পানছড়ি বাজার বন্ধ রেখেছে উপজাতিরা; ভোগান্তি সাধারণের

প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৯

মো. লোকমান হোসেন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র পানছড়ি বাজার বয়কটের আট মাস পার হলেও আদৌ কোনো সুরাহা হয়নি। গত ১৯ মে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) বাজার বয়কটের ঘোষণা দিলে তা ২০ মে থেকে কার্যকারিতা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্তও বাজারে বিরাজ করছে ভুতুড়ে অবস্থা।

গত তিনদিন ধরে খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া বাজারে কোন মালামাল নেওয়া বন্ধ হয়েছে। কারা বন্ধ করে দিয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অনেক ব্যবসায়ী নাম বলতে অনিচ্ছুক জানান, শনিবার ও মঙ্গলবার ভাইবোনছড়া বাজার একটি আঞ্চলিক সংগঠনের টেলিফোনের মাধ্যমে সব ব্যবসায়ীকে মালামাল নিতে নিষেধ করা হয়েছে।

বর্তমানে ভাইবোনছড়া বাজার এবং পানছড়ি বাজার এলাকার সাধারণ জনগণের মধ্যে হতাশ বিরাজ করছে। কোনো প্রশাসন এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়লেও দোকানের মালামাল নেই। চালের দাম বৃদ্ধি হয়েছে। সয়াবিন তৈল, পেয়াজ, রসুন, আদা ও সব্জি উপজাতিরা নিয়ে আসতে পারছে না। তাদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে।

যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাটে মানুষ শূন্য। কয়েকটি ব্যটারি চালিত যাবাহন দেখা গেলও মানুষ চলাচল তেমন নেই।

খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজার ৮ মাস ধরে বয়কট। সাধারণ মানুষ বাজারে আসতে ভয় পাচ্ছে। মালামালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমদানি ও রপ্তানি হচ্ছে না। ফলে অসহায় হয়ে পড়ছে পানছড়ি বাসি।

রবিবার সাপ্তাহিক বাজারবারে সকল সম্প্রদায়ের মিলনমেলা থাকলেও বর্তমানে ক্রেতাবিহীন দোকানপাটে অলস সময় পার করছে প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকানি। তাছাড়া পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোকজনও তাদের উৎপাদিত ফসলাদি বাজারজাত করতে না পেরে পড়েছেন বিপাকে।

জানা যায়, পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএস এর মধ্যে ভ্রাতিঘাতি সংঘর্ষের জের ও জেএসএস এর কয়েক সদস্য খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজারস্থ শুকতারা বোডিংয়ে অবস্থানের কারণেই বয়কটের ডাক দেয় ইউপিডিএফ।

যার ফলে বেসরকারি এনজিও আশা, ব্র্যাক, পদক্ষেপ, গ্রামীন ব্যাংক থেকে লোন নেয়া ব্যবসায়িরা পরিশোধ করতে পারছে না সাপ্তাহিক কিস্তি। এদিকে মুদি ও কাঁচামাল বিক্রেতারা চড়াদামে বিক্রি করছে নানান পণ্যাদি। ফলে বাজারে বিভিন্ন পন্যের মূল্য এখন ক্রেতার ক্রয়সীমার বাইরে ।

এ ব্যাপারে পানছড়ি বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হেদায়েত আলী তালুকদার জানিয়েছেন, বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। বাজার উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম এ অবস্থার জন্য প্রশাসনকেই দায়ী করেন।

তিনি বলেন, প্রশাসন হস্তক্ষেপ করলে এটা সমাধান করা কোন ব্যাপারই না। খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সহবস্থান নিশ্চিতসহ বিভিন্ন সমস্যাদি সমাধানকল্পে প্রশাসনের সুদৃষ্টি চায় বাজার ব্যবসায়ি ও আপামর জনগন।

এই ভাবে বাজার বয়কট আর কতদিন চলবে? সরজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায় সেখানকার ব্যবসায়িরা হতাশ ও মনমরা। মাথায় হাতদিয়ে বসে থাকতে এক ব্যবসায়ীকে দেখা যায়। অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, বিগত ৮ মাস যাবত পানছড়ি বাজারে কোন মালামাল আনতে দিচ্ছেনা উপজাতিরা।

এই উপজাতি কারা? প্রশাসন একটু যদি নজর দেন তাহলে পানছড়ি বাজারে মালামাল নেওয়ার সুযোগ হবে, আর যদি প্রশাসন না দেখে তাহলে অচিরেই পানছড়ি ও ভাইবোনছড়া বাজার একদম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়তে পারে।

/সিএইচ

Comments