বাজেটে বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে

প্রকাশিত: ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার: বাজেট হওয়া উচিত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানবান্ধব। জোর দিতে হবে কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে। বাজেটে শিক্ষায় ব্যয় বাড়ানো প্রয়োজন।

এনটিভি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত অনুষ্ঠানটি মঙ্গলবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে রাজধানীর র‍্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনের বলরুমে শুরু হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

অনুষ্ঠানে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সমিতি-বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাজেট হওয়া উচিত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানবান্ধব। কারণ আমরা মাত্র উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করছি। তাই এটিকে ধরে রাখতে হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আমাদের গত বছর রপ্তানি তেমন ছিলো না। কিন্তু আশা করছি এবার আমরা ৩০ বিলিয়নের বেশি রপ্তানি করতে পারব। তিনি বলেন, অনেক বিনিয়োগকারী ভিয়েতনামে চলে যায়। এখন বায়াররা আবার আসতে শুরু করেছে। আমাদের টেক্সটাইল খাতকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেট এমন সম্প্রসারিত হবে না যা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি না। তাই বাজেটের শুধু আকার বড় করলে হবে না। শুধু আকার বড় করলে দেখা যায়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি না।

তিনি বলেন, বাজেট শুধু সরকারের আয়-ব্যয়ের বিষয় নয়। বাজেটের আকার নিয়ে আলোচনা না করে এটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে সেটিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, আমরা চাই আমাদের যে অর্জন সেগুলো সম্প্রসারণ করতে পারি, যাতে বাজেট ফলপ্রসূ হয়। বাজেট যদি বাস্তবভিত্তিক করি, অর্থের সংস্থানও সন্তোষজনক হবে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, ‘এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশ। একে সামনে রেখে আগামী কয়েক বছরে কীভাবে চালিত করতে হবে তা সামনে রেখে করতে হবে। কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষাখাতে ব্যয় বাড়াতে হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শেদ বলেন, আমরা যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে বের হয়ে আসছি সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটিকে বাস্তবায়ন করতে হলে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি বাজেট বলি বা প্রবৃদ্ধি বলি না কেন? আমাদের দারিদ্র্য বিমোচন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাহলে আমাদের বাজেট ফলপ্রসূ হবে।’

ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো আমাদের অতিক্রম করতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের যে সমস্যা আছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। কারণ বেশ কিছুদিন আমাদের ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা দেখা গেছে। সেটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে কাটিয়ে উঠতে পারি।

মোয়াজ্জেম হোসেন আরো বলেন, আমরা যেটা অর্জন করছি সেটি আমাদের ধরে রাখতে হবে। আর সেই জন্য করদাতার স্যংখ্যা বাড়াতে হবে। শুধু কর বাড়ালে হবে না।

করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে আনতে মতামত দেন এ সাংবাদিক। এটি কমিয়ে আনলে আমাদের বাজেট বাস্তবায়নে সহজ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে আসন্ন বাজেট সম্পর্কে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিতসহ অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশাগুলোকে নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, গবেষকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দিতেই এনটিভি ও এফবিসিসিআইর যৌথ উদ্যোগ ‘কেমন বাজেট চাই’। এগারো বারের মতো এ আয়োজনে আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে তুলে ধরা হয় প্রত্যাশা এবং চ্যালেঞ্জের বিভিন্ন দিক।

বিনিয়োগ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, শিল্প-বাণিজ্য, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে বিগত দিনের বাজেটের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির পাশাপাশি আসছে বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে।

এবারের আয়োজনে অতিথি হিসেবে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শেদ, ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির।

/এমএম

Comments