যশোরে ঘের ব্যবসায়ী খুন: ঘরবাড়ি ভাংচুর,পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত দুই নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০১৯ বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি: যশোরে ছোট ভাইয়ের বিরোধ মেটাতে গিয়ে বড় ভাই প্রতিপক্ষের গুলিতে খুন হয়েছেন। নিহতের নাম ইমামুল ইসলাম (২৮)। তিনি যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া গ্রামের পূর্বপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে। ইমামুল একজন ঘের ব্যবসায়ী ছিলেন। বুধবার দুপুরে ভাতুড়িয়া-সাড়াপোল সড়কের কালাবাঘা এলাকায় নিজের ঘেরের সামনে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলি ও ২/৩টি গুলির খোশা জব্দ করছে। ঘটনার পর নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা ভাতুড়িয়া বাজারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। তারা জোটবদ্ধ হয়ে এই হত্যাকান্ডের পেছনে চাঁচড়া দাড়িপাড়া এলাকার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত মাৎস চাষি সেলিম রেজা পান্নুর যোগসাজস রয়েছে সন্দেহে তার ঘরবাড়ি ও গাড়ি ভাংচুর করেছে। এ সময় পুলিশসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছে। পুলিশ সেলিম রেজা পান্নুর পরিবারের সদস্যদের হেফাজতে নিয়েছে। চাঁচড়া বাজার মোড়ে তার ঘর তল্লাশি করে অস্ত্র-গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে। পান্নু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলে শোনা গেলেও কোতয়ালি থানার নবাগত ওসি মনিরুজ্জামান তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, কি নিয়ে গোলযোগ তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। কারা এই ঘটনার সাথে যুক্ত এই বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন ওসি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বুধবার বেলা ১১টার দিকে যশোরের মণিরামপুর থেকে এক যুবক একটি মেয়েকে সাথে নিয়ে কালাবাঘার মোড়ের পূর্বে খড়িঞ্চাডাঙ্গা সাড়াঘুটোর রোডে একটি শ্মশানের সামনে স্বপনের ঘেরের কাছে গল্প করছিলেন। এ সময় ইমামুলের ছোট ভাই ইসরাজুল ইসলামসহ দুইজন সেখানে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ তোলে। দুইজনকে ইসরাজুল তাদের ঘেরের সামনে নিয়ে যায়। ওই যুবক তখন ভাতুড়িয়ার পরিচিত কয়েকজনকে ফোন দেয়। তার ফোন পেয়ে কয়েকজন যুবক ঘেরের সামনে গেলে ওই ছেলেমেয়েকে ছাড়তে নারাজ হয় ইসরাজুল। ঘটনাটি জানতে পেরে ইমামুল ঘেরের সামনে গেলে ওই যুকদের সাথে কথাকাটাকাটি হয়। পরে সংবাদ পেয়ে ভাতুড়িয়ার কাজলের ছেলে মোস্তর (সেলিম রেজা পান্নুর আশ্রিত) নেতৃত্বে তিনটি মোটরসাইকেলে করে ৯জন সেখানে যায় এবং দুপুর সোয়া একটার দিকে কিছু বলার আগেই মোটরসাইকেল থেকে নেমে ইমামুলকে ছুরিকাঘাত করে। তিনি দৌড়ে হরিয়ানা বিলের মধ্যে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করা হয়। একটি গুলি তার বুকের বাম পাশে লাগে। সে সময় দুর্বৃত্তরা ইমামুলের ছোট ভাই ইসরাজুলকেও গুলি করলে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরে মোটরসাইকেলে করে দুর্বৃত্তরা ফের ভাতুড়িয়ার দিকে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা পৌনে ৩টার দিকে ইমামুল মারা যান। হাসপাতালে সার্জারী বিভাগের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান লড জানান, মৃত্যুর আগে ইমামুলকে ঢাকায় রেফার্ড করেছিলেন। কারণ গুলিটি তার বুকের ভেতরে থেকে গিয়েছিল। তাকে ঢাকায় নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তার পরিবারের লোকজন। তার আগেই তিনি মারা যান। নিহতের পিতা নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার সময় অফিসে (জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের স্টাফ) ছিলেন। কারা এই ঘটনার সাথে যুক্ত তা তিনি জানেন না। এ দিকে ইমামুলের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ভাতুড়িয়া ও আশেপাশের গ্রামের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা ভাতুড়িয়া মোড়ে অবস্থান নিয়ে দোকান পাট বন্ধ করে দেয়। সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনী ইমামুলকে গুলি করে হত্যা করেছে। এলাকার লোকজন চাঁচড়া দাড়িপাড়ায় পান্নুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। বাড়ির সামনে রাখা পান্নু ব্যক্তিগত জিপ (ঢাকা মেট্টো-ক-০২-০৫৬৫) জিপ গাড়িটিও ভাংচুর করে। এ সময় প্রথম সংবাদ পেয়ে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য সেলিম রেজা পান্নুর বাড়ির সামনে যায়। সেখানে বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশের উপরও হামলা চালায়। এ সময় চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই আনারুল ইসলাম মাথায় আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত জখম হন। এছাড়া ভাতুড়িয়ার শের আলীর ছেলে আনিসুর রহমান আহত হয়েছে। তাদের দুইজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই সংবাদ পেয়ে পুলিশের একাধিক টিম ভাতুড়িয়া এলাকায় যায়। পিবিআই ও ডিবি পুলিশের সদস্যরাও ভাতুড়িয়া বাজারে অবস্থান নেন। পুলিশ সেলিম রেজা পান্নুর বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী লাকি, মেয়ে তরু এবং তার শ্বাশুড়িকে হেফাজতে নিয়েছে। এই ঘটনার পর কোতয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আমিরুজ্জামান বিকেলে সেলিম রেজা পান্নুর অফিস তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে একটি ৪ রাউন্ড গুলি একটি সর্টগান জব্দ করেছে। তিনি বলেছেন, ঘটনাস্থলে যে গুলি পাওয়া গেছে ওই গুলির সাথে উদ্ধার করা গুলির মিল রয়েছে। এখন দেখতে হবে গুলি বা সর্টগান বৈধ কি-না। এর আগে যে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে এই গুলির ঘটনা সেই তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে বলে প্রচার হলেও কোতয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান আটকের কথা অস্বীকার করেছেন। আর হামলা চলানোর অভিযোগে পুলিশ আয়নালের ছেলে মান্নানকে আটক করে। হত্যার অভিযোগে তানভির নামে এক যুবকের নাম উঠায় তাকে না পেয়ে তার পিতা রাজাকে আটক করার সংবাদ পেলেও পুলিশ আটকের কথা অস্বীকার করেছে।ওসি মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, পুলিশ আসামি আটকের জন্য অভিযান চালাচ্ছে। নিহতের পরিবারের লোকজন মামলা করলে তা গ্রহন করা হবে। Comments SHARES সারাদেশ বিষয়: