রেজিস্ট্রি অফিসের জালিয়াতি: ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে হুন্ডি কাজলের জমি বিক্রি! নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১:১৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০১৯ ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : হাজার হাজার লগ্নিকারী যাকে খুঁজছে। ৮ মামলায় যার বিরুদ্ধে ১৪ বছরের সাজা হয়েছে আলোচিত সেই হুন্ডি কাজলের জমি জলিয়াতির মাধ্যমে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। হুন্ডি কাজল বর্তমানে ভারতে পালিয়ে থাকলেও কোটচাঁদপুর সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে হুন্ডি কাজলের ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকার সম্পত্তি। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান এ ভাবে জমি রেজিষ্ট্রির পক্রিয়াকে অবৈধ ও দুর্নীতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে কোটচাঁদপুরের সাবরেজিষ্ট্রার অঞ্জনা রানী বলেছেন হুন্ডি কাজলকে আমি না চিনলেও সনাক্তকারীর মাধ্যমে তিনি আমার দপ্তরে এসে জমি রেজিষ্ট্রী করে গেছেন। পুলিশের গ্রেফতারী পরোয়ানা ও হাজারো লগ্নিকারীর চোখ ফাঁকি দিয়ে হুন্ডি কাজলের জমি রেজিষ্ট্রির বিষয়টি কোটচাঁদপুরসহ আশপাশ জেলার মানুষ মেনে নিতে পারছে না। তাদের ভাষ্য, মোটা অংকের ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে এই জালিয়াতিপূর্ণ রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি দুই দলিলের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত বিঘা জমি বিক্রি করেছেন হুন্ডি কাজল। এই জমি তিনি বিক্রি করেছেন কোটচাঁদপুর শহরের পরশ মনি গার্মেণ্টসের মালিক আবুল কালাম আজাদ ও তার স্ত্রী তাছলিমা আজাদের কাছে। স্থানীয় বলাবাড়িয়া ইটভাটার ৫০ লাখ টাকার মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ১৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। যার দলিল নং ১৫৯। অপর দলিলের গ্রহীতা কোটচাঁদপুর এলাঙ্গী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানূর রহমান খান ও তার স্ত্রী মেহরিন আক্তার কিনেছেন ১৯৯.৫০ শতক জমি। যার দলিল নং ১৬০। জমির মুল্য দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। জালিয়াতির মাধ্যমে এভাবে হুন্ডি কাজলের জমি বিক্রির খবরটি ফাঁস হয়ে পড়লে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ফেরারি আসামী কি ভাবে জমি রেজিষ্ট্রি করতে পারে এ নিয়ে সমালোচনা ঝড় শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া উইয়ং তদন্ত করে দেখেছেন হুন্ডি কাজল কোন ভাবেই কোটচাঁদপুর শহরে আসেনি। ঝিনাইদহের পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভারতে পালিয়ে থাকা হুন্ডি কাজলের দেশে আসার খবরটি মিথ্যা বলে মনে করেন। অভিযোগ উঠেছে, কোটচাঁদপুর সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক বদর উদ্দীনের মাধ্যমে দলিল তৈরী করে সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলায় গয়েশপুর গ্রামের হুন্ডি কাজলের এক আত্মীয় বাড়ি থেকে দলিলে হুন্ডি কাজলের স্বাক্ষর করে আনা হয়। সাবরেজিষ্টার অঞ্জনা রানী ওই দলিল রেজিষ্ট্রী করতে অসম্মতি জানালে তাকে হুকমী দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করে আজাদ ও মিজান গং। ওই সূত্রের দাবি বিষয়টি তদন্ত করলে প্রকৃত রহস্য উন্মচিত হবে। কোটচাঁদপুর রেজিষ্ট্রি অফিসের সব দলিল লেখক একবাক্যে স্বীকার করেছেন হুন্ডি কাজল সেখানে আসেন নি। জমি গ্রহীতারা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তবে তারা এই জালিয়াতির সাথে জড়িতদের শাস্তি ও দলিল বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শরিফুন্নেছা মিকি বলেন, এ ধরণের দ-প্রাপ্ত ব্যক্তি কোটচাঁদপুরে এসে জমি রেজিষ্ট্রি করবে এটা বিশ্বাস করার মতো ঘটনা না। বিষয়টি নিয়ে আমি ধোয়াশার মধ্যে আছি। কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র জাহিদুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার মানুষের সাথে এমন প্রতারণা করে হু-ি কাজল আবার কোটচাঁদপুর আসবে এটা বিশ্বাস করি না। কোটচাঁদপুর থানার বিদায়ী ওসি কাজী কামাল হোসেন সে সময় গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছিলেন হুন্ডি কাজল কোটচাঁদপুরে জমি রেজিষ্ট্রি করতে এসে ছিলো এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি বলেন সাবরেজিষ্ট্রার একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি হুন্ডি কাজলের মতো একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী তার দপ্তরে উপস্থিত হলে জানালেই ভাল করতেন। সাবরেজিষ্ট্রার অঞ্জনা রানী জানান, আদালত থেকে যেহেতু এ ধরণের আসামীর জমি বিক্রির বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা আমাদেরকে দেয়া হয়নি সেহেতু আমি কোন কিছুই খতিয়ে দেখিনি। তাছাড়া তাকে আমি চিনিনা। তিনি বলেন ফারুক আহমেদ কাজল প্রকাশ্যে রেজিষ্ট্রীর দিনে আমার দপ্তরে এসে সনাক্তকারীর মাধ্যমে তিনি জমি রেজিষ্ট্রী করে গেছেন। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, হুন্ডি কাজল সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। এ অবস্থায় তিনি তার কোন সম্পদ বিক্রি করতে পারেন না। যদি করেনও তবে তা হবে অবৈধ ও দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিষ্ট্রার দায়ী থাকবেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেও অভিযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য ১৯৯৫ সালের প্রথম দিকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের ফারুক আহমেদ হুন্ডি কাজল দুই’শ এজেন্ট নিয়ে হুন্ডি ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে লাখে ১০ হাজার ও ১৯৯৯ সালে লাখে ১৫ হাজার টাকা লাভ দেওয়ার ঘোষণা দিলে ঝিনাইদহসহ ২০ জেলার মানুষ এই মরণ ব্যবসায় লগ্নি করে। ২০০০ সালের দিকে হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। টাকা হারিয়ে লগ্নিকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সেই থেকে হুন্ডির ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ। লগ্নিকারীরা টাকা না পেলেও হুন্ডি কজলের ৮ মামলায় ১৪ বছরের সাজা হয়। Comments SHARES সারাদেশ বিষয়: