প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এটাই শেষ মেয়াদ নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯ ডেস্ক: বর্তমান মেয়াদ শেষে আর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে চান না আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান মেয়াদই তাঁর শেষ মেয়াদ। এই সময়ের মধ্যে তিনি তরুণ নেতাদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দিতে চান। সম্প্রতি জার্মানির গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন কথাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে। ডয়চে ভেলের সাক্ষাৎকার প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্রই মাসখানেক আগে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর দল আওয়ামী লীগ ও এর জোট সম্মিলিতভাবে এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসন জিতেছে। তাঁর এই পুনর্নির্বাচনের পর প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি। এ সাক্ষাৎকারে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটাই তাঁর শেষ মেয়াদ। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ডয়চে ভেলেকে এই সাক্ষাৎকার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, এটা আমার টানা তৃতীয় মেয়াদ। এর আগেও আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েছি (১৯৯৬-২০০১)। সুতরাং এটা আমার চতুর্থ মেয়াদও। আমি (এই দায়িত্ব) আর চালিয়ে যেতে চাই না। আমি মনে করি, প্রত্যেক মানুষেরই বিরতি নেওয়া উচিত। সুতরাং আমরা তরুণ প্রজন্মকে জায়গা করে দিতে পারি। উন্নয়নের এক দশক : প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০ বছরে শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে। দেশটি এখন নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের দিকে যাত্রা করছে। দেশের অর্থনীতি ৬ থেকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লাভ করছে। বাণিজ্যের আকার বেড়েছে বহুগুণ এবং বিদেশি বিনিয়োগও অনেক বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, এই অগ্রগতি সাধিত হওয়ার পরও এখনো বাংলাদেশের প্রতি চারজনে একজন দরিদ্র। শেখ হাসিনা বলেন, এখন তাঁর বাকি মেয়াদে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকেই অগ্রাধিকার দিতে চান। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান—এসব মৌলিক চাহিদা। নিঃসন্দেহে প্রত্যেক মানুষই আরো উন্নত জীবন চায়। আমাদেরকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’ উন্নয়ন বনাম বাক্স্বাধীনতা : এই ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন শেখ হাসিনার সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে পারেনি। তাদের অভিযোগ, শেখ হাসিনা বা তাঁর সরকার বাংলাদেশে বাক্স্বাধীনতার বিধি-নিষেধ দূর করতে এবং মুক্তচিন্তকদের ওপর আঘাত থামাতে খুব বেশি কিছু করেননি। তবে শেখ হাসিনা তা অস্বীকার করে বলেন, মুক্তচিন্তাকে সমর্থন করেন তিনি এবং সমালোচনাও তাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘যত কাজ করবেন, তত সমালোচনা শুনবেন’। তাঁর যুক্তি, ‘আপনি আমার দেশের মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন, তারা সন্তুষ্ট কি না; তাদের যা যা প্রয়োজন, সব পাচ্ছে কি না, কিংবা আমি সব দিতে পারছি কি না’। শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা বিরোধীদের জন্য রাজনীতির মাঠ সংকুচিত করে রেখেছেন এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছেন। কিন্তু তা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ২৬০ আসনে বিজয়ী হয়েছে। সুতরাং অন্যান্য দলও সংসদে আছে। এটা কী করে একদলীয় হয়?’ তাঁর মতে, বিরোধী দলগুলো দুর্বল। তিনি বলেন, ‘এখন কোনো দল যদি তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের মন জয় করতে না পারে, তাদের আস্থা অর্জন করতে না পারে এবং ভোট না পায়—সে দায়-দায়িত্ব কার? প্রকৃতপক্ষে এটা তো ওই দলগুলোর দুর্বলতা’ যোগ করেন শেখ হাসিনা। মৌলবাদের উত্থান ও নারী অধিকার : হেফাজতে ইসলামের মতো মৌলবাদীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নিবিড় সম্পর্ক আছে বলেও সমালোচনা করা হচ্ছে। সমালোচকদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামের মতো ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছে। তার সরকার ইতিমধ্যে কওমি মাদরাসার ডিগ্রিকে মাস্টার্স ডিগ্রির মর্যাদা দিয়েছে। সমালোচকদের মতে, কওমি মাদরাসার এই গোষ্ঠী মৌলবাদকে সমর্থন করে, যারা নারীশিক্ষার বিরোধী। সম্প্রতি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান শাহ আহমদ শফী মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। আহমদ শফীর এই বক্তব্যের দায় নিতে শেখ হাসিনাকে অনিচ্ছুক মনে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, এখানে বাক্স্বাধীনতা আছে? তাই যে কেউ যেকোনো কিছুই বলতে পারে?’ তিনি নারীশিক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, নারীশিক্ষার ক্ষতি করতে এমন এক টুকরো পাথরও তিনি সরাননি। ধর্মীয় সংগঠনগুলো লক্ষ্য অর্জনে বাধা কি না এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই না’। রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে : জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং উদারপন্থী ও মৌলবাদীদের মাঝখানে একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়াও শেখ হাসিনার সরকারকে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গার দায়িত্ব নিতে হয়েছে। তারা নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে। এই সমস্যা মোকাবেলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি চান মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী চীন ও ভারতের হাত বাড়িয়ে দেওয়া অপরিহার্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও ভূমিকা রাখা উচিত। তাদের সবারই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ভূমিকা রাখা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না? আমরা চীন ও ভারতের সঙ্গেও কথা বলেছি। কিন্তু চাপ বাংলাদেশের ওপরই বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত। তাদের দায়িত্ব কেবল ত্রাণ সহায়তায় সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। প্রকৃতপক্ষে, একই ত্রাণ সহায়তা রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার পর সেখানে তাদের আশ্রয় নির্মাণে দেওয়া যেতে পারে। /আরএ Comments SHARES জাতীয় বিষয়: