ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ঘন্টায় ভর্তি ৬২ জন

প্রকাশিত: ১০:১৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০১৯
ডেঙ্গু আতঙ্কে দেশবাসী। আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহর থেকে শহরে। নিস্তার পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষও। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ৫০টিরও অধিক জেলা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলে এ পর্যন্ত খবর মিলেছে । গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার- বুধবার) শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৭৭  জন। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ৬২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯২৬ জন।
গতকাল মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ১৩৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সে রেকর্ড ভেঙে তা হলো নতুন রেকর্ড ১ হাজার ৪৭৭ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালেই ভর্তি হন ৭৪৬ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থাপিত ডেঙ্গু-সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বুধবার বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ছবি সময়ের আলো

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪৯ ডেঙ্গু রোগী। তবে গেল ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি স্বাস্থ্য অধিদফতরের।

নতুন আক্রান্ত নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১৮৩ জনে। আগের দিন ১৫ হাজার ৩৬৯ জনের ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।

বাংলাদেশের ইতিহাসে গত বছর ২০১৮ সালে রেকর্ডসংখ্যক ১০ হাজার ১৪৮ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। চলতি বছরের (২০১৯) এখনও পাঁচ মাস বাকি থাকতেই আজ (৩১ জুলাই) পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রেকর্ডসংখ্যক ১৭ হাজার ১৮৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন। শুধু চলতি জুলাই মাসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রায় ১৫ হাজার (১৪ হাজার ৯৯৬ জন) ডেঙ্গু রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গু প্রসঙ্গে আদালত

তিন জেলা ছাড়া সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এখন একেবারে শেষ পর্যায়ে সিটি কর্পোরেশন নড়ে চড়ে বসলেন। কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ে আমরা ফেব্রুয়ারিতে সতর্ক করেছিলাম। দুই সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের ডেকে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা গা (আমলে নেননি) করেননি। ২-৩ জন মরার পর ভাসা ভাসা কথা বললেন। কিন্তু এখন তো সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হয় ।

বিচারদের নিরাপত্তা নিয়ে মশা নিধনের প্রসঙ্গ টেনে বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালত বলেন, প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেছেন। তাকে সেখান থেকে নির্দেশনা দিতে হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীরা কী করছেন? তাদের বেতন-ভাতা-গাড়ি সবই জনগণের করের টাকায়। কিন্তু জনগণ সেবা পাচ্ছে না। কথা বললে তো বলবেন বেশি বলছি। প্রশাসন যেখানে ব্যর্থ হচ্ছে জুডিশিয়ারি সেখানে হস্তক্ষেপ করছে। ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার মশা রোধের বিষয়ে গ্রহণ করা পদক্ষেপ যথাযথ হচ্ছে না বলেই রাজধানীসহ সারা দেশে মশাবাহিত জ্বর বেড়েছে, তাই ডেঙ্গু নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে।

মৃতের সংখ্যা  নিয়ে লুকোচুরি

কয়েক দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ তথ্য, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুসারে গতকাল পর্যন্ত আটজন মৃতের কথা বলা হলেও আজ (৩১ জুলাই) মৃতের সংখ্যা ১৪ বলে জানিয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। আইইডিসিআর এর তথ্য অনুসারে ১৪ জন মৃতের মধ্যে এপ্রিলে দুজন, জুনে দুজন ও চলতি জুলাই মাসে ১০ জন মারা গেছেন।
সারাদেশের অবস্থা
মঙ্গলবার দেশের ৬৩টি জেলায় ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যেখানে আগের দিনও ৫০ জেলায় ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছিল তারা। এখন পর্যন্ত নেত্রকোণা জেলায় কোনো আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৪৯। ঢাকা বিভাগে ১১২, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৬, খুলনা বিভাগে ১০৮, রংপুর বিভাগে ৩১, রাজশাহী বিভাগে ৬১, বরিশাল বিভাগে ২২, সিলেট বিভাগে ২৯ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৮০ ভর্তি হয়েছেন।

বিশ্ব গণমাধ্যমে ডেঙ্গু

গতকাল সিএনএন  এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০০০ মানুষ নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে যাদের বেশির ভাগই শিশু। বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা একে ভয়াবহতার রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ বছর জানুয়ারি থেকে এতে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ৮ জন মারা গেছেন। তবে বাংলাদেশি মিডিয়ার হিসেবে এ সংখ্যা বুধবার পর্যন্ত ৫২ ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর এখন পর্যন্ত মশার কামড় থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩৬০০ মানুষ। এর মধ্যে ৮৩৪৮ জন অথবা অর্ধেকেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছেন জুলাই মাসে। জুনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৮২০ জন। মে মাসে ১৮৪ জন। সে তুলনায় জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের
সারাদেশে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গুকে মানবিক বিপর্যয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা অনেক শত্রুকে পরাজিত করেছি, ডেঙ্গুকেও পরাজিত করব। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে জয়ী হবই, ইনশাল্লাহ।

বুধবার রাজধানীর জিগাতলায় আওয়ামী লীগের তিন দিনের পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণকে আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমরা এই এটা নিয়ন্ত্রণে আনবোই। শেখ হাসিনার নির্দেশ, ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ।

Comments