জাফরের স্বপ্নগুলো কি বাচবে না?

প্রকাশিত: ৪:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০১৯

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি: বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের একজন ভ্যানচালক আলতাফ হোসেন ভুইয়া। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাবা ভ্যান চালিয়ে স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে আর সবার ছোট ছেলে জাফরের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতেন।

হঠাৎ অসুস্থতায় মারা গেলেন ভ্যান চালক আলতাফ। ছয়টি সন্তানের পেটের ক্ষুধার জ্বালা বাচাতে আলতাফের স্ত্রীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, তখনই মাকে শান্তনা দিয়ে পাঁচ বোনের ছোট ভাই জাফর কথা দিয়েছিলো, ‘মা তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি প্রয়োজনে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে কাজ করবো, অনেক বড় হব, তোমার কোন কষ্ট হবে না’।

বাবা মারা গেছে প্রায় দুই বছর হয়েছে। জাফরের সেই বড় হওয়ার স্বপ্ন যেন হঠাৎ করেই থমকে যেতে বসেছে দুরারোগ্য ব্যাধির মরন কামড়ে। কোনো কাজ করতে পারছে না, পারছে না মায়ের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার দিতে। পারবে কীভাবে? সে যে এখন মরনব্যাধির সঙ্গে লড়ছে বরিশালের শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের চতুর্থ তলার চার নম্বর ওয়ার্ডের বাইশ নম্বর বিছানায়।

কিন্তু এর মধ্যেও জাফড় তার মাকে চিন্তা করতে মানা করেছে। তার বিশ্বাস, সে তো ভালো হয়ে যাবে, আবার কাজ শুরু করবে। কিন্তু জাফরের কি কাজ করার বয়স? ও তো সবেমাত্র ১৬ বছরের কিশোর। সমাজের আর দশটা দুরন্ত কিশোরের মতো যখন সকালে ইউনিফর্ম পরে, ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, দুরন্তপনায় মেতে ওঠার কথা ছিল, ঠোটের কোনে লেগে থাকার কথা ছিল এক চিলতে হাসি।

কিন্তু তাকে দেখে কে বলবে তার মরনব্যাধি সমস্যা? এতেই হারাতে বসেছে তার দুরন্ত কৈশর, স্বপ্নভরা চোখে দেখা সোনালী স্বপ্ন, মাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি, বড় হওয়ার বিশ্বাস।

জাফড়ের এই বিশ্বাস কি মিথ্যে হবে? তার স্বপ্ন কি বাঁচবে না? হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন, জাফড়ের শরীরের মধ্যে রক্তস্বল্পতাসহ বেশকিছু জটিল রোগ বাসা বেঁধেছে। এরই মধ্যে তাকে মোটামুটি চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে জাফরের চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে আরো ৪-৫ লাখ টাকার দরকার পড়বে।

পিতৃহীন জাফরের মা চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ৩০,০০০ টাকা খরচ করেছেন। এখন আর তার পক্ষে জাফড়ের এই চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি। এখন সন্তানকে বাঁচাতে জাফড়ের মা এ দেশের বিত্তবান, পরোপকারী, সচ্ছল মানুষের কাছে সাহায্য কামনা করেছেন।

জাফড়ের মা দিনরাত ছুটছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে, কেউ যদি একটু সাহায্য করেন। চিকিৎসায় প্রতিদিনই টাকা দরকার। একদিন টাকা জোগাড় করতে না পারলেই তো পরদিন বন্ধ হয়ে যাবে চিকিৎসা। বন্ধ হয়ে যাবে জীবন প্রদীপ। তাই একজন মা লড়ে যাচ্ছেন তার সবটুকু দিয়ে, সন্তানকে বাঁচানোর জন্য।

তার বিশ্বাস, ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এমন মানুষ তো অনেক আছেন, যাঁরা হয়তো একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই জাফর সুস্থ হয়ে আবার তাঁর কোলে ফিরে আসবে, বেঁচে যাবে জাফর আর তার স্বপ্নগুলো।

/আরএ

Comments