ঠাকুরগাঁওয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০১৯

মোঃ ইলিয়াস আলী, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পর আনুমানিক ১৮ দিন সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন ডাক্তার। গর্ভবতী ওই মা সুস্থ থাকলে এই ১৮ দিন পরই পেটে থাকা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে পৃথিবীর আলো দেখবে। কিন্তু তার আগেই গভীর রাতে বিছানায় বালিশ চাপা দিয়ে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে পেটেই মেরে ফেলা হলো সন্তানকেও।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকাল ৩টার সময় এমন লোম হর্ষক ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের মেছনী পিয়াজুপাড়া গ্রামে।

পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় স্ত্রীকে গভীর রাতে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মোশারফ হোসেন মুসা (৩৫) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। নিহত গৃহবধূ রুনা আক্তার (২৫) উপজেলার ধনতলা গ্রামের হুসেন আলীর মেয়ে।

তবে এ হত্যাকাণ্ডকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন গৃহবধূর পরিবারের লোকজন। মেরে ফেলার পর গৃহবধূর মরদেহকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর অজুহাতে সকালে কাউকে না জানিয়ে দ্রুত লাশকে গোসল করে দাফনের ব্যবস্থা এমনকি মোড়লদের নিয়ে বিষয়টি পাঁচ লাখ টাকায় রফাদফাও হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

মেয়ের মা সামশুন নিহার জানান, গত ৬ বছর পূর্বে ছয় লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের মেছনী পিয়াজুপাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে মোশারফের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকে মোটরসাইকেল যৌতুক চাওয়াকে কেন্দ্র করে সংসারে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই ছিল। পারিবারিক ও স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বিচার শালিসও হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে আমার মেরেই ফেলল।

মেয়ের বাবা হুসেন আলী জানান, সকালে স্থানীয় মোড়লরা আমাকে চাপ প্রয়োগ করে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করে। আমি চাপে পড়ে লাশ দাফন করতে সম্মতি দিই। কিন্তু পরে এলাকাবাসী থানায় খবর দিলে বাড়ি ছেড়ে জামাই ও তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে যায়।

গৃহবধূর প্রতিবেশী জেসমিন আক্তার জানান, গভীর রাতে গৃহবধূর স্বামী আমাকে ডাকলে তাদের ঘরে গিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় গৃহবধূকে দেখতে পাই। এ সময় তার মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। দ্রুত অটোচার্জার গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায় তার স্বামী মুসা।

পাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেন, গৃহবধূর ছোট একটা তিন বছরের মেয়ে রয়েছে। সেই মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এক বিঘা জমি মেয়ের নামে লিখে দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসার প্রস্তাব ছিল দুই পরিবারের পক্ষ থেকে। এখন সেটা আর হচ্ছে না। আইনি প্রক্রিয়ায় সবকিছু হবে। গৃহবধূর স্বামী যদি অপরাধ করে, তাহলে শাস্তি পাবে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার মহসিন আলী জানান, রাত সাড়ে ৩টার সময় গর্ভবতী এক মহিলাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। মেয়েটি হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বেই মারা গেছে জানালে পরিবারের লোকজন পুনরায় মরদেহটিকে ফেরত নিয়ে যায়।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি মোসাব্বেরুল হক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, লাশ দাফনের জন্য গোসল করা শেষ। এমন সময় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত গৃহবধূর পরিবারের লোকজন কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। গৃহবধূর লাশ নিয়ে আসার সময় গৃহবধূর স্বামীর বাড়ির লোকজন কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পুলিশ আসার খবর শুনে দরজায় তালা দিয়ে বাড়ি থেকে তারা উধাও হয়েছে।

Comments