এমসিকিউ বাদ, এবার কী?

প্রকাশিত: ৭:৩১ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০১৮

মুহাম্মদ নোমান ছিদ্দীকী:দেশের সব ধরনের পাবলিক পরীক্ষায় (বিসিএস ও অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়া) এমসিকিউ (নৈর্ব্যক্তিক) প্রশ্ন তুলে দেওয়া হচ্ছে। আগামী এসএসসি পরীক্ষা থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। তবে এমসিকিউ অংশের পরিবর্তে কী পদ্ধতি আসছে, এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত এখনও জানানো হয়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, শুধু এমসিকিউ নয়, প্রশ্নপদ্ধতির অনেকাংশেই পরিবর্তন আনা হবে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবং শিক্ষার্থীদের আরও দক্ষ করে তুলতে নতুন করে প্রশ্নকাঠামো তৈরি করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘এমসিকিউসহ পুরো পরীক্ষা পদ্ধতির একটি পরিবর্তন আসতে পারে। এখন যেমন আছে তেমন থাকবে না। এটা টোটালি বন্ধ করে সিকিউতে যেতে হবে। কিন্তু সিকিউ প্রশ্ন একজন ছাত্রের পক্ষে কতটা লেখা সম্ভব, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে।’ তবে পাইলটিং করে তারপর পুরো উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

গত এসএসসি পরীক্ষায় মোট ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২টি বিষয়ের এমসিকিউ প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে সরকার। গত ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটি গত ১১ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এমসিকিউ ধীরে ধীরে বাতিল করতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনস্তাত্ত্বিক চাপ কমাতেও সুপারিশ করে কমিটি।

এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সরকার। এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব হলেও প্রশ্নফাঁস শতভাগ ঠোকানো যাবে না বলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন উল্লেখ করেন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, ‘আগামী এসএসসি পরীক্ষা থেকে নতুন কোনও ব্যবস্থাপনা অবশ্যই শুরু করবো। বিদ্যমান পদ্ধতিতে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো শতভাগ সম্ভব হবে না।’

এমসিকিউ তুলে দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও। তিনিও বলেন, ‘বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রশ্নফাঁস শতভাগ ঠেকানো সম্ভব নয়।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এমসিকিউয়ের পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন পদ্ধতি আনা হবে। পর্যায়ক্রমে ৩০ নম্বরের এমসিকিউ পুরোপুরি বাদ দেওয়া হবে। আগামী এসএসসি পরীক্ষা থেকে পুরোপুরি তুলে দেওয়া সম্ভব কিনা, তা যাচাই-বাছাই করা হবে। যদি সম্ভব না হয় তাহলে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রশ্ন করা হবে। ওই প্রশ্নের উত্তর খাতায় দুই বা এক লাইনে লিখতে হবে।

এছাড়া শ্রেণিতে মূল্যয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। শ্রেণি মূল্যায়নে সার্বোচ্চ ৫০ নম্বর রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। তাহলে পরীক্ষা যেমন সহজ হবে, তেমনি নকল ও প্রশ্নফাঁসের প্রবণতাও থাকবে না। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা আরও বাড়বে।

এসএসসিতে প্রশ্নফাঁস অভিযোগ সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাতারাতি এমসিকিউ পুরোটা তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এবার যারা ক্লাস এইটে পড়ছে তাদের এসএসসি পরীক্ষা থেকে পুরোপুরি উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। আগামী এইচএসসি থেকে এমসিকিউ বাদ দিতে হলে এর পরিবর্ততে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন পদ্ধতির রাখতে হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে খুব শিগগিরই একটি কমিটি গঠন করা হবে। শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত কমিটি যে মতামত দেবে, তা বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আগে থেকেই এমসিকিউ বাদ দেওয়ার কথা বলে আসছি। শ্রেণি মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মোট পরীক্ষার ৫০ নম্বর রাখতে হবে শ্রেণি মূল্যায়নে। বাকি পঞ্চাশ নম্বরের জন্য পরীক্ষা নিতে হবে।

Comments