বান্দরবান

পাহাড়ে চলছে অবাধে পাথর উত্তোলন; প্রতিকার চাইছে স্থানীয়রা

প্রকাশিত: ৮:০৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০১৯

নুসিং থোয়াই মারমা, বান্দরবান সংবাদদাতা: বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় হাইকোর্টের নির্দেশ না মেনে ঝিরিঝর্ণা থেকে অবাধে পাথর উত্তোলনের ঘটনায় দ্রুত নি:শ্বেস হচ্ছে পাথর।

জেলার ঝিড়ি ঝর্ণা থেকে পাথর শেষ হবার কারনে ঝিড়ি ঝর্না শুকিয়ে দ্রুত মরুভূমিতে পরিনত হতে পারে পুরো বান্দরবান জেলা, এমন আশংকা প্রকাশ করেছে পরিবেশবীদরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের, লামা, রুমা, আলীকদম, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলায় সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে র্নিবিচারে পাথর উত্তোলন। আলীকদমের বড় ভরিমূখ, ছোট ভরির মুখ, মাংগর ঝিরি, কলারঝিরির ঝিরি থেকে নির্বিচারের পাথর উত্তোলন করছে ২৫/৩০ জন শ্রমিক এবং গাড়ীতে করে উত্তোলনকৃত পাথরগুরো কলারঝিরি হয়ে নয়াপাড়ার পাচার করে পাথর ভাঙ্গার মেশিন দিয়ে পাথর ভেঙ্গে ছোট করা হচ্ছে। বাঘেরঝিরি ও ভরিমূখ রাস্তার পাশে পুরানো পাথরের পাশাপাশি সদ্য উত্তোলনকৃত পাথরও স্তুপ করা হয়েছে।

পাথর উত্তোলনকারী মোঃ রোখন উদ্দিন নিজেই বলেন, পাথর উত্তোলনের সরকারী কোনো বৈধতা না থাকলেও আলীকদমের সব জায়গায় পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাদের বিশেষভাবে সন্তুষ্টি করে পাথর উত্তোলন করা হয়।

সুরেশ পাড়ার বাসিন্দা দিবিয় মণি তংচঙ্গা বলেন, আমরা পাথর উত্তোলনকারীদের ক্ষমতার কাছে অসহায়। আমাদের বসতভিটার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বড় ভরিমুখ ঝিরিটি এক বছর আগেও পাথরের ভর্তি থাকলেও বর্তমানে কোনো পাথর নেই।

লামার উপজেলার সাঙ্গু মৌজার হরিণঝিরি, পাইকঝিরি, কাপঝিরি, কেরানী ঝিরি, শিলেরঝিরি, চিনির ঝিরি, বাঁকখালী খাল, ঝিরিসহ ইয়াংছা মৌজার বিভিন্ন স্থানে শতশত শ্রমিক দ্বারা পাহাড় ও ঝিরি খনন করে অবৈধভাবে দিনরাত পাথর উত্তোলন করছে অভিযুক্তরা।

ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলনের কারনে উৎস নি:শেষ হয়ে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে তীব্র পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় শিমন জালাই ত্রিপুরা, চংপাট মুরুং ও জমির উদ্দিন এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।

এভাবেই অবাধে চলছে পাথর উত্তোলন

অভিযুক্তরা হলেন, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ভেন্ডিবাজার এলাকার বাসিন্দা মৃত নুরুল কবিরের ছেরে মহি উদ্দিন, মো. এনাম, ফরহাদ, মো. জলিল, মনো মেম্বার ও ওমর হামজাসহ আরো বেশ কয়েকজন।

অভিযোগে বলা যায়, পরিবেশ রক্ষার্থে পাহাড় কাটা, প্রবাহিত ঝিরির স্বাভাবিক গতি পরিবর্তন, পাহাড়, ঝিরি ও ছড়া খনন করে পাথর উত্তোলনসহ বারুদ দ্বারা পাথর ব্লাষ্টিং করনের ওপর সরকারীভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরিবেশ আইন অমান্য করে পাথর উত্তোলন করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলায় নির্দিষ্ট মেয়াদ ও কী পরিমাণ পাথর উত্তোলন করা যাবে তা নির্দিষ্ট করে দিয়ে তবেই পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। সীমা অতিক্রম করে নির্দিষ্ট পরিমাণের দশগুণ বেশি পাথর উত্তোলন করছেন এমন প্রভাবশালীর সংখ্যা অনেক।

অনুমোদন ছাড়া পাথর আহরণ নিষিদ্ধ হলেও ক্ষমতাশীন দলের একশ্রেণির ঠিকাদার ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসক থেকে অনুমতি নিয়ে এলাকার সবকয়টি ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করছে।

ব্যবসায়িদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে ১ ফুট পাথরের দাম ১৩০ টাকা, একটি মিনি ট্রাকে ১শ ফুট ও বড় ট্রাকে দেড়শ ফুট পাথর বোঝাই করা যায়। দিনে প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত ১০টি ট্রাকে করে পাথর পাচার হচ্ছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম একুশনিউজ২৪ ডটকম প্রতিবেদককে জানান, পাথর উত্তোলন কাজে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, ইত্যিমধ্যে হাইকোর্ট থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনা চলে এসেছে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।

/আরএ

Comments