মহাকাশে ডানা মেলল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:০০ পূর্বাহ্ণ, মে ১২, ২০১৮

একুশ ডেস্ক: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মহাকাশে ডানা মেলল বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। এর মধ্যদিয়ে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের মালিক দেশগুলোর অভিজাত ক্লাবে যুক্ত হল বাংলাদেশ।

শুক্রবার দিনগত রাত (বাংলাদেশ সময়) ২টা ১২ মিনিটে আমেরিকার ফ্লোরিডার উৎক্ষেপণ স্টেশন থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরের নিজস্ব কক্ষপথে ছুটে যায় স্যাটেলাইটটি। আমেরিকার বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ দেশটির ফ্লোরিডার কেপ কেনাভেরাল লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ব্যবহার হয় একটি ফ্যালকন-৯ ব্লক ফাইভ রকেট।

উৎক্ষেপণের দেড় মিনিটের মাথায় ফ্যালকন-৯ ম্যাক্স কিউ অতিক্রম করে। ২ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে রকেটের স্টেজ-১ খুলে যায়; স্টেজ-২ কাজ শুরু করে ৩ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের মাথায়। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ উৎক্ষেপণের ৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের মাথায় সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং অবতরণ করে আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে। আর উৎক্ষেপণের ৩৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে বঙ্গবন্ধু-১ পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে। সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট স্থাপিত হবে মহাকাশের ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নিজস্ব অরবিটাল স্লটে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ

তবে অরবিটাল স্লটে স্যাটেলাইটকে বসিয়ে কাজ শুরু করতে সময় লাগবে প্রায় এক মাস। দুটি পর্যায়ে এ উৎক্ষেপণপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম পর্যায়টি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে ১০ দিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে লাগবে ২০ দিনের মতো।

এর আগে গত ৪ মে ফ্লোরিডার কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টারে নতুন এই রকেটের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ছুটছে কক্ষপথে

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও ফ্লোরিডায় ‘ইরমা’ ঝড় এবং প্রতিকূল আবহাওয়াজনিত কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১০ মে বৃহস্পতিবার। কিন্তু সেইদিনও উৎক্ষেপণের ৪২ সেকেন্ড আগে তা একদিনের জন্য স্থগিত করা হয়।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। স্যাটেলাইটভিত্তিক টেলিভিশন সেবা ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো যাবে।

সরকার ২০১৫ সালে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট প্রকল্প গ্রহণ করে এবং এটি নির্মাণে একই বছরের নভেম্বরে ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া কোম্পানির সঙ্গে ২৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে। স্যাটেলাইটের জন্য মোট ব্যয় দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা, এরমধ্যে এইচএসবিসি ঋণ হিসেবে এক হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা সরবরাহ করছে। যদিও বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট বিদেশ থেকে ক্রয় করা হয়েছে এবং এটি উৎক্ষেপণও বিদেশ থেকেই করা হবে তবে দেশ থেকেই এই স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতিমধ্যেই গাজীপুরের জয়দেবপুরে এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় একটি করে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

Comments