সড়কপথে ভোগান্তির যেন শেষ নেই নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১২:২০ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০১৮ আল হামজা , জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক : স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে সড়কপথে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। অগ্রিম টিকিট নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকেই যাত্রা শুরু। তবে গত দুদিন ধরে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বেড়েছে। আজ থেকে ঈদের ছুটি শুরু। ফলে আজ থেকেই মূল স্রোত নামবে পথে। কোনমতে শেষ অফিসটুকু করে মানুষ ছুটবে বাস টার্মিনালগুলোতে। নানা ঝক্কিঝামেলা নিয়ে বাসে উঠবে। শুরু হবে ঈদযাত্রা। কিন্তু কেমন হবে ঈদযাত্রা? সকতটা দুর্ভোগ পোহাতে হবে পথে? নাকি নির্বিঘ্নেই পৌঁছাতে পারবে স্বজনের কাছে? এমনতর উদ্বেগ নিয়ে গতকালও বিভিন্ন বাস টার্মিনালগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ছিল মানুষের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে ভিড় বেড়েছে বাড়ি ফেরা মানুষের। সেইসঙ্গে নানা মাধ্যমে আসা খবরে উদ্বেগও বাড়ছে। প্রতি ঈদের মতো এবারও সড়কপথে ভোগান্তির কথা বলেছেন বাসচালক ও যাত্রীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-মাওয়া সড়কের কিছু অংশে যানজট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথ থেকেই শুরু হয় যাত্রীদের ভোগান্তি। খানাখন্দে ভরা সড়ক, রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা, ফুটপাতের দোকান, অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও নদীর ওপর ছোট সেতুর কারণে রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার মুখেই যানজটে পড়তে হচ্ছে আন্তঃজেলা যানবাহনগুলোকে। সেই তুলনায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এবার যানজট তেমন নেই বললেই চলে। পরিবহন চালকরা জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পার হতেই লাগছে এক ঘণ্টারও বেশি। এটাই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেটের প্রধান মহাসড়ক। ঢাকার মহাখালী-বনানী-আবদুল্লাহপুর সড়কপথে উত্তরবঙ্গগামী ও সিলেটগামী গাড়ি চলাচল করে। সেই মহাখালী থেকে আবদুল্লাহপুর পার হতেও লাগছে দুই ঘণ্টার বেশি সময়। যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়ার পথে বড় যানজটের শুরু যাত্রাবাড়ীতে। এ ছাড়া গুলিস্তান বংশাল মোড় থেকে বাবুবাজার ব্রিজ, আমিনবাজার ব্রিজ-গাবতলীর মোড়, কামারপাড়া-আবদুল্লাহপুর মোড় ও সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে ডেমরা মোড়সহ রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়া সাতটি মুখেই প্রচন্ড যানজটে পড়তে হচ্ছে পরিবহনগুলোকে। ভুক্তভোগী যাত্রী ও পরিবহনকর্মীরা জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-হবিগঞ্জ-সিলেট, ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা-সিলেট, ঢাকা-বরিশাল ও খুলনা-যশোর মহাসড়কের বেশি ভাগ স্থান ভাঙা-চোড়া ও ছোট-বড় গর্তে ভরা। এসব খানাখন্দে পানি জমে যায়। এমনকি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এসব সড়কের অনেক অংশই পানিতে তলিয়ে আছে। এতে যানজট তো আছেই; অনুমানে পথ চলতে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে যাত্রা। প্রতিবছর ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর আন্তঃমন্ত্রণালয়ে সভা হয়। এবারও একাধিক বৈঠক করেছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৮ জুনের মধ্যে সকল সড়ক মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে সে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের সম্পূর্ণ উপযোগীর আগেই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে নিরুপায় মানুষকে ঝুঁকি ও যানজট নিয়েই পাড়ি দিতে হচ্ছে পথ। পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পরিবহন চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মোগড়াপাড়া এলাকায় ঢোকার পরই ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। কিছুদূর এগিয়ে মেঘনা সেতুর কাছাকাছি গেলেই শুরু যানজটের। সেতুর সংযোগ সড়কের উচ্চতায় পার্থক্য ও টোল আদায়ের এই সময়ে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সৃষ্ট যানজট সোনারগাঁও উপজেলার মোগড়াপাড়া থেকে গজারিয়ার সীমান্তবর্তী মেঘনা-গোমতী সেতু পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে। এতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় দেখা দেয় যানজট। এ ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর অংশে যানজট রয়েছে। টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত থেমে থেমে চলেছে যানবাহন। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কেও একই চিত্র। পরিবহন চালকরা জানান, সকাল থেকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে থেমে থেমে যানজট ছিল। যানবাহনের বাড়তি চাপ এবং সরু সড়কের কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তাগোলা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কে কিছুটা যানজট ছিল। চালকরা জানান, পোস্তাগোলা থেকে যাত্রাবাড়ী আসতে সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা। অথচ অন্য সময় এই পথটুকু আসতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা। তবে ঈদ যাত্রায় এখনো স্বস্তিতে যাতায়াত করছে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রীরা। এই মহাসড়কটির তেমন কোথাও যানজট নেই বলে জানান পরিবহন চালকরা। তবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে থেমে থেমে চলছে গাড়ি। এই বিষয়ে ঢাকা-যশোর মহাসড়কের শুভ বসুন্ধরা পরিবহনের চালক জয়নাল উদ্দিন বলেন, এই মহাসড়কটিতে গত কয়েকদিন ফেরিঘাট ও মানিকগঞ্জ এলাকায় বেশি যানজট থাকলেও এখন অনেকটাই কম। এই দুটি জায়গায় গাড়ি ধীরে ধীরে চললে অন্য কোথাও যানজট নেই। যশোর থেকে ঢাকা আসতে এখন সময় লাগছে সাড়ে ৪ থেকে পাঁচ ঘণ্টা। সব মিলিয়ে এখন স্বস্তি যাতায়াত করছে এই রুটের ঘরমুখো যাত্রীরা। তবে ঈদ সামনে রেখে চাঁদাবাজি কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে ফরিদপুরে কয়েক জায়গায় ৩০০ টাকার মতো চাঁদা দিতে হয়। #এএইচ/একুশ নিউজ Comments SHARES জাতীয় বিষয়: