অবশেষে পা ধরে মাফ চেয়ে মাকে ঘরে তুলল তারা

প্রকাশিত: ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১৯, ২০১৯

মোঃ ইলিয়াস আলী, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পুলিশের আন্তরিকতায় ঠাকুরগাঁওয়ে ছেলেদের হাতে মারধরের শিকার সেই মায়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে ১২ দিন পর ঘরে তুলেছে ওই পাষণ্ড তিন ছেলে। এর আগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ৯০ বছর বয়সের বৃদ্ধা মায়ের শেষ সম্বল ২০ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়ে মারধর করে বৃদ্ধা মাকে ঘরছাড়া করেছিল তারা। ছেলেদের মারধরের শিকার হয়ে ওই বৃদ্ধা মা গত ১০ দিন ধরে ভিক্ষা করে খেয়ে সরকারি অফিসের বারান্দায় রাত্রিযাপন করে আসছিলেন।

শুক্রবার (১৭ মে) জুম্মার নামাজের পর উপজেলা পরিষদ মার্কেটের নিচতলায় একটি দোকানে কেঁদে কেঁদে আমাদের প্রতিবেদককে অভিযোগ করেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাঁচ দোয়াল গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দীনের স্ত্রী।

এ নিয়ে কয়েকটি অনলাইন সংস্করণে শুক্রবার রাতে বৃদ্ধা মাকে মারধর করে ঘরছাড়া করল তিন ছেলে শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের পর নজরে আসে ঢাকা মেট্রোপটিলটন পুলিশের উপকমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল ও ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাফুজ মাসুমের। শনিবার (১৮ মে) ভোরে মুঠোফোনে প্রতিবেদকের নিকট বিস্তারিত ঘটনা শুনেন পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা।

বৃদ্ধা মায়ের কষ্টের কথা শুনে থেমে থাকতে পারেননি ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। শনিবার সারাদিন অনেক খোঁজাখুঁজি পর বৃদ্ধা মাসহ বড় ছেলে খলিলুর রহমান ও ছোট ছেলে খাজিজুল রহমানকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ৷

সকালে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার মানবিক উদ্যোগে শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই ওই বৃদ্ধা মাকে ঘরে তুলেছে পাষণ্ড তিন ছেলে। মায়ের পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়ে আগামী সোমবার লাহিড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ২০ শতক জমি ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে জমি লিখে নেওয়া ছোট ছেলে খাজিজুল রহমান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নির্দেশনা পাওয়ার পর বালিয়াডাঙ্গী থানার এসআই আমজাদ হোসেন ও হাবিবুর রহমান হাবিবের শনিবার বিকালে ওই মায়ের বড় ছেলে খলিলুর রহমান ও ছোট ছেলে খাজিজুল রহমানকে বালিয়াডাঙ্গী থানায় নিয়ে আটক করে নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় গেল এক মাস হলো ওই মায়ের ২০ শতক জমি লিখে নিয়ে ছোট ছেলে খাজিজুল রহমান এবং তাকে মারধর করেছে বলে স্বীকার করে। এমন কথা শুনে এসআই আমজাদ হোসেন ওই ছেলেকে মারধর করার কথা বললে পুলিশের হাতে ধরে মারধর করতে নিষেধ করেন ওই মা।

ওই মায়ের সামনে ছেলেদের মারধর সহ্য করতে পারবেন না বলে পুলিশকে নিজের ছেলেদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন ওই বৃদ্ধা মা। পুলিশ ও প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে মায়ের পা ধরে ক্ষমা চান ছোট ছেলে খাজিজুল ইসলাম। সেই সাথে আগামী সোমবার লাহিড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করে নেয়া ২০ শতক জমি রেজিস্ট্রি এবং নিয়মিত মায়ের দেখাশুনা করবে এমন শর্তে বৃদ্ধা মাকে পুলিশ দুই ছেলের হাতে তুলে দেন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ওই বৃদ্ধা মাকে ঈদের শাড়ী, খাদ্য সামগ্রী ও নগদ টাকা তুলে দেয়া হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাফুজ মাসুম বলেন, পুলিশের হস্তক্ষেপে বৃদ্ধা মাকে ঘরে তুলেছে তিন ছেলে। সেই সাথে আগামী সোমবার জমি ফেরতের ব্যবস্থা করে দিয়েছে পুলিশ।

এসকে/

Comments