নয়ন বন্ডের ‘বাসর ঘরে’ লেখা ‘এন প্লাস এম’ নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১:৪৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০১৯ বরগুনা সদরে রাস্তায় ফেরে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার মূল নায়ক সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড। সে এই হত্যার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। সে তার লোকজন নিয়ে রিফাতে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। নয়ন বন্ড কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। সে ছিল হত্যা মামলার প্রধান আসামি। নয়ন বন্ডের মৃত্যুর পর এবং মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে গ্রেফতাতের পর এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে গণমাধ্যমের কাছে। রিফাতের স্ত্রী মিন্নি সঙ্গে নয়নের এক সময়ের সম্পর্কের বিষয়টিও উঠে আসছে। নয়নের মায়ের দাবি মিন্নি রিফাতকে বিয়ের আগে নয়নকে বিয়ে করেছিল। আর নয়ন জেলে থাকা অবস্থায় মিন্নির বাবা তাকে রিফাতের সঙ্গে বিয়ে দেয়। এ নিয়েই নয়ন ও রিফাতের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। তবে নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের বিষয়টি এখনও রহস্যাবৃত। মিন্নি বারবারই বলছেন, নয়নের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি। নয়নের বাড়িতে থাকা বা সেখানে তার যাওয়া-আসার তথ্য সঠিক নয়। কিন্তু নয়নের মা দাবি করছেন, মিন্নি তার ছেলের বউ হিসেবেই বাড়িতে অবাধে যাতায়াত করত। রীতিমতো তার বাড়িতে মিন্নি ছোটখাটো সংসারও গড়ে তুলেছিল। মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের সম্পর্কের নানা স্মৃতিও দেখান নয়নের মা। বরগুনা সরকারি কলেজ ঘেঁষে নয়ন বন্ডের বাড়ি। টিনের চালা দেয়া তিনটি ঘর। এর একটিতে নয়ন মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করত। সেখানে রাত-বিরাতে অনেকের অবাধ যাতায়াত ছিল। ওই ঘরে মিন্নিরও একসময় যাতায়াত ছিল বলে জানান নয়নের মা। বলেন, এই মিন্নির জন্য আমার ছেলেটা শেষ হয়ে গেল। তিনি বলেন, আসেন এই ঘরে আসেন। এখানে নয়ন থাকত। পুলিশ এখান থেকে মিন্নির ব্যবহৃত অনেক কিছুই নিয়ে গেছে। তার পরও কিছু কিছু জিনিস এখনও পড়ে আছে। দেখা গেল, নয়নের ঘরে ঢোকার দরজার ওপর বড় করে লেখা ‘বাসর ঘর’। দেয়ালের কয়েকটি জায়গায় ইংরেজি হরফে লেখা ‘এন প্লাস এম’। অর্থাৎ নয়ন যোগ মিন্নি। আরেক জায়গায় লেখা ‘আই লাভ ইউ এন প্লাস এম।’ দেয়ালের আরও কয়েকটি লেখা কে বা কারা কালো কালির স্প্রে দিয়ে মুছে দিয়েছে। ঘরের আসবাবপত্র প্রায় সবই ভাঙা। নয়নের মা বলেন, ঘটনার দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না। নয়নকে ধরার জন্য পুলিশ বাড়িতে এসে কিছুই রাখেনি। সব ভেঙে দিয়েছে। ভাঙা ড্রেসিং টেবিল দেখিয়ে তিনি বলেন, এটার কাচ পুলিশ ভেঙে দিয়েছে। এই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মিন্নি অনেক সাজগোজ করেছে। ভাঙা ড্রয়ার খুলে তিনি বের করেন একটি ফেস পাউডারের খালি কৌটা। নয়নের মা বলেন, কৌটাটা পড়ে আছে। পাউডারসহ ওপরের অংশ নিয়ে গেছে পুলিশ। ঘরের এক কোণে একটা প্লাস্টিকের ফুলসহ ফুলদানি রাখা। র্যাপিং পেপার দিয়ে মোড়ানো। সেটা দেখিয়ে তিনি বলেন, নয়নের জন্মদিনে এটা মিন্নি দিয়েছিল। ওই জন্মদিনের ভিডিও নাকি মোবাইলে ছাড়া হয়েছে। ইউটিউব না কিসে যেন এখনও আছে। সবাই দেখেছে। এ-ঘর, ও-ঘর ঘুরিয়ে একটা ভাঙা কম্পিউটার টেবিলের সামনে নিয়ে তিনি দেখান কয়েকটি মোবাইল ফোনের ভাঙা টুকরো। যেগুলোর খাপটাই শুধু আছে। মাদারবোর্ড ও সিমকার্ড নিয়ে গেছে পুলিশ। নয়নের মা বলেন, পুলিশ যে মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে গেছে তাতে