এখনও আঁতকে উঠে মানুষ !

প্রকাশিত: ১২:০২ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০১৮

এস আই মুকুল : ২৯ এপ্রিল উপকূলের মানুষের জন্য একটি দুর্বিসহ ও ভয়াল দিন। ১৯৯১ সালের এদিনে দেশের উপকূলে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঝড়। এতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত দ্বীপজেলা ভোলায়ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সেদিন বিপর্যয়ের মুখে পড়া মানুষগুলো আজও দিনটির কথা মনে করতে শিউরে উঠেন। স্বজন হারানোর কষ্টটা তাদের মনে আবার উঁকি দেয়। কেউ হারিয়েছেন বাবা-মা, ভাইবোনসহ পরিবারের সবাইকে; কেউবা হারিয়েছেন অন্যান্য স্বজনদের। হাজারো মানুষ যুগ যুগে তিলে তিলে গড়া সম্পদ হারিয়ে পথে বসে। জীবন শুরু হয় আবার নতুন করে। পূর্ব-উপকূলের একটি বড় অংশ বিরান জনপদে পরিণত হয়েছিল সেদিন। অনেকের পক্ষেই পুনরায় জীবনের বাঁক পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। ওই ঘূর্ণিঝড়ের পরে বহু মানুষ স্থানচ্যুত, বাস্তুচ্যুত হয়; অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়।

উপকূল ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন বহু মানুষের সাক্ষাত পাওয়া যায়। যারা ২৯ এপ্রিলের সেই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে সব হারিয়েছিলেন। চরম বিপর্যয় মোকাবিলা করে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তারা। সেই কালো রাতে ঝড়ের ছোবলে মায়ের কোল থেকে হারিয়েছিল দুধের শিশু, ভাই হারিয়েছিল অতি আদরের বোন, স্বামী হারিয়েছিল প্রিয়তমা স্ত্রীকে, স্বজন হারানোর কান্না আর লাশের স্তুপে পরিণত হয়েছিল সমুদ্রপাড়সহ উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর নদীর তীর- অভিজ্ঞতা থেকে এমনটাই জানচ্ছিলেন জানাচ্ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

টগবগে তারুণ্যের সব হারানো সেইসব মানুষদের অনেকেই বার্ধক্যে নুয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার দুঃসহ সেই স্মৃতি নিয়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু, সেই শোকগাঁথা এইসব এলাকার মানুষদের জীবনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সেই ভয়াল রাতের ভয় এখনও এইসব এলাকার মানুষদের তাড়িয়ে ফেরে।

এদিন ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলার চর কুকরী-মুকরী, ঢালচর, চর পাতিলাসহ নিচু এলাকায় ৪/৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়েছিলো। সেইদিনের কথা মনে করে আজো আঁতকে ওঠেন উপকূলের মানুষ। কারো ফসল নষ্ট হয়েছে কারো গবাদি পশু-পাখি কারো বা বসত ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন ছিলেন দিশেহারা। আকাশে কালো মেঘ বা মেঘের গর্জন শুনলেই আজো ভয়ে কেঁপে উঠেন তারা।

উপজেলার চর কুকরী-মুকরী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন ব্রেকিংনিউজকে জানান, সেদিন সারাদিন ধরে ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টি হলেও রাত ১২টার পর শুরু হয় তুমুল ঝড়। এসময় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উপকূলের মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসেন।

ভোলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বেতারের প্রতিনিধি এম হাবিবুর রহমান জানান, ঝড়ে এ জেলায় ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিলো তবে তা অন্য জেলার তুলনায় কম। তখন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়েছিলো।

প্রবীণ সাংবাদিক এমএ তাহের বলেন, সেই ঝড়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল, ভোলাতেও ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিলো তবে কারো প্রাণহানি হয়নি। সেই ঝড়ের কথা মনে করে আজো ভয়ে কেঁদে ওঠে উপকূলের মানুষ।

এদিকে, উপকূলের উপর দিয়ে একের পর ঝড় বয়ে গেলেও আজো অরক্ষিত উপকূলের মানুষ। নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার বা মাটির কিল্লা। এতে দুর্যোগকালীন মূল ভু-খণ্ডের বাইরের মানুষগুলো অরক্ষিত অবস্থায় থাকে।

সূত্র জানায়, জেলার মোট বাসিন্দা প্রায় ১৮ লাখ। সে হিসেবে জেলায় সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে ৫৭৯টি। এর মধ্যে চরফ্যাসন উপজেলায় ১৫০, বোরহানউদ্দিনে ১০২, ভোলা সদরে ৭৫, দৌলতখানে ৪৯, মনপুরায় ৬৩, লালমোহনে ৮৭, তজুমদ্দিনে ৫৩। এসব সাইক্লোন শেল্টার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে।

এছাড়া জেলার সাত উপজেলায় মোট ৫১টি মাটির কিল্লা রয়েছে। তবে এসব কিল্লার মধ্যে অধিকাংশ ব্যবহার অনুপযোগী তাই এসবের সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভোলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিসিপি) উপ-পরিচালক সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর কালবৈশাখি ও ঘূর্ণিঝড়ের সময়। আমরা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছি। আমাদের ১০ হাজার ২০০ সিসিপি কর্মী প্রস্তুত আছে, তারা এলাকা ঘুরে যথাসময়ে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের আরও কিছু আধুনিকায়ন দরকার।’

#এএইচ

Comments