নুসরাতের খোঁজ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী; দোষীদের গ্রেফতার ও চিকিৎসা ব্যবস্থার নির্দেশনা

প্রকাশিত: ১:২৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০১৯

ডেস্ক: ফেনীর সোনাগাজীতে কেরোসিনের আগুনে দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে সুস্থ করতে চিকিৎসকদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

গতকাল (রোববার) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ ও বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। নুসরাত ঢামেক বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। সামন্ত লাল সেন আরও জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত শনিবার মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে দগ্ধ নুসরাতের চিকিৎসার জন্য গতকাল (রোববার) আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিকেলে বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নুসরাতের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যে কোনো সময় যে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। গতকাল সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল পারভেজ জানান, শনিবারের ঘটনায় মাদ্রাসা বন্ধ রাখা হয়েছে। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মাদ্রাসায় কোনো ক্লাস হবে না। শুধু পরীক্ষা চলবে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত। তাদের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার উত্তরচর চান্দিয়া গ্রামে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে নুসরাত তৃতীয়। গতকাল রাতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দগ্ধ নুসরাতকে দেখতে যান।

নুসরাতের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম বলেন, আগুনে নুসরাতের শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। পুড়েছে তার শ্বাসনালিও। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আল্লাহর ওপর সব ভরসা।

বার্ন ইউনিটের সামনে নুসরাতের মাদ্রাসা শিক্ষক বাবা এ কে এম মুছা মানিক জানান, আইসিইউর ভিতরে আমার মেয়ে অনেক কষ্ট পাচ্ছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছে। সবার কাছে মেয়েটির জন্য দোয়া চাই। আর যারা আমার মেয়ের এতবড় সর্বনাশ করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, গতকাল সোনাগাজী থানার তদন্ত কর্মকর্তা নুসরাতের জবানবন্দি নিয়ে গেছেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া অবস্থায় নুসরাত একটি অডিও রেকর্ডে জানায়, সে সকালে আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায়। মাদ্রাসা কেন্দ্রে পৌঁছলে এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারছে বলে তাকে ডেকে নেয়। সেখানে আরও চার-পাঁচজন মুখোশধারী ছাত্রী ছিল। তারা বলে অধ্যক্ষর নামে যে অভিযোগ করেছিস তা মিথ্যা বল। আমি বলি না। আমি যা বলেছি সব সত্যি। তারা বলে তোকে এখনই মেরে ফেলব। আমরা তোর সব খবর নিছি। তোর প্রেম সম্পর্কিত সব খবর আমাদের কাছে আছে। আমি বলি, আমি সব সত্যি বলেছি। আমি শিক্ষকদের সম্মান করি। কিন্তু শিক্ষক আমার গায়ে হাত দিয়েছে তার প্রতিবাদ করেছি। সঙ্গে সঙ্গে তারা আমার হাত-পা ধরে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।

নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ, গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে নুসরাতকে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের মায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ এখন কারাগারে। এরই জের ধরে তার গায়ে আগুন ধরানো হতে পারে। নুসরাতের বাবা-মা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার এবং নুসরাতের সুচিকিৎসার দাবি করেছেন।

এদিকে সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন জানান, মাদ্রাসাটি পুলিশ পাহারায় থাকায় গতকাল কোনো ক্লাস হয়নি। এ ঘটনায় মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন ও ছাত্র আরিফুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।

জানা গেছে, গত শনিবার মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে বান্ধবীকে মারধর করা হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে সেখানে যায় নুসরাত। যাওয়ার পরই তাকে ঘিরে ধরে বোরকা পরা চার-পাঁচজন ছাত্রী। তারা নুসরাতকে শাসাতে থাকে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কেন মিথ্যা অভিযোগ এনেছ। নুসরাতের জবাব ছিল, তার অভিযোগ সত্য এবং শেষ-নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত এর প্রতিবাদ করে যাব। এ সময় ওই ছাত্রীদের কেউ তার হাত, কেউ তার পা ধরে এবং গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

২৭ মার্চ নুসরাতকে নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদদৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। অন্যদিকে আরেকটি অংশ অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। সূত্র: বিডি প্রতিদিন।

/আরএ

Comments