নয়নের সঙ্গে মিন্নির অনেক ছবি ছিল। এরপর নিজের হাতে থাকা মোবাইল ফোনের গ্যালারি খুলে কয়েকটি ছবি দেখিয়ে বলেন, মিন্নি প্রায় প্রতিদিনই এ বাড়িতে চলে আসত। কলেজের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষা একটা সরু গলি দেখিয়ে তিনি বলেন, ওই গলি দিয়ে সে হেঁটে চলে আসত। গলিতে দাঁড়ানো মিন্নির হাস্যোজ্জ্বল ছবিও দেখান তিনি। আরেকটা ছবিতে নয়নের সঙ্গে মিন্নির ভিডিও চ্যাটের স্ক্রিন শট দেখিয়ে নয়নের মা বলেন, তারা তো সব সময় ভিডিওতে কথা বলত। এই দেখেন ছবি। এতে দেখা যায়, নয়নের চ্যাটিং মেসেঞ্জার প্রোফাইলে মিন্নির ছবি দিয়ে লেখা ‘বউ’। আর মিন্নির চ্যাটিং প্রোফাইলে লেখা এএস মিন্নি অর্থাৎ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, নয়নের ঘরে সাদা দেয়ালে লাল রং দিয়ে এক জায়গায় লেখা ০০৭ (নয়নের সন্ত্রাসী গ্রুপের সাংকেতিক নাম)। সাহিদা বেগম বলেন, নয়ন কেন তার নামের সঙ্গে বন্ড বা ০০৭ সেভেন লিখত তা আমি জানি না। সে বেঁচে থাকলে জিজ্ঞেস করতাম। কিন্তু তাকে তো মেরেই ফেলল। নয়নের মা আরও বলেন, নয়নকে মেরে ফেলল। কিন্তু যারা তাকে বন্ড বানাল তাদের কি কিছুই হবে না। যারা তাকে নয়ন থেকে নয়ন বন্ড বানিয়েছে তাদেরও ধরা হোক। যাতে আর কোনো নয়ন বিপথগামী সন্ত্রাসী বা বন্ড না হতে পারে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নয়নের বাড়ি থেকে অন্তত ২০ ধরনের আলামত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে নয়নের সঙ্গে মিন্নির ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের বেশকিছু ছবি, মিন্নির ব্যবহৃত লিপস্টিক, চিরুনি, চিরুনিতে আটকে থাকা মিন্নির চুল, কামিজ, চুলের ক্লিপ, ফেসপাউডার, চোখের ভ্রূতে ব্যবহৃত আই ব্রো, সিমকার্ড এবং কয়েকটি মোবাইল ফোনসেট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরগুনা পুলিশের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, নয়নের সঙ্গে মিন্নির ঘনিষ্ঠতা ও বিয়ে প্রমাণ করতেই এসব আলামত জব্দ করা হয়েছে। নয়নের বাড়ির চিরুনিতে আটকে থাকা মিন্নির চুল ও তার ব্যবহৃত কয়েকটি জিনিস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হবে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, মিন্নি যেহেতু বারবারই নয়নের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন তাই কিছু অকাট্য প্রমাণের প্রয়োজন। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়নের সঙ্গে মিন্নির ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করা গেলে রিফাত হত্যার জট অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। নয়নের বাড়ি থেকে আলামত সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, আমরা বেশকিছু আলামত নয়নের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করেছি। এগুলোর মধ্যে একটি কামিজ, মিন্নির লেমিনেটিং করা একটি ছবি, চুল পেঁচানো চিরুনি ও এম প্লাস এন খোদাই করা সামুদ্রিক ঝিনুক রয়েছে। এই ঝিনুকটি মিন্নি ও নয়ন কুয়াকাটা বেড়াতে গিয়ে সংগ্রহ করেছিলেন। মামলার আলামত হিসেবে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নয়নের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে চান না মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর। তিনি যুগান্তরকে বলেন, নয়নের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের বিষয়টি সাজানো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ রিফাতের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে গোপনে দেয়া হয়নি। বিয়েতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় হাজার লোককে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। স্থানীয় সাংবাদিক, রাজনীতিক