রায় লিখুন বাংলায়: বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯

ডেস্ক: আদালতের রায় লেখার সময় বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় রায় লেখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতের রায় লেখা হয় ইংরেজিতে। সেই রায়ে কি বলা হল তা বুঝতে অনেক বিচারপ্রার্থীকে নির্ভর করতে হয় আইনজীবীর ওপর।

তিনি (আইনজীবী) যা বোঝাবেন তাই সে বুঝবে, নিজে পড়ে জানার কোনো সুযোগ তার থাকে না। ফলে অনেক সময় তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় অথবা তাকে একটু অন্যভাবে ব্যবহারও করা হয়।

এজন্য আমি বলবো আদালতের রায়টা যদি কেউ ইংরেজিতে লিখতে চান লিখতে পারেন। কিন্তু একটা শর্ত থাকবে, এটা বাংলা ভাষায় প্রচার করতে হবে, প্রকাশ করতে হবে এবং যিনি রায় পাবেন তিনি যেন পড়ে জানতে পারেন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

এছাড়াও ইংরেজিতে যে রায় লেখা হবে, তা যেন ‘একটু সহজ ইংরেজিতে’ লেখা হয়, সে বিষয়ে বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ভাষা আমরা সবাই বুঝতে পারি, সেই ভাষায় লেখা উচিত। আর বাংলায় রায় লিখে সেটা ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন করেও দিতে পারেন।

উচ্চ আদালতসহ সর্বক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিতকরণে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭’ রয়েছে; সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদালতসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরকে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

ওই আইনের তৃতীয় ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারী অফিস, আদালত, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবে।

বর্তমানের আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক হাই কোর্টের বিচারপতি হিসেবে ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলায় মামলার রায় লেখা শুরু করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরও তা চালু রেখেছিলেন তিনি।

সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও এ বি এম খায়রুল হক ছাড়াও হাই কোর্টের কয়েকজন বিচারক বিভিন্ন মামলার রায় দিয়েছেন বাংলা ভাষায়। হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এআরএম আমিরুল ইসলাম চৌধুরী তার সব আদেশ, নির্দেশ ও রায় বাংলায় দিতেন ।

মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি আমাদের যারা আদালতে আছেন, তারা যদি মাতৃভাষায় লেখার অভ্যাসটা করেন, সেটা অন্তত আমাদের মত সাধারণ মানুষ, তাদের খুব সুবিধা হবে রায়টা পড়ে বোঝার।

বাংলা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, মাতৃভাষা জানাটা সবার জন্য অপরিহার্য। তবে বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ। আমাদের ভাষাগতভাবে যোগাযোগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

পৃথিবীর সব দেশেই কিন্তু নিজের ভাষা শিক্ষার সাথে সাথে একটা দ্বিতীয় ভাষা শিক্ষা নেয়। কাজেই সে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে কিন্তু অন্য ভাষা শেখার সুযোগ আমাদের দেশেও আছে।

তিনি বলেন, ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতেই সরকারের তরফ থেকে পৃথিবীর নয়টি ভাষা নিয়ে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

তার মাধ্যমে কিন্তু মানুষ অনেক ভাষা শিখতে পারে। ইংরেজি সারা বিশ্বে একটা মাধ্যম হয়ে গিয়েছে। কাজেই আমাদের দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে সেটা শিখতে পারে। সাথে সাথে বাংলা ভাষা মাতৃভাষা, যে ভাষার জন্য আমরা জীবন দিয়েছি সেই ভাষাটাও সবাই যাতে শেখে সেই ব্যবস্থাটাও করা একান্তভাবে প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অনুষ্ঠানে চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানান।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং সরকারের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।

/আরএ

Comments