লক্ষ্মীপুরে ১৫ দিন ফেরি বিকল, দেড় শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা!

প্রকাশিত: ৪:৩৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২, ২০১৯

মুহাম্মদ নোমান ছিদ্দীকী, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-রুটের ফেরি কনকচাঁপা নষ্ট থাকায় গত ১৫ দিন ধরে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এছাড়া বর্তমানে ফেরি সংকটের কারণে মজুচৌধুরীর হাট ফেরি ঘাট এলাকায় দেড় শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি আটকা পড়ে আছে। এতে পরিবহন শ্রমিকরাও আর্থিক ক্ষতি ও মানসিক কষ্টে রয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের কথা চিন্তা করে ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চ ঘাটটি চালু করে। ওই সময় কামিনী, কিষাণী ও কস্তুরী নামের তিনটি ফেরি এ নৌপথে চলাচল করত। এরপর বিআইডব্লিওটিএ কামিনী ও কস্তুরী নামের ২টি ফেরি প্রত্যাহার করে নেয়। বর্তমানে কনকচাঁপা, কিষাণী ও কলমীলতা নামে তিনটি ফেরি এ রুটে চলাচল করছে। কিন্তু ফেরি কনকচাঁপার ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় গত ১৫ দিন ধরে ঘাটে পড়ে আছে। কনকচাঁপা বন্ধ থাকায় বর্তমানে ওই নৌ-রুটে দেখা দিয়েছে ফেরি সংকট। এতে যাত্রী ও চালকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে ফেরিতে উঠতে সিরিয়াল নিতে যানবাহন চালককে দিতে হয় দ্বিগুন অর্থ। টাকা না দিলে দিনের পর দিন পণ্যবাহী যানবাহন ঘাটে আটকে থাকতে হয় বলে অভিযোগ করেন চালকরা। ফলে ঘাটের দু-পাড়ে আটকা পড়েছে শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। অপরদিকে প্রায়ই ডুবোচরে আটকে পড়ে ফেরি।এ কারণে যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেনা যানবাহন। ফলে মানুষ যথা সময়ে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না।

ভোলাগামী ট্রাক চালক এরশাদ উল্যাহ জানান, তিনি চট্রগাম থেকে পণ্য নিয়ে ভোলার উদ্দেশে যাচ্ছেন। গত ২ দিন ধরে তিনি ঘাটে সিরিয়াল পাচ্ছেনা না। এরপরও বিকল হওয়ায় ফেরিটি মেরামত করা হয়নি। দিনের পর দিন ঘাটে আটকে থাকতে হয়। কবে বিকল হওয়ায় ফেরিটি চালু হবে, তাও জানা নেই কারও। প্রতিদিন এ নৌ-রুটের কয়েক জায়গায় ডুবোচর জেগে উঠায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে ফেরি। এ কারণে ট্রাকে কাঁচামাল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া যানবাহনের শ্রমিকরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। সঠিক সময়ে গন্তব্যে না পৌছাঁয় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেন চালকরা।

নাম প্রকাশে না ইচ্ছুক কয়েকজন চালক জানান, লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে গাড়িপ্রতি সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২ হাজার ৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। অথচ প্রতি যানবাহন থেকে আদায় করা হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া ফেরিতে ওঠানোর জন্য যে সিরিয়াল, সেটাও মানা হয় না। টাকা দিলে সিরিয়াল পাওয়া যায়। টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘাটে যানবাহন নিয়ে বসে থাকতে হয়। বিআইডাব্লিউটিসির কর্মকর্তা কর্মচারীদের অত্যাচারে অতিষ্ট যানবাহন মালিক ও চালকরা।

বিআইডাব্লিউটিসি মজুচৌধুরীরহাট-ফেরিঘাটের সহকারী প্রকৌশলী আবদুল মালেক জানান, ফেরি কনকচাঁপার ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় বর্তমানে ফেরিটি বন্ধ রয়েছে। এটি মেরামত করা হলে দুর্ভোগ থাকবে না।

বিআইডাব্লিউটিসি, মজুচৌধুরীরহাট ফেরীঘাটের সহকারী পরিচালক মো. কাউছার যানবাহন ও দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগামী ১০দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করি। সিরিয়াল বা সরকার নির্ধারিত ভাড়া ছাড়া কোন বেশি অর্থ নেয়া হচ্ছে না বলেও জানান করেন তিনি।

Comments