পাহাড়ের মেঠোপথে গরুর গাড়ি এখন দুর্লভ

প্রকাশিত: ৯:৫৭ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০১৯

লোকমান হোসেন, খাগড়াছড়ি : পাহাড়ের মেঠো পথে স্বপ্ন ছুঁতে যাচ্ছে মানুষ। এককালে যা কল্পনা করেনি, তাই এখন
পেয়ে যাচ্ছে হাতের নাগালে। ইট-পাথরের মত মানুষও হয়ে পড়ছে যান্ত্রিক। মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। তারই ধারাবাহিকতায় হারিয়ে যাওয়ার পথে এক সময়ের যোগাযোগের বাহন গরুর গাড়ি।

পায়ে হাঁটার যুগের অবসান হওয়ার পর মানুষ যখন পশুকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে শিখলো, তখন গরুর গাড়িও হয়ে উঠেছিল যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি বিবাহের বর-কনে বহনের ক্ষেত্রেও গরুর গাড়ির ব্যাপক প্রচলন ছিল। কালের বিবর্তনে ওই গরুর গাড়ি এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।

কিছু কিছু জায়গায় পণ্য পরিবহনের জন্য গরুর গাড়ি ব্যবহার করা হলেও বিবাহের বর- কনে পরিবহনের জন্য এর কথা আর চিন্তাই করা যায় না। এক সময় গ্রামবাংলায় কৃষকের ঘরে ঘরে শোভা পেত নানা ডিজাইনের গরুর গাড়ি। টোপরঅলা গরুর গাড়ি করে মানুষ এক স্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচল করতো।

টোপরবিহীন গরুর গাড়ি ব্যবহার হতো মালামাল পরিবহন, ব্যবসা, ফসল ঘরে তোলা বা বাজারজাতকরণের জন্য। যন্ত্রের আবিষ্কার ও কৃষকদের মাঝে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগার কারণে গরুর গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে ভ্যান, অটোরিকশা, নছিমন-করিমন, ভটভটি, বাস, ট্রাক ইত্যাদি।

কৃষকসহ সর্বশ্রেণির মানুষ এখন যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য এ সকল যান্ত্রিক পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাই এখন আর গ্রামগঞ্জে আগের মতো গরুর গাড়ি চোখে পড়ে না। সারাদেশ থেকে যখন গরুর গাড়ি হারিয়ে যাওয়ার পথে তখন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় কৃষিপণ্য পরিবহন এবং দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে গাছ-বাঁশ পরিবহনের জন্য এখনও গরুর গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে।

সমপ্রতি মাটিরাঙা উপজেলার পলাশপুর গ্রামের রাস্তা দিয়ে গরুর গাড়ি দিয়ে গাছ পরিবহন করার সময় কথা হয় দুজন গাড়িয়ালের সাথে। তারা জানান, অধিকাংশ রান্তাঘাটা পাকা হওয়ার কারণে গরুর গাড়ি আর চালানো সম্ভব হয় না। তবে মাঠ থেকে ধান আনার ক্ষেত্রে বা গ্রামের দুর্গম এলাকায় রাস্তাঘাট ভালো না থাকায় গরুর গাড়ি ছাড়া জিনিসপত্র আনা-নেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে গরুর গাড়ির ওপরই তাদের ভরসা।

তবে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলে গ্রামবাংলার ঐতিহবাহী এই গরু গাড়িগুলো আগামী প্রজন্ম হয়তো আর দেখতে পাবে না। তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এমন এক সময় আসবে যখন বাংলাদেশে আর কোনো গরুর গাড়ি অবশিষ্ট থাকবে না।

Comments