ঠাকুরগাঁওয়ে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু, জনমনে আতঙ্ক

প্রকাশিত: ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯

মোঃ ইলিয়াস আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথমে বাবার মৃত্যু, পরে এক দিনের ব্যবধানে স্ত্রী ও জামাইয়ের, আজ দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই মারা গেছেন এবং তার স্ত্রী স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি ও অপর ভাই রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যান। মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যু হলো।

ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নে ভান্ডারদহ মরিচপাড়ার নয়াবাড়ী গ্রামে। চিকিৎসকগণ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে একটি ভাইরাসের কারণে এমন মৃত্যু হচ্ছে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নে ভান্ডারদহ মরিচপাড়া গ্রামের আবু তাহের (৫৫) মৃত্যু বরণ করেন। আবু তাহের বয়স হওয়ার কারণে বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলেনি।

এরপর গত বৃহস্পতিবার আবু তাহেরের জামাই সদর উপজেলার রুহিয়া থানার কুজিশহর গ্রামের রহিম উদ্দীনে ছেলে হাবিবুর রহমান বাবলু (৩৫) একইভাবে অজনা এক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাপাতালে বাবলুর মৃত্যু হলে সেই মৃত্যুর সংবাদ শোনার কিছুক্ষণ পর আবু তাহেরে স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৪৫) একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে একই রোগে আক্রান্ত হয় হাবিবুর রহমানের দুই ছেলে ইউসুফ আলী (২৭) ও মেহেদী হাসান (২৪) মারা যায়।

রংপুর হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে থাকা জাহির উদ্দীন ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি’র) ছাত্র দুলাল হোসেন জানায়, ডাক্তার রোগীর মুখে মার্কস পড়িয়ে দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি নিয়েছে। তবে কি রোগে আক্রান্ত হয়েছিলো মেহেদি সেটা এখনো কোনো চিকিৎসকরা বলতে পারছেন না।

বেরোবির ছাত্র দুলাল আরো জানান, রাতে রংপুর হাসপাতালের সব চিকিৎসক এবং ঢাকার চিকিৎসকসহ আলোচনায় বসবেন বলে চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন। তারপর এ রোগের আসল রহস্য সম্পর্কে জানাবেন তারা।

মৃত্যুর কোনো রহস্য জানতে পারলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি মোসাব্বেরুল হক জনান, আমি মুঠোফোনে রংপুরে হাসপাতাল থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি এটি একটি ব্রেইন ভাইরাস। আমরা বিষয়টিকে অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেছি।

এদিকে সকালে মৃত্যুবরণ করা ইউসুফের স্ত্রী কোহিনুর বেগম তার একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মোর্শেদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, কোহিনুর ও তার কন্যা সন্তান বর্তমানে সুস্থ্য রয়েছে। আমরা নিবীড় পরিচর্যায় তাদের রেখেছি। আশা করছি কোনো ভয় নেই। তবে কোনো প্রকার সমস্যা হলে আমার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার সময় ইউসুফ আলীর দাফন সম্পন্ন করেছে স্থানীয় লোকজন ও তার পরিবার। এ সময় এ ভাইরাস থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষার জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন স্থানীয়রা।

হাবিবুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ভাইরাসের আতঙ্কে বাড়ির আশপাশের লোকজন বাড়ি ঘর ছেড়ে দেয়া শুরু করেছে। জনমনে আতঙ্ককের ছাপ দেখা গেছে। কোন সময় কাকে আক্রমণ করে এই ভাইরাস এ ভেবে অনেকেই বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছে।

তবে অনেকেই আশংকা করছেন, আবু তাহেরের জামাই হাবিবুর ছয় বছর ধরে দুবাই থাকার পর দেশে ফিরেছেন। দেশের ফেরার পরই এ ভাইরাস আক্রমণ করেছে তার পরিবারে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ জামান জুয়েলকে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে।

তিনি সকালে মৃত্যুবরণ করা ইউসুফ আলীর প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করেছেন। তিনি আরো জানান, কি কারণে এমন ঘটনা ঘটছে, বিশেষজ্ঞ ছাড়া আপাতত বলা যাচ্ছে না।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ঘটনার কথা শুনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন।

/আরএ

Comments