‘আসামী সতিনের পরিবর্তে আটক হওয়া রেখা অবশেষে মুক্তি পেলো’

প্রকাশিত: ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি: অবশেষে নিরপরাধ রেখা খাতুনকে অব্যাহতি দিয়েছেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের (১ম) বিচারক মো: নাজির আহমেদ। সতিন শিরিনের নামে মাদক মামলা থাকায় পুলিশ তাকে না পেয়ে রেখা খাতুনকে আটক করে শিরিন নামে জেলহাজতে পাঠিয়েছিলো।

বৃহস্পতিবার পুলিশের প্রতিবেদন পাবার পর আদালত তাকে ‍মুক্তির আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশ পাবার পর গতকালই রেখা খাতুনকে মুক্তি দিয়েছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।

শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া ইসমাইল কলোনির বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, সাজাপ্রাপ্ত শিরিন বেগম তার প্রথম স্ত্রী। আর রেখা খাতুন দ্বিতীয় স্ত্রী। রেখা খাতুন শহরের ডালমিল এলাকায় আলাদা ভাড়া থাকে। বর্তমানে আমার প্রথম স্ত্রী শিরিন লেবাননে থাকেন। ওই মামলায় আমিও আসামি ছিলাম। আমি খালাস পেয়েছি। শিরিনের সাজা হয়েছে।

পুলিশ রেখা খাতুনকে সাজাপ্রাপ্ত শিরিন বেগম হিসেবে গত ২০ মার্চ বাড়ি থেকে আটক করে। রেখা খাতুন নির্দোষ। রেখার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল ২০০৯ সালের দিকে। এরপর ২০১২ সালের ডিভোর্স হয়ে যায়। সে আলাদা থাকতো চাঁচড়া ডালমিল এলাকায়। আটকের সময় আমরা বারবার পুলিশকে এই কথা বলা হলেও তারা শোনেনি।

কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপূর্ব হাসান সাংবাদিকদের জানান, আমরা সঠিক আসামিকে আটক করেছি। জেলখাটার ভয়ে এখন তারা মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। পরিচয়পত্র সংশোধন করেছে।

প্রতিবেশি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সামাদ বলেন, শিরিন বেগম ও রেখা খাতুন একই ব্যক্তি নয়, আলাদা। শিরিন বেগম বেশ কয়েক বছর ধরে বিদেশে আছে। আর রেখাকে শিরিন হিসেবে পুলিশ আটক করেছে।

রেখা খাতুনের প্রথম পক্ষের (প্রথম স্বামী) মেয়ে সাহিদা আক্তার রানী বলেন, মা সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলেন। চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকার রাস্তা থেকে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশকে বুঝানোর চেষ্টার করেও আমরা সফল হয়নি। তাদের একগুয়ামির কারণে আমার নিরীহ মা ১৫ দিন বিনাদোষে জেল খাটল।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট একটি মাদক মামলায় (হেরোইন উদ্ধার) যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া ইসমাইল কলোনি এলাকার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী শিরিন বেগমকে দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৪ মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয় আদালত। এই মামলায় শিরিন বেগমের স্বামী শহিদুল ইসলামকে খালাস দেয়া হয়। শিরিন বেগম পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

গ্রেফতারকৃত রেখা খাতুন- শিরিন বেগম নয় দাবি করে ২৪ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী আব্দুস সহিদ। বিচারক শুনানি শেষে বিষয়টি পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। গতকাল যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিলে আদালত রেখা খাতুনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

রেখা খাতুনের আইনজীবী আবদুস সহিদ বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি শিরিন বেগম বিদেশ রয়েছে। তার পরিবর্তে রেখা খাতুনকে আটক করে শিরিন দাবি করা হয়েছে। নিরাপরাধ ব্যক্তি কারাগারে সাজা খাটল ১৫দিন।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলর আবু তালেব জানান, আদালতের আদেশ পাবার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে রেখা খাতুনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

Comments