‘গলা কাটতে’ বাগেরহাট থেকে রাজশাহীতে আসে ওরা

প্রকাশিত: ৯:২৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০১৯

বাগরেহাট জেলা থেকে রাজশাহীতে এসেছিলেন চারজন যুবক। উদ্দেশ্য পরকীয়ায় সহযোগিতা করে সৌদি প্রবাসী বান্ধবীর স্বামীকে হত্যা করে তা দেশে বিদ্যমান গুজব ‘গলাকাটা’ ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া। তবে স্থানীয়দের সচেতনতায় মূল পরিকল্পনাকারী ও পরকীয়ায় জড়িতসহ চারজনই এখন রাজশাহীর জেলাহাজতে।

শনিবার (২৭ জুলাই) রাতে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বাসুদেবপুর ফুলতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, প্রবাসী বান্ধবীর স্বামী কাঞ্চনকে গলা কেটে হত্যা করতে গিয়ে জনতার হাতে প্রথমে ধরা পড়ে দুইজন যুবক। এ সময় উত্তেজিত জনতার কাছে তারা দায় স্বীকার করে জানায়, তাদের বন্ধু রাসেলের শেখের সঙ্গে কাঞ্চনের সৌদি প্রবাসী স্ত্রী তানিয়ার পরকীয়া সম্পর্ক আছে। আর এই সম্পর্কের মাঝে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রবাসীর স্বামী কাঞ্চন। আর পূর্ব পরিকল্পিত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে প্রবাসী তানিয়াও। সেই কাঞ্চনকে রাজশাহী পর্যন্ত আসতে প্ররোচিত করে। পরে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও দুইজনকে রাজশাহী স্টেশন থেকে আটক করে।

পরিকল্পিত হত্যা চেষ্টার সঙ্গে জড়িতরা হলেন- মূল পরিকল্পনাকারী বাগেরহাট জেলার মোলাহাট থানার গোফড়া গ্রামের রাবিউল শেখের ছেলে রাসেল শেখ (২৪), নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার আলীগঞ্জ গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে মিরাজ হোসেন (১৯), পটুয়াখালি জেলার গলাচিপা থানার নলুয়াবাগি গ্রামের মজিব মৃধার ছেলে কাউসার (২০) ও তাদের সহযোগী নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার কাঞ্চন গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে সজীব (১৯)। এদের সকলেই এখন রাজশাহী জেলা পুলিশের হেফাজতে আছে।

হত্যাকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ভুক্তভোগী কাঞ্চন সিকদার বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট থানার গোফরা গ্রামের জালাল শিকদারের ছেলে ও সৌদি প্রবাসী তানিয়ার স্বামী।

রাজশাহী জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, পূর্ব পরিকল্পনা মতে সৌদি প্রবাসী স্ত্রী তানিয়া ফোনে তার স্বামী কাঞ্চনকে বলে রাজশাহী থেকে দুইজন পাসপোর্ট নিয়ে আসবে। তাদের ভিসা করিয়ে বিদেশে পাঠানো হবে। স্বামী সরল বিশ্বাসে স্ত্রীর দেওয়া নম্বরে মিরাজ ও কাউসারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে শনিবার রাজশাহীতে আসে। পরে এ দুজন বলে চারঘাট উপজেলার বাসুদেবপুর ফুলতলা গ্রাম থেকে পাসপোর্ট আনতে যেতে হবে। কাঞ্চন তাদের কথা মতো একসঙ্গে বাসুদেবপুর রওনা হয়। এর মাঝে রাত ঘনিয়ে আসলে তারা দুইজন কাঞ্চনকে সুকৌশলে ফুলতলা এলাকার নির্জন রেললাইনের ধারে নিয়ে যায়।

এ সময় রাত সাড়ে আটটার দিকে কাঞ্চন বুঝতে পারেন তার সঙ্গে কিছু একটা ঘটতে চলেছে। অবস্থা বুঝে সে দৌড় দেয়। তখন দুইজন তাকে ধাওয়া করে। এর মাঝে বিষয়টি এলাকাবাসীর চোখে পড়ে ও সন্দেহ হয়। তারা অভিযুক্ত দুজনকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে। এলাকাবাসীর চাপে ও গণধোলাইয়ের ভয়ে মিরাজ ও কাওসার স্বীকার করে তারা গলা কেটে হত্যার উদ্দেশ্যে কাঞ্চন নামে এক যুবককে বাগেরহাট থেকে রাজশাহীর ফুলতলা এলাকায় নিয়ে এসেছিল। তবে কাঞ্চন পালিয়েছে। পরে স্থানীয়রা চারঘাট থানায় ফোন দিলে পুলিশ এসে তাদের দুজনকে আটক করে।

এরপর মেরাজ ও কাওসারের দেওয়া তথ্য মতে মূল পরিকল্পনাকারী ও কাঞ্চনের প্রবাসী স্ত্রী তানিয়ার সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত রাসেল শেখকে রাজশাহী রেল স্টেশন থেকে শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার পর আটক করে। এ সময় স্টেশন এলাকা থেকে রাসেলের অপর সহযোগী সজীবকেও আটক করা হয়।

চারঘাট থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগী কাঞ্চনের সৌদি প্রবাসী স্ত্রী তানিয়ার সঙ্গে রাসেলের পরকীয়ার সম্পর্ক আছে। তাদের সম্পর্কে বাধা ছিল তানিয়ার স্বামী কাঞ্চন। তানিয়ার পরিকল্পনা মতে শনিবার পাসপোর্ট নিতে রাজশাহীতে এসে মিরাজ ও কাওসারের সঙ্গে দেখা করে কাঞ্চন। তারা কাঞ্চনকে হত্যার উদ্দেশে চারঘানে নিয়ে আসে। তবে কাঞ্চন বিষয়টি বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী এই দুইজনকে ধাওয়া দিয়ে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়- এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী প্রবাসী তানিয়া ও রাসেল। পরে মেরাজ ও কাওসারের দেওয়া তথ্য মতে রাসেল ও সজীবকে রাজশাহী স্টেশন থেকে আটক করা হয়।

Comments