‘শুধুমাত্র মুসলামনদের জন্য নয়, ফিলিস্তিনে গণহত্যা সমগ্র মানবজাতির জন্য উদ্বেগজনক’

প্রকাশিত: ১০:১৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
শান্তিতে নোবেলজীয় অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস

জাতিসংঘ অধিবেশনের ভাষণে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতার জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শুধুমাত্র মুসলামনদের জন্য নয়, সব মানুষের জন্য ফিলিস্তিনের গণহত্যা উদ্বেগজনক। এর জন্য সকলকে দায়বদ্ধ করতে হবে। আমি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাই।

শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে বাংলাদেশের সরকার প্রধান এসব কথা বলেন। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা) ভাষণ শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি ইসরায়েলের ‍যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতেই ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গণহত্যা বন্ধে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, স্বাধীন ফিলিস্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।

এসময় তিনি জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনের কথা তুলে ধরেন। তিনি ছাত্র-জনতার বৈপ্লবিক স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

ফিলিস্তিন ইসরায়েলের ক্রমাগত মানবতাবিরোধী আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানিয়ে নোবেলজয়ী শান্তির বার্তাবাহক ড. ইউনূস বলেন, ‘বিশ্ববাসীর উদ্যোগ এবং নির্দেশ সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যার থামছে না। ফিলিস্তিনের মতো বিদ্যমান বাস্তবতায় কেবল আরব কিংবা মুসলমানদের জন্য নয় বরং সমগ্র মানব জাতির জন্য এটা উদ্বেগের বিষয়। একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ফিলিস্তিনের জীবন অমূল্য। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়বদ্ধ করতে হবে।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান সহিংসতা বিশেষত নারী এবং শিশুদের সাথে প্রতিনিয়ত যে নিষ্ঠুরতা বিশ্ব দেখাচ্ছে তা থেকে নিস্তার এর জন্য বাংলাদেশে অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে।’

বাংলাদেশের সরকারপ্রধান শান্তিতে নোবেলবিজয়ী এই বিশ্বনেতা আরও বলেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যের টেকসই শান্তি আনতে পারবে। তাই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকলকে এর বাস্তবায়নের জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে আবারো আহ্বান জানাচ্ছি।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘গত আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যুদ্ধের প্রভাব সর্বব্যাপী এমনকি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব আমরা অনুভব করছি। আমরা উভয় পক্ষকে সংলাপে বসে বিরোধ নিরসনের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’

রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসকে উদ্দেশ্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মাননীয় সভাপতি (গুতেরেস) বাংলাদেশ গত সাত বছর যাবত মায়ানমার থেকে আগত ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে আসছে। এই সংকট বাংলাদেশসহ আমাদের অঞ্চলের জন্য প্রথাগত ও ব্যবস্থাগত নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখা এবং তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত হওয়া ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে রোহিঙ্গারা যাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করে তাদের নিজ ভূমি রাখাইনে ফিরে যেতে পারে তার পথ সুগম করা অত্যন্ত দরকারি।’

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশের স্বাধীন এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে সেই লক্ষ্যে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিক প্রচেষ্টার প্রশংসার দাবিদার।’

প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অবস্থা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে একযোগে রোহিঙ্গাদের নির্দেশে মর্যাদাপূর্ণ টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করতে প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Comments