জীবনের কাছে হার না মানা নারী শেফালী শীল, নাপিতের কাজে চলে সংসার নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০১৯ নাঈমুর রহমান শান্ত, ঝালকাঠি প্রতিনিধি: কাজী নজরুল ইসলাম নারী কবিতায় লিখেছেন, “বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” সত্যিই সব জায়গায় নারীরা বিচরণ করছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা উপার্জন করে সংসারের উন্নতি করছেন। এমনকি নারীরা পারিবারিক দূর্বিসহের মাঝেও শক্ত করে সংসারের হাল ধরতে সক্ষম। জীবন যুদ্ধে হার না মানা এমন এক নারীর নাম শেফালী রাণী শীল। এই নারী গ্রামের বাজারে চুল কেটে সংসার চালান। ঝালকাঠী জেলার কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা বাজারে শেফালী শীল প্রায় দুই