থেকে শুরু করে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিয়েতে এসেছিলেন। মিন্নির বাবা বলেন, এতগুলো মানুষ দাওয়াত খেতে এলো কই কেউই তো বলেনি নয়নের সঙ্গে তোমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে, এখন আবার কেন বিয়ে দিচ্ছ। রিফাতের বাবাও তো বলেননি আমার মেয়ের আগেই বিয়ে হয়েছে। তাছাড়া আমি তো রিফাতের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাইনি। রিফাতের পরিবারই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। কারণ রিফাত ও মিন্নি একে অপরকে পছন্দ করত। আমি প্রথমদিকে এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। মিন্নির বাবা আরও বলেন, আসলে মিন্নিকে জেলে ঢোকানোর জন্য সুনাম দেবনাথ (স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে) সর্বপ্রথম মিন্নির বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন। নয়নের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়েছে বলে তিনি ফেসবুকে লেখেন। মিন্নিকে তিনি বিতর্কিত করতে চান। এর কারণ হল, মামলার এক নম্বর সাক্ষী মিন্নি। সে ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। সে যদি বাইরে থাকে তবে রিফাত হত্যার আসামিদের সবার বিরুদ্ধে সে সাক্ষী দেবে। তাহলে বিচারে তাদের শাস্তি নিশ্চিত। তাই যাতে মিন্নি সাক্ষী না দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিন্নিকে গ্রেফতার করে সরিয়ে দিলেই মামলা শেষ। কারণ বিচার হয় সাক্ষীর ভিত্তিতে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন, যারা রিফাতকে খুন করেছে তারা তো সবাই সুনাম দেবনাথের লোকজন। নয়ন বন্ড শম্ভুর লোক, এটা তো শহরের সবাই জানে। এদিকে নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে- প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও স্থানীয়রা সেটি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, নয়ন বন্ডকে ‘মেরে ফেলা’ হয়েছে। নয়ন গ্রেফতার হলে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যেত- এ কারণেই তাকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় পুলিশের অনেক অসাধু কর্মকর্তার কুর্কীতিও সামনে চলে আসত নয়ন বেঁচে থাকলে। স্থানীয়রা বলছেন, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সঙ্গে পূর্ব সম্পর্কের জেরে নয়ন বন্ড রিফাত শরীফকে খুন করেছে এটি যেমন সত্য, ঠিক তেমনি সত্য হচ্ছে- নয়নের ‘বন্ড’ হয়ে উঠার পেছনে রাজনীতিবিদরাই দায়ী। নয়নের একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নূর হোসেন জানান, বাবার মৃত্যুর কিছু দিন পর প্রেমে বিচ্ছেদ হয়। এর পর নয়ন গাঁজা সেবন শুরু করেন। ২০১১ সালে মাধ্যমিক পেরোনোর আগেই সে ইয়াবা ও হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়ে। তখন মাদকের টাকা জোগাতে মানুষের মুঠোফোন, গহনা ছিনিয়ে নেয়ার মতো ছিঁচকে অপরাধ শুরু করে। মাদকের টাকার জন্য নয়নের এমন অপরাধ দিন দিন বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালের মধ্যে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা হয়। ভুক্তভোগীরা তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে নয়নের বিষয়ে অভিযোগ করতে শুরু করেন। নয়নও তখন রাজনৈতিক আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেন। একপর্যায়ে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুরাদ হোসেইনের হাত ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয় নয়নের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর সুনাম দেবনাথ এবং তার চাচাতো শ্যালক শাওন তালুকদার ও অভিজিৎ তালুকদারের সঙ্গে নয়নের সখ্য গড়ে ওঠে। অভিজিৎ ও নয়ন একসঙ্গে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয় তখন