পাসপোর্ট ছাড়া পাইলট কাতারে, তদন্তে কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ৮, ২০১৯

ডেস্ক: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ফজল মাহমুদের পাসপোর্ট ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনতে কাতারে যাওয়ার ঘটনায় একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার।

পাসপোর্ট ছাড়া কাউকে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সুযোগ না থাকলেও কীভাবে ওই পাইলট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অতিক্রম করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রিপরিষদ গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্তে ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মাৎ নাসিমা বেগমকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। তাদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগও চার সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মোহাম্মদ আজহারুল হককে সভাপতি এবং যুগ্ম সচিব হেলাল মাহমুদ শরীফকে এই কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।

অপর দুই সদস্য হলেন- বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। তদন্তের প্রয়োজনে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে যুক্ত করতে পারবে কমিটি।

সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এ ঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। এছাড়া, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।পাসপোর্ট ছাড়া কাতার যাওয়ায় সেখানকার ইমিগ্রেশন পাইলট ফজল মাহমুদকে আটকে রেখেছে বলে যে খবর বের হয়েছে গণমাধ্যমে তা অস্বীকার করেছেন তিনি। তার দাবি, ‘বিমানবন্দর থেকে হোটেলে আসার সময় ইমিগ্রেশনে আমাকে কোনও ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। অথচ খবরে দেখলাম, আমাকে আটক করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ থেকে কাতারে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট দেখানো প্রসঙ্গে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেন, ‘ঈদের দিন বিকালে আমরা রওনা হই। ঈদের দিন হওয়ায় সবাই ফেস্টিভেল মুডেই ছিলেন। শাহজালালে ইমিগ্রেশনে আমার পাসপোর্ট দেখতে চাইলে এ ভুলটি আর হতো না।

আমি তখনই পাসপোর্ট এনে ফ্লাইটে যেতাম। আসলে আমি যেমন ভুল করেছি, ঢাকার ইমিগ্রেশনও ভুল করেছে।’ তবে, ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযোগ, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় এই পাইলট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেননি। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের পাইলট হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাও তার বিষয়ে ছিলেন নমনীয়।

ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দোষ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ফিনল্যান্ড সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনতে গত বুধবার রাতে বিমানের একটি ফ্লাইটে করে ঢাকা ছেড়ে কাতারের উদ্দেশে রওনা হন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের স্টাফদের জন্য নির্ধারিত হোটেলে যেতে পারেননি তিনি। এরপর কাতার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যদিও ফজল মাহমুদ তাকে আটক বা গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

শুক্রবার বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কিছু সংবাদমাধ্যমে দোহা ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক বিমান পাইলট আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মোটেও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সেখানে কোনো বিমান পাইলট আটক, গ্রেপ্তার বা আটকে দেবার কোনো ঘটনা ঘটেনি।”

বিষয়টি জনমনে ‘বিভ্রান্তি’ দূর করতে পুরো ঘটনার একটি বিবরণ দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “৫ জুন ২০১৯ তারিখে বিমান এর ঢাকা-চট্টগ্রাম-দোহা রুটে বিজি১২৫ ফ্লাইটের অপারেটিং ক্যাপ্টেন হিসেবে ফ্লাইট পরিচালনা করেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। দোহায় অবতরণ করার পর তিনি লক্ষ করেন যে, তার পাসপোর্টটি তার সাথে নেই।

এমতাবস্থায় তিনি ইমিগ্রেশনে না যেয়ে দোহা এয়ারপোর্টে বিমান স্টেশন ম্যানেজার ও ঢাকা অফিসের সাথে যোগাযোগ করেন এবং দোহা এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টের আগে ট্রানজিট হোটেল অরিক্স-এ চলে যান।

“পরবর্তীতে পরদিন অর্থাৎ ৬ জুন ২০১৯ সন্ধ্যায় তার পাসপোর্ট দোহায় প্রেরণ করা হয় এবং তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই কোনো জটিলতা ছাড়াই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দোহা নগরীতে বিমান ক্রুগণের নির্ধারিত হোটেল ক্রাউন প্লাজায় চলে যান। বর্তমানে তিনি উক্ত হোটেলে অবস্থান করছেন।”

পাইলট ফজল মাহমুদ বিমান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে আগামী ১০ জুন ভোর রাতে দোহা থেকে বিজি ১২৬ ফ্লাইট অপারেট করে ঢাকা আসবেন।

এমএম/

Comments