নুসরাতের অবস্থার উন্নতি; শম্পাকে আটক করেছে পুলিশ, মামলার এজহারে পরিবর্তন

প্রকাশিত: ৭:২৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০১৯

একুশ ডেস্ক: সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে লাইফ সাপোর্টে রেখেই ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুরসাত জাহান রাফির অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তার অস্ত্রপাচার করা হয়।

এদিকে নুসরাতের অবস্থা গতকালের চেয়ে আজকে ভালো বলে জানিয়েছেন নুসরাতের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান প্রফেসর ডা. আবুল কালাম।

ডা. আবুল কালাম জানান, আমরা সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের রিপ্লাই পেয়েছি। তাদের সাথে পরমার্শ করেেই আজকে তার অপারেশন করা হয়েছে। পাশাপাশি এখন থেকে তার চিকিৎসার আপডেট রিপোর্ট নিয়মিত সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে এসব তথ্য জানান নুসরাতের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের এই প্রকল্প পরিচালক।

তিনি আরো বলেন, আজকের অপারেশনটা গতকাল করার কথা ছিলো। যেহেতু ওর অবস্থার অবনতি হয় তাই আমরা ভেন্টিলেশনে নিয়ে আজ অপারেশন করি। তার পরিবারও আমাদের সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে একমত হয়েছে। মেয়েটির অবস্থা কালকের চেয়ে আজকে বেটার।

ডা. আবুল কালাম বলেন, আমরা সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও আমাদের মেডিকেল বোর্ডের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেন। উভয় সিদ্ধান্তে নুসরাতের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।

নুসরাতের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো প্রতিদিন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালকে মেইল করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কোনো কিছু মনিটর করতে হলে ওরা আমাদের মেইলে জানাবে। প্রতিদিন তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকবে।

এ ছাড়া ১৫ তারিখ ওদের সঙ্গে আমাদের একটা প্রোগ্রাম আছে এখানে। তারা বাংলাদেশে পাঁচ দিন থাকবে। সে পর্যন্ত যদি মেয়েটি ভালো থাকে তাহলে তাকে ওরা দেখবে।

এদিকে, নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়া চারজনের একজন ‘শম্পা’কে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে সোনাগাজীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চট্রগ্রাম বিভাগীয় ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক- ‘শম্পা’কে আটকের কথা জানিয়েছেন।

হাসপাতালে দেয়া নুসরাতের জবানবন্দিতে বলেছে বোরকা পরিহিত চারজন মিলে তার গায়ে আগুন দেয়। তাদের কাউকে সে চিনতে পারেনি। তবে তাদের মধ্য থেকেই একজন আরেকজনকে শম্পা বলে ডাক দেয়।

সেই সূত্রে অন্যদের চেনা বা নাম জানা না গেলেও শম্পা নামের একজন ছিলো এটা নুসরাতের ব্ক্তব্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ নুসরাতকে আটক করেছে।

ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, শম্পা বা আরেকটা নাম আছে আমরা শুনেছি। নামটা কিন্তু কনফার্ম না। তারপরও ওই নামের মেয়েটিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। তাকে আমরা তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

এদিকে শম্পার ভাই মামলার পূর্বের এজহার পরিবর্তন করে সোমবার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও বোরকা পরিহিত ৪ জনসহ তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

নতুন এজহারে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা ছাড়াও সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর মকসুদুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের এর নাম উল্লেখ্য করে মামলা করেন।

উল্লেখ্য, ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তার মায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর অধ্যক্ষের পক্ষে-বিপক্ষে, মুক্তি-শাস্তির দাবি উঠে। অধক্ষ্যের পক্ষের লোকেরা নুসরাত ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নিতে বলে।

এরই প্রেক্ষিতে শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান ওই ছাত্রী। এসময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে রাফি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যায়।

সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচ জন ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাকে ফেনী থেকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

নুসরাতের স্বজনদের অভিযোগ, শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা তার অনুসারীদের দিয়ে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালান।

/আরএ

Comments