ডিমলায় অবৈধ বোমা মেশিনে পাথর উত্তোলন বন্ধে সাংবাদিকদের মানববন্ধন

প্রকাশিত: ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০১৯

নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: নীলফামারীর ডিমলায় নদী থেকে অবৈধ বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ডিমলা প্রেসক্লাব।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর আশপাশে অবৈধ বোমা মেশিন (ড্রেজার) দিয়ে অবাধে পাথর উত্তোলন চলছে প্রতিদিন। দিন-রাত সব সময় ভারী মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়।

অভিযোগ ওঠছে প্রতিনিয়ন অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হলেও প্রশাসন নিরর ভুমিকা পালন করছে।। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ ও পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে বুধবার দুপুরে ডিমলা প্রেস কাবের উদ্দ্যেগে মানববন্ধন করা হয়।

ডিমলা সদরের সুটিবাড়ী মোড়ে স্মৃতি স্তম্য চত্তরে ঘন্টাব্যাপি এ মানববন্ধনে সাংবাদিক ছাড়াও সর্বস্তরের জনসাধারন অংশ গ্রহন করেন। তারা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করা জানান।
অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও স্থানন্তরিত করার মেশিন ও ট্রাক্টরের শব্দে এলাকাবাসীরা চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পাথর উত্তোলনকারীদের প্রভাবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকায় বসবাসরত সাধারন মানুষজন। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আইন মানছেন না কেউ। এতে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকা ও নদীর বিভিন্ন স্থানে অনুমতিহীন অবৈধভাবে বোমা মেশিন বসিয়ে মাটির তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনে তিস্তা ব্যারাজ ও নদী সংরনের নির্মিত কোটি কোটি টাকার অবকাঠামো হুমকীর মুখে পড়েছে।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখে, ডিমলা প্রেসকাবের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম লিটন,সাধারন সম্পাদক সহিদুল ইসলাম, তিস্তা নিউজের সম্পাদক সরদার ফজলুল হক,সাংবাদিক আলতাফ হোসেন চৌধূরী, বাসদ ইয়াছিন এ্যাড শ্যামল গ্রæপ কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি ও তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডাঃ সৈয়দ লিটন মিয়া তালুকদার, ওয়াকাস পাটির নেতা ও অবৈধ পাথর উত্তোলনকারী পক্ষে মহামান্য হাইকোটে রিটকারী গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

বক্তরা অবিলম্বে উপজেলার ভু-গর্ভস্থ ও তিস্তা নদী থেকে সব ধরনের বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ করা, বালু পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক আইনানুগ ব্যবস্থা, বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত পাথর স্তুপ জব্দ করা ও এসব এলাকায় সকল সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবী করা হয়েছে।

তারা বলেন, গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল হকের নেতৃত্বে শতাধিক বোমা মেশিন বসিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যানের পুত্র আলম ও রাজা এসব মেশিনে চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল হক প্রতিটি মেশিন বাবদ ১৫ হাজার করে টাকা উত্তোলন করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেন।

ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের গোলাম মোস্তফা জানান অবৈধভাবে বোমা মেশিন দিয়ে এসব পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমি গত বছর হাইকোটে মামলা করি। হাইকোট আমার মামলা আমলে নিয়ে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনে নিষেজ্ঞাধা জারী করে দেয়। কিন্তু এখন দেখছি হঠাৎ করে একটি প্রভাবশালী মহল জোট বেধে সামসুল চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুনরায় বোমা মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন শুরু করেছে। যা উচ্চ আদালতের নিষেজ্ঞাধাকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে।

প্রভাবশালীদের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন প্রভাব বিস্তার করে গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ডিমলার ইউএনও, থানার ওসিসহ বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এতে জমিও ভেঙে যাচ্ছে। ডিমলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তবিবুল ইসলাম বলেন, খনিজ স¤পদ মন্ত্রণালয় থেকে এখানে কোন কোয়াড়ি দেওয়া হয়নি। অথচ ভারী মেশিন ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন চলছে। এতে করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে, হুমকির মুখে পড়েছে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি।

গয়াবাড়ী বোমা মেশিন মালিক আব্দুর রাজ্জাক রাজা বলেন, আমরা গয়াবাড়ী সামসুল চেয়ারম্যানকে দিয়ে বিভিন্ন সাইড ম্যানেজ করে মেশিন বসিয়ে পাথর তুলছি। গয়াবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামছুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এলাকাবাসী জানায় তার দুই ছেলের নেতৃত্বে ১০টি বোমা মেশিন চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান গত দুই দিন ধরে শতাধিক বোমা মেশিন চলছে।

এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, ডিমলা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রতিনিয়িত বিজিবি ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

গয়াবাড়ী ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কিছুদিন যাবত সামসুল চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এখানে সামসুল চেয়ারম্যানের দুইপুত্র আলম ও রাজা পাথর উত্তোলন করছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৫ দফা লিখিত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

ডিমলা থানার ওসি মফিজ উদ্দিন শেখের সঙ্গে কথা বললে তিনি বোমা মেশিনে পাথর উত্তোলন বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।

/এসএস

Comments