থেমে নেই শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্য, টাকা ফেরত পেতে মরিয়া ঘুষদাতা

প্রকাশিত: ৪:১৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের বাঘারপাড়ায় আলোচিত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্য থেমে নেই। আবারও বিভিন্ন কৌশলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে জিম্মি করে জমি বিক্রি করিয়ে ঘুষ আদায় করছেন এই কর্মকর্তা। ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে ভুক্তভোগী এক শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত চার মাস আগে উপজেলার ইন্দ্রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ তেজারত পরিদর্শনে যেয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ১ লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। নিরুপায় হয়ে প্রধান শিক্ষক নিজের জমি বিক্রয় করে ৩০ হাজার টাকা ওই কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন। দাবীকৃত টাকা না দিলে বিভাগীয় মামলার ভয় দেখান।

অভিযোগকারী ইন্দ্রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, ঘুষের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। আগামী ১ আগষ্ট নির্বাহী অফিসার শুনানি গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

বিভিন্ন অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, শিক্ষা কর্মকর্তা ১১ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে বাঘারপাড়ায় যোগদানের পর থেকে প্রতিনিয়ত ঘুষ আর অনিয়মের মাধ্যমে অফিসটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। এমন কোনো কাজ নেই তিনি করেননি।

“অফিস ফাঁকি তার রুটিন মাফিক কাজ, নিজ অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের গায়ে হাত তুলেছেন, এন সি টিবির পুরাতন বই রাতের আধারে চুরি করে বিক্রয় , মা সমাবেশের টাকা আত্মসাৎ,বিজ্ঞান মেলার টাকাও তিনি পকেটস্থ করেছেন।”

দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা শিক্ষকদের জিম্মি করে এমপিওভুক্তি, বিএড স্কেল পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কাজে হাজার হাজার টাকা পকেটস্থ করছেন। সম্প্রতি সময়ে ওয়াদিপুর আলীম মাদ্রাসার এক জুনিয়র শিক্ষকের এমপিও ভুক্তির জন্য ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। মাহমুদপুর সিএসসি নি¤œ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এনটিআরসি এর নিয়োগকৃত হিন্দু ধর্মের শিক্ষকের শাখা অনুমোদন না থাকলেও ঘুষের বিনিময়ে কয়েকবার এমপিওর জন্য জেলা অফিসে পাঠিয়েছেন।

২০১৭ সালে একাধিক পত্রিকায় দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হলে, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় একাধিক তদন্ত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার এমপিওভুক্তির কার্যক্রম ‘বিকেন্দ্রীকরণ’ এবং ‘অনলাইন’ করা হলেও তার সুফল মেলেনি বরং বাঘারপাড়ায় ফল হয়েছে উল্টো। এর প্রধান কারণ শিক্ষা কর্মকর্তার হয়রানি, ঘুষ, দুর্নীতি। শিক্ষা অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগ থাকলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ শিক্ষকদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন শিক্ষক জানিয়েছেন, এমপিও নির্দেশনা মোতাবেক সকল কাগজপত্র দিয়ে যথা নিয়মে আবেদন করেন। যাদের ঘুষের রেট বেশি থাকে তাদের কাগজপত্র সঠিক না থাকলেও জেলা অফিসে পাঠান এ মহাদুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। আবার যাদের আবেদন সঠিক থাকে ঘুষ কম থাকলে তা বাতিল হয়। যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, সঠিকভাবে কাগজপত্র স্ক্যান করা হয়নি। এভাবে প্রতিধাপেই হয়রানি হতে হচ্ছে শিক্ষকদের।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ তেজারত বলেন, “আমার বিরুদ্ধে একটা চক্র ষড়যন্ত্র করছে। তারা আমাকে সরিয়ে অন্যকে এ চেয়ারে বসাতে চায়, তাই তারা উঠেপড়ে আমার পিছনে লেগেছে। আমি ইতিমধ্যে বদলী হওয়ার চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ বলেন , মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণের একটা অভিযোগ পেয়েছি এবং আগামী ১ আগষ্ট এ বিষয়ে শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে।

Comments