খাগড়াছড়িতে ছেলেধরা গুজবে কান না দিতে পুলিশের আহ্বান

প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০১৯

লোকমান হোসেন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা ৯টি উপজেলায় ছেলে ধরা গুজবে কান দিয়ে গণপিটুনির মতো অপরাধ সংগঠিত থেকে জেলাবাসীকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জেলা পুলিশ।

বুধবার দুপুরে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই আহ্বান জানান পুলিশ সুপার মোহা: আহমার উজ্জামান বিপিএম-সেবা। বুষ্পতিবার বাজারবার হওয়ায় মানুষের সমাগত এলাকার মুক্তমঞ্চে সামাজিক, রাজনৈতিক, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যক্তিদের নিয়ে আইন-শৃংখলা বিষয়ক
জনসচেতনমূলক সমাবেশ করবে।

পুলিশ সুপার সুপার মোহা: আহমার উজ্জামান বলেন, স্বার্থান্বেষী একটি মহল সা¤প্রতিক সময়ে দেশে ছেলে ধরা গুজব ছড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করে যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। প্রতিটি থানার আওতায় সাধারন মানুষের সচেতনতা করার লক্ষ্যে মাইকিং, লিপলেট, ফেস্টুন ইত্যাদিসহ প্রচার অব্যাহত রয়েছে।

এলাকায় কাউকে না কাউকে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরা ফেরা করতে দেখলে গণপিটুনি না দিয়ে পুলিশে খবর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানান।

বিশেষ করে ফেইস- বুক, নিউসপোর্টালসহ সামাজিক ভাবে সচেতনতা প্রচার সৃষ্টির লক্ষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সহযোগীতা চান পুলিশ সুপার। কোথাও কোন রকম সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে ৯টি উপজেলার থানার নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন বা জাতীয় হেল্প লাইন ‘৯৯৯‌‌’(বিনামূল্যে) এ কল দেওয়ার পরামর্শন দেন খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করছি এবং আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।

স্থানীয়দের সচেতন করতে স্কুল, কলেজে সচেতনমূলক সভা করা হচ্ছে। মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার-প্রচারণা চলছে। ছেলেধরার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। এর কোনো ভিত্তি নেই। যা ঘটছে তা গুজবের কারণে অনাকাংখিত ঘটনা ঘটছে।

সংবাদ সম্মেলনে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মোহা: আহমার উজ্জামান বিপিএম-সেবা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম সালাহউদ্দিন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওনক আলম, এনএসআই’র সহকারী পরিচালক মো: শাহনেয়াজ, ডিআইও-ওয়ান মো: আব্দুর সামাদ, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মুহম্মদ রশিদ, প্রেস ক্লাবের সভাপতি জীতেন বড়ুয়া, সাধারন সম্পাদক মো: আবু তাহের, খাগড়াছড়ি রিপোটার্স ইউনিটি;র সভাপতি চাইথোয়াই মারমা, খারিই সম্পাদক ও দৈনিক সবুজ পাতার দেশ সম্পাদক মো: জুলহাস উদ্দিন, দৈনিক অরন্য বার্তার সম্পাদক চৌধুরী আতাউর রহমান রানা, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল আজম, সম্পাদক কানন আচার্য সহ স্থানীয় প্রিন্ট ও
ইলেট্রনিক মিডিয়া কর্মরত সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সারা দেশের মতো ছেলেধরা গুজবে আতংকিত খাগড়াছড়ি বাসীর অভিভাবকরা। ইতোমধ্যে জেলার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে ছেলেধরা আতংকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। চিন্তিত অভিভাবকরা নিজের সন্তানকে নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিদ্যালয়ে। স্থানীয়রা ছেলেধরা সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করলেও বাস্তবতার সত্যতা না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয়দের সচেতন করতে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনমূলক সভা করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাগড়াছড়ির শহরতলীর বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। মহালছড়ির তবলছড়ি কায়াংঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে আতংকিত পরিবার তাদের সন্তানদের পাঠাচ্ছেন না। একই চিত্র জেলার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের।

তবলছড়ি কায়াংঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমন চক্রবর্তী বলেন, গত দু’দিন ধরে বিদ্যালয়ে মশিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। ছেলেধরা গুজব আতংকে তারা সন্তানদের পাঠাচ্ছেন না। আমরা তাদের এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছি।

ছেলেধরা সন্দেহে জেলার মাটিরাঙ্গা, দীঘিনালা, মহালছড়ি, রামগড়, লক্ষীছড়িতে বেশ কয়েকজনকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে ঘটনার সত্যতা না পেয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অপরদিকে ছেলেধরা গুজবে আতঙ্কিত না হতে স্কুল পর্যায়ে সচেতনামূলক সভা করছে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ।

গত সোমবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটাতে সচেতনমূলক সভা করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রওনক আলম উপস্থিত ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীলা তালুকদারসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

রওনক আলম অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সারাদেশে কিছু স্বার্থন্বেষীমহল ছেলেধরা গুজব ছড়াচ্ছে। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কোথাও কোনো অস্বাভাবিক কাউকে দেখলে পুলিশকে অবহিত করতে অনুরোধ জানান তিনি।

 

Comments