বিদ্যালয়ের সভাপতিকে ইউএনওর গালাগালি

প্রকাশিত: ৮:১৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯

যশোর প্রতিনিধি: যশোরের অভয়নগর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সবুর উদ্দিন মোল্যাকে ‘গাধা’, ‘মূর্খ’, ‘স্টুপিড’ বললেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহীনুজ্জামান ।

মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয়ে বালু ভরাট বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে তিনি এসব কথা বলেন। পরদিন থেকে মাঠ সমান করতে শুরু না করলে সভাপতিকে কোমরে দড়ি বেঁধে তাঁর দপ্তরে নিয়ে যেতে তিনি সেখানে উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে ভৈরব নদ। বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি সড়ক ভৈরব নদ পর্যন্ত চলে গেছে। বিদ্যালয়ের সামনে সড়কের পাশে বড় বড় কয়েকটি গর্ত রয়েছে। সড়কের কিছু অংশ ভেঙ্গে গর্তের মধ্যে পড়েছে। সড়কের পাশে বিদ্যালয়ের ২৩ টি ছোট বড় গাছ রয়েছে। গাছগুলো হুমকির মধ্যে পড়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সড়কটি পাকাকরণ শুরু করেছে। এতে গাছগুলো রক্ষা করা দূরুহ হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া, বিদ্যালয়ের মাঠটিও নিচু। পানি জমে থাকায় বর্ষা মৌসুমে মাঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা যায় না।

ভৈরব নদের অভয়নগর পুরাতন খেয়াঘাট অংশে খনন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ)। বিদ্যালয়ের মাঠ উঁচু ও পাশের গর্ত ভরাট করার জন্য বিআইডব্লিউটি এর কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা বিনামূল্যে নদ খননের বালু দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ ও পাশের গর্ত ভরাট করে দিতে সম্মত হয়। তাঁদের কথামতো সম্প্রতি এস্কেভেটর দিয়ে মাঠের চারপাশ উঁচু করে বাঁধা হয়।

কিন্তু এলাকার আবু বক্কার সরদার বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা মাঠে বালু ভরাট করে ব্যবসার পাঁয়তারা করছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। গতকাল বিষয়টি তদন্ত করতে ইউএনও বিদ্যালয়ে যান। তিনি বালু ভরাট বন্ধ করতে সভাপতিকে নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনে পকেটের টাকা দিয়ে মাঠ সমান করে দিতে সভাপতিকে নির্দেশ দেন।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সবুর উদ্দিন মোল্যা অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ে উপস্থিত শতাধিক এলাকাবাসীর সামনে হঠাৎ ইউএনও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি আমাকে গালিগালাজ শুরু করে গাধা, মূর্খ, স্টুপিড বলতে থাকেন।

তিনি জানতে চান, কোন গাঁধারা আপনাকে সভাপতি বানিয়েছে। এ সময় তিনি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, কাল থেকে মাঠ ভরাট না করলে এই ষ্টুপিড সভাপতিকে কোমরে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে আমার অফিসে নিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, বিনামূল্যের বালু দিয়ে নিচু মাঠ এবং পাশের গর্ত ভরাট করতে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময় করেছি। সবাই মাঠ উঁচু এবং গর্ত ভরাটের পক্ষে মতামত দেন। সেই অনুযায়ি চারপাশ বেঁধে উঁচু করা হয়। এখানে বালু ব্যবসার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বালূ ব্যবসার কোনো সুযোগও নেই।

কিন্তু ইউএনও সাহেব আমাকে বিশ্রি ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তিনি বিকেলে মাঠে খেলাধুলা করার জন্য বহিরাগতেরও নির্দেশ দিয়েছেন। আমি ভীষণভাবে অপমানিত হয়েছি। অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, আমি সভাপতিকে কোনো গালিগালাজ করিনি। আমার মনে হয়েছে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা মাঠে বালু ভরাট করে ব্যবসা করতে পারেন। তা ছাড়া, বিদ্যালয়ের মাঠটি খুব একটা নিচু নয়। বিদ্যালয় ভবন থেকে মাত্র ছয় ইঞ্চি নিচু। আর সড়ক পাকাকরণের জন্য গাছের কিছূ শিকড় কাটা পড়বে। গাছের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। এই কারণে আমি মাঠের বালু ভরাট বন্ধ করে দিয়েছি।

/আইকে

Comments