৬.৫০০ কিলোমিটার সড়কের কাজ সমাপ্ত এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের অধীন চট্রগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের প্রায় ১৪.২৫ কোটি টাকার ১৫ কিলোমিটার সড়কের ওভার লে মেরামত কাজ করা হয়েছে। এর ফলে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন খাগড়াছড়িবাসী।

এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়নের (২০ ইসিবি) তত্ত্বাবধানে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি- সিন্ধুকছড়ি-জালিয়াপাড়া সড়কের ৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে এবং পরবর্তী ১৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কাজ প্রস্তাবিত রয়েছে।

২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়-জালিয়াপাড়া সড়কের প্রায় ১৭.৩১ কোটি টাকার ২১ কিলোমিটার এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের প্রায় ১৬.৫৯ কোটি টাকার ১৮ কিলোমিটার সড়কের ওভার-লে মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন সড়কে ২১৮.৭৮ কোটি টাকার ৩৫টি পিসি গার্ডার সেতু, ৮টি আরসিসি সেতু ও ১৩টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে।

গত অর্থ বছরগুলোতে খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের আওতায় মোট ৫৭টি ব্রিজ ও ১৩টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ১২টি ব্রিজ ও ১টি কালভার্ট, পানছড়িতে ৯টি ব্রিজ ও ১টি কালভার্ট, দীঘিনালাতে ৫টি ব্রিজ, মাটিরাঙ্গাতে ৫টি ব্রিজ ও ৬টি কালভার্ট, লক্ষিছড়িতে ৫টি ব্রিজ ও ১টি কালভার্ট, মহালছড়িতে ৫টি ব্রিজ, গুইমারাতে ৪টি ব্রিজ ও ৩টি কালভার্ট, রামগড়ে ৪টি ব্রিজ ও ১টি কালভার্ট, মানিকছড়িতে ৬টি ব্রিজ এবং বাঘাইছড়িতে ২টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।

বাঘাইহাট-মারিশ্যা সড়ক ও খাগড়াছড়ি-পানছড়ির ৪৫কিলোমিটার সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ ও প্রশস্তকরণসহ সড়ক উন্নয়ন, জেলার ৫টি মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ ও প্রশস্তকরণ এবং দীঘিনালা-বাবুছড়া-লৌগাং-পানছড়ি সড়ক সংযোগ স্থাপন করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

এ সড়ক বিভাগের আওতায় মোট ১২টি সড়ক রয়েছে যার দৈর্ঘ্য ৩৯৭.৬৪ কিলোমিটার। সড়ক সমূহের মধ্যে ৩টি আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে যার দৈর্ঘ্য ১০৮.০৭ কিলোমিটার এবং ৯টি জেলা মহাসড়ক রয়েছে যার দৈর্ঘ্য ২৮৯.৫৭ কিলোমিটার।

খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সড়ক সমূহ খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি জেলার ২টি উপজেলায় বিস্তৃত। এ সড়ক বিভাগাধীন হেঁয়াকো-রামগড়-জালিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি রাজধানী ঢাকার সাথে, হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙ্গা-খাগড়াছড়ি (চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি) আঞ্চলিক মহাসড়কটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাথে এবং রাঙ্গামাটি (মানিকছড়ি)-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কটি রাঙ্গামাটির সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক।

এ বিষয়ে কথা হয় খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমার সাথে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুগুলোর পরিবর্তে পাকা সেতু নির্মাণ করার ফলে এ অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে ও জনগণের জীবনমান উন্নত হবে।

খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মাদ ফয়সাল তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে সড়কের এ উন্নয়ন কাজ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ।  দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন চাহিদাও বাড়ছে। সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।

সর্বোপরি পাহাড়ে সড়ক উন্নয়ন বর্তমান সরকারের সু-নজরের ফসল। এছাড়াও খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের অধীন পাহাড় বা ভূমি ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিভিন্ন কিলোমিটারে ড্রেনসহ স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, দ্বিতীয় পর্যায় জেলার বিভিন্ন সড়কে আরো ১১টি পিসি গার্ডার সেতু, আরসিসি সেতু ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ কাজ প্রস্তাবিত রয়েছে।

/আরএ

Comments