সামাজিক সুরক্ষা সামাজিক সুরক্ষায় নিশ্চিতে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে বাংলাদেশ থেকে নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৫:০২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ স্বাস্থ্য, চাকরি, আয় ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিবেচনায় সামাজিক সুরক্ষায় বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। দক্ষিণ এশিয়ায় দেশটি শীর্ষে রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪০টি দেশের মধ্যে ২২তম। বাংলাদেশের পরেই রয়েছে ভারতের অবস্থান। সামাজিক সুরক্ষা খাতের অন্তত একটিতে কার্যকরভাবে কত জনসংখ্যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, এর ভিত্তিতে বৈশ্বিক এ তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। আইএলওর প্রতিবেদন অনুসারে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অন্তত একটিতে শতভাগ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেছে মাত্র চারটি দেশ। দেশগুলো হলো মঙ্গোলিয়া, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ৯৮ শতাংশ জনসংখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে জাপান। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিভুক্ত জনসংখ্যার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৩৬ শতাংশের বেশি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলাদেশ ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেছে; রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। ভারত তৃতীয়, মালদ্বীপ চতুর্থ, নেপাল পঞ্চম, পাকিস্তান ষষ্ঠ, ভুটান সপ্তম ও আফগানিস্তান অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। করোনাকালে সামাজিক সুরক্ষা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আইএলও গত ৩১ আগস্ট ‘ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল প্রটেকশন রিপোর্ট ২০২১-২২’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বিস্তৃতি ঘটলেও কোভিড সংক্রমণের কারণে অনেক দেশ সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার মতো মানবাধিকার বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযথ ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে বহুদিনের অসমতাকে কোভিড আরও সামনে নিয়ে এসেছে। মানুষের স্বাস্থ্য, চাকরি, আয় ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তাকেও সামনে আনা হয়েছে। সুরক্ষার মধ্যে টিকাপ্রাপ্তির বিষয়কেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তালিকায় ২২তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ২৮ শতাংশের বেশি মানুষকে অন্তত একটি কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শ্রীলঙ্কা ১৮তম, ভারত ২৭তম, মালদ্বীপ ২৯তম, নেপাল ৩৩তম, পাকিস্তান ৩৬তম, ভুটান ৩৭তম ও আফগানিস্তান ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে। তালিকার সবচেয়ে নিচে অবস্থান করা দুটি দেশ হলো মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া। দেশে ৩৫ শতাংশ মানুষ সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় : দেশে ২৪টি মন্ত্রণালয় ১২০টি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যয় করা হয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থবছরে (২০২২-২৩) এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবসর ভাতাও সুরক্ষা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত। এটাকে এ কর্মসূচির আওতায় রাখা না রাখা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের মধ্যমেয়াদি প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতের বাজেটের ৩৫ শতাংশের বেশি ব্যয় হয়েছে অবসর ভাতায়। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ৪৫ শতাংশই (৫৪টি কর্মসূচি) বাস্তবায়ন করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ভাতা কার্যক্রম রয়েছে ২৩টি। দেশে একমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা সর্বজনীন। ২৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রতিবন্ধী মাসে ৮৫০ টাকা করে ভাতা পায়। বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ৫৭ লাখ ১ হাজার বয়স্ক ব্যক্তি মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পান। এ দুটি ভাতাই বিতরণ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। আইএলও প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান সন্তোষজনক কিনা, জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, কোনো কিছুতেই আত্মতুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই। সম্পদ ও অর্থের সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকেও সুরক্ষা কর্মসূচির মধ্যে কাদের রাখা হবে, সেই অগ্রাধিকার ঠিক করা হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ডেলটা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি সামনে ধরে এগোচ্ছে সরকার। ২০২০ সালের শুরুতে মোটা চালের কেজি ছিল ৩০ টাকা। গত আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকায়। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ভাতার পরিমাণ বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণে বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার। তিনি বলেন, দেশে ৩৫ শতাংশ জনসংখ্যা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায়। এ খাতে সরকার বিনিয়োগ করছে ৩ শতাংশ। প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় তা ভালো। তবে দেশে সুরক্ষা কর্মসূচি যথাযথ পর্যবেক্ষণে দুর্বলতা আছে। ফলে যাদের কর্মসূচির আওতায় থাকা উচিত, তাদের অনেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে; আবার যাদের থাকা উচিত নয়, তারা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। তিনি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, কোভিডের মতো পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হুট করে দরিদ্র হওয়া ব্যক্তি, দুর্ঘটনা বিমা, মাতৃ সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো প্রয়োজন। অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্ধ বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও শতাংশের হিসাবে চলতি বাজেটের তুলনায় তা ২ শতাংশ কমেছেদ্রব্যমূল্যের চাপে থাকা মানুষের সামাজিক সুরক্ষার চাহিদার প্রেক্ষাপটে এই বরাদ্দ অবাক করেছে। বিশেষ করে খোলাবাজারের (ওএমএস) বরাদ্দ ২২৩ কোটি টাকা কমে যাওয়া ও হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির বরাদ্দ ৯৫ কোটি টাকা কমে যাওয়া এ সময়ের প্রেক্ষাপটে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। পাশাপাশি অতিদরিদ্রদের কাছে ১৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা দরেই চাল বিক্রি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন তিনি। /এসএস/মনেরখবর/ Comments SHARES জাতীয় বিষয়: অর্থনীতিবাংলাদেশশ্রীলঙ্কাসামাজিক সুরক্ষা