বিভিন্ন ছাত্রাবাসে গিয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়া, চাঁদাবাজি ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়া ছিল তাদের নিয়মিত কাজ। তবে সুনাম দেবনাথ বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। পুলিশের সঙ্গে ছিল নয়নের নিত্য ওঠবস। শহরের বাসিন্দারা এমনও বলছেন, নয়ন চাইলে যে কাউকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি বা গ্রেফতার করাতে পারত। নয়ন কাজ করত পুলিশের বিশ্বস্ত সোর্স হিসেবে। সন্ত্রাসের পাশাপাশি নারী নেশায় বুঁদ ছিল নয়ন। নয়ন বন্ডের হাতে ঠিক কতজন তরুণীর সর্বনাশ হয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই পুলিশের কাছেও। তবে নয়নের ‘বিশেষ কক্ষ’ থেকে উদ্ধার একটি ল্যাপটপে বহু পর্নো ভিডিও পাওয়া গেছে। কয়েকটি আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পর্নো ভিডিওতে নয়ন বন্ডের সঙ্গে একাধিক তরুণীর বিশেষ মুহূর্তের দৃশ্য রয়েছে। একেক দিন একেক তরুণী নিয়ে সে যে ফুর্তিতে মেতে উঠেছিল তা স্পষ্ট। পুলিশের সূত্র বলছে, নয়ন বন্ডের ওই বিশেষ কক্ষের গোপন জায়গায় সুকৌশলে আইপি ক্যামেরা (ইন্টারনেট ক্যামেরা) বসানো থাকত। বিশেষ উদ্দেশে নয়ন বন্ড যাদের ওই কক্ষে আনতেন তারা কেউ ক্যামেরার অস্তিত্ব টের পেতেন না। একবার নয়নের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়ার পর ওই মেয়ের আর রক্ষা ছিল না। ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বারবার কিশোরী- তরুণীদের ব্যবহার করত সে। অনেক তরুণী নয়নের হাত থেকে বাঁচতে কলেজ ছাড়তে পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন। অনেকে আবার নয়নের চাহিদামতো মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। পুলিশের হাতে এমন অন্তত ১২ তরুণীর তথ্য আছে বলে জানা গেছে। নয়ন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কে বা কারা এসব ভিডিও ছড়াচ্ছে তার সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ। নয়ন বন্ডের বাড়ি বরগুনা শহরের ডিকেপি রোডের মাঝ বরাবর একটি সরু গলির শেষ প্রান্তে। বাড়ির সামনে অনেকটা জায়গা খালি। বাড়ি নির্মাণের জন্য সম্প্রতি সেখানে অনেক ইট এনে রাখা হয়েছে। নয়নের বাড়ির মূল দরজার পাশেই একটা ছোট্ট বৈঠক ঘর। নয়ন সেখানেই থাকত। গভীর রাত পর্যন্ত ঘরের দরজা খোলা থাকত। সারা দিন এখানে-সেখানে ঘোরাঘুরির পর গভীর রাতে বাড়ি ফিরত। রাত ১২টার পর তার কক্ষে লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যেত। আসতেন পুলিশের সদস্যরাও। প্রতিবেশীরা বলছেন, পুলিশের কয়েকজন অসাধু সদস্য মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা নয়নকে ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা চালিয়ে গেছে। শহরের অনেকেই মাদকের সঙ্গে যুক্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের চেনে- জানে। কিন্তু কেউ-ই মুখ খুলতে নারাজ। শহরের বাজার রোডের আরেক বাসিন্দা যুগান্তরকে বলেন, নয়নের মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত অনেক তরুণীকে পরে পুলিশের মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত হওয়ার কথা শোনা গেছে। বিনিময়ে পুলিশের উদ্ধার করা মাদকের ভাগ পেত নয়ন। বরগুনা পুলিশের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, নয়নের শোবার ঘর থেকে যে ল্যাপটপটি উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে কয়েকশ’ নীল ফিল্ম রয়েছে। স্থানীয় অনেক তরুণী যে তার শিকারে পরিণত হয়েছেন ল্যাপটপের ওই ভিডিও-ই তার প্রমাণ। জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এসব ভিডিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। Comments SHARES সারাদেশ বিষয়: