ভোলার তজুমদ্দিনে হরিণের গোস্ত উদ্ধার নিয়ে ধুম্রজাল

প্রকাশিত: ১১:২২ অপরাহ্ণ, জুন ৩, ২০১৯

ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় হরিণের গোস্ত উদ্ধার ও কয়েকজন শিকারিকে আটক নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

কোস্টগার্ড বলছে, হরিণের ২০ কেজি গোস্ত উদ্ধার করে সোমবার(৩জুন) বিকেলে তজুমদ্দিন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গোস্ত হস্তান্তর করে। তবে ইউএনও বলছেন, তাঁর কাছে ৭ কেজির মতো গোস্ত হস্তান্তর করা হয়েছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ভোলার মনপুরা উপজেলার দুর্গম কলাতলি চরে একদল শিকারি নিয়মিত ঢালচর থেকে হরিণ শিকার করে।

গতকাল রোববার রাতে কলাতলি চরের আবুল কালাম (কালাম কসাই), আবদুল আজিজ, ঋদুচন্দ্র, শফিকুল ইসলাম বাথান, কালু মাঝি, মাকসুদুর রহমান ও বাবর মাঝিসহ কয়েকজন কয়েকটি হরিণ শিকার শেষে জবাই করে।

পরে ভোরে মণ দেড়েক হরিণের গোস্ত বাদশা মাঝির ট্রলারে করে তজুমদ্দিনের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। ওই ট্রলারে ৪ জন লোক ছিল। এদের মধ্যে নাজমুল, মঞ্জু ও মনিরের নাম জানা গেছে। ট্রলারটি তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট ঘাটে এলে কোস্টগার্ড ওই ৪ ব্যক্তি ও হরিণের গোস্তসহ ট্রলারটি আটক করে।

বন বিভাগের শশীগঞ্জ বিট (তজুমদ্দিন উপজেলা) কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, হরিণের গোস্তসহ ৪জনের আটকের খবর পেয়ে তাঁরা ঘাটে বনপ্রহরী পাঠান। দেখেন, ঘটনা সত্য। ট্রলারে হরিণের গোস্তসহ ৪ জন আটক। নিয়ম হচ্ছে পুলিশ-কোস্টগার্ড বন্যপ্রাণী, প্রাণীর গোস্ত ও শিকারিদের আটক করে বন্যপ্রাণী বা বন কর্মকর্তার কাছে ধরিয়ে দেবে।

গোস্ত ময়নাতদন্ত শেষে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। আসামিদের পুলিশে দেবে। কিন্তু কোস্টগার্ড এসব কোনো নিয়মপালন করেনি।

উল্টো বনপ্রহরীরা ঘটনাস্থলে গেলে কোস্টগার্ডের পেটি অফিসার ও লোকজন বন বিভাগের প্রহরীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে স্থান ত্যাগ করতে বলেন। পরে গোস্ত ও লোকজন নিয়ে ট্রলার চালিয়ে কোস্টগার্ড মনপুরার দিকে চলে যায়।

পরে বেলা আড়াইটার দিকে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা স্লুইসগেট মেঘনার পূর্ব-দক্ষিণ পাশে বাসনভাঙার চর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২০-২৫ কেজি হরিণের গোস্ত আটক করেছেন। গোস্তের সঙ্গে থাকা লোকজন পালিয়েছে।

তবে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিম বন বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কোস্টগার্ড গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনায় অভিযান চালিয়ে একটি হরিণের গোস্তসহ একটি ট্রলারকে ধাওয়া করে।

শিকারিরা ট্রলারটি তজুমদ্দিন উপজেলার বাসনভাঙার চরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। পরে তাঁরা ট্রলার ও ২০ কেজি গোস্ত জব্দ করে তজুমদ্দিন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুল বাশার রুমীর কাছে নিয়ে যান। তিনি গোস্তগুলো পুঁতেত ফেলবেন।

অভিযুক্ত কোস্টগার্ডের পেটি অফিসারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এ দিকে বন কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের পক্ষ থেকে কোস্টগার্ডকে বলা হয়েছে, আসামি ছাড়া তাঁরা হরিণের গোস্ত গ্রহণ করবেন না।

পরে কোস্টগার্ড তজুমদ্দিনের ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হাবিবুল বাশার রুমীর কাছে ওই গোস্ত হস্তান্তর করে। তবে হাবিবুল বাশার বলেন, ২০ কেজি নয়, কোস্টগার্ড তাঁর কাছে ৭ কেজির মতো গোস্ত হস্তান্তর করেছে। এসব গোস্ত পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এমএম/

Comments