গোবিন্দগঞ্জের চক রহিমাপুরে থেমে নেই অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলন, প্রশাসন নির্বিকার

প্রকাশিত: ৮:১৩ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০১৯

রেজুয়ান খান রিকন, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদীর চক রহিমাপুর ও সাহেবগঞ্জ এলাকায় থেকে অবৈধভাবে কয়েক বছর ধরে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছেন মিঠু মিয়া, তাহের সরদার, ছালাম সরকার, শহিদুল ইসলাম, শামীম, ময়দুল ইসলাম নামে ছয় ব্যবসায়ী।

প্রশাসন ও বিভিন্ন দলীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকে মাসোয়ারা দিয়েই চলছে এই কাজ। এলাকাবাসীর অভিযোগের পর প্রশাসননের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তবে বালু উত্তোলনের ভেঙে যাচ্ছে নদীর পার সহ আবাদী জমি আর বালু বোঝাই ট্রাকের দাপাদাপি ভেঙে যাচ্ছে সরকারী বাধের রাস্তা।

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, করতোয়া নদীর সাতটি পয়েন্টে সাতটি ভারী মেশিন দিয়ে লম্বা পাইপলাইনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এই বালুর একটা অংশ দিয়ে স্থানীয়দের মজা পুকুর ও পতিত জমি ভরাট করা হচ্ছে আর অধিকাংশ বালি ট্রাক বোঝাই করে নদীর পাড় থেকে নগরের বিভিন্ন প্রান্তে। খোঁজ নিতে বেরিয়ে আসে বালু ব্যবসায়ী ছয়জন ব্যবসায়ীর নাম।

এসব বালু উত্তোলনকারী জানান-এলাকার প্রভাবশালী, সরকারি দলের নেতাকর্মীসহ আরও অনেককেই মাসোহারা দিয়ে বালু উত্তোলন করছি। বালু তোলায় কোথাও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তাছাড়া বালু না তুললে পাকা বিল্ডিং নির্মিত হবে কি দিয়ে?

স্থানীয় এক এলাকাবাসী জানায় ‘এই বালু উত্তোলনে নদী তীরবর্তী এলাকার আবাদী জমিতে ধস দেখা দিয়েছে। সেই সাথে সরকারী বাধের রাস্তার মধ্যদিয়ে বালু বহনে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার চলাচল করায় রাস্তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। এবং যেকোনো সময় দুঘর্টনার আশঙ্কা রয়েছে। ‘বেপরোয়া’ ট্রাক্টর চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ তার।

তিনি আরও বলেন আসলে বালু ব্যবসায়ীদের ক্ষমতা অনেক। সে ইউএনও, এসিল্যান্ড মানেন না।’ সাহেবগঞ্জ এলাকার এক বৃদ্ধ বাসিন্দা ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘বালু তোলার কারণে নদী ভাঙছে, বাড়িঘর ভাঙছে, ট্রাক্টর চলাচল করায় রাস্তা ভাঙছে, দুঘর্টনা ঘটছে। দেখার যেন কেউ নেই।’ আরেক ব্যক্তি বলেন, আইন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা যন্ত্রচালিত ভারী মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে।

নদী ভাঙন, সেই সাথে বালু বহনে বড় বড় ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় কাঁচা সড়কগুলোতে দুই পাশে ধসও গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে বালু বিক্রি করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: নাজির হোসেন এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি শুনেছি এবং দু-একদিনের মধ্যেই মােবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো: আবদুল মতিন মুঠাফোনে এ ব্যাপারে বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখছি এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিচ্ছি।’

এমএম/

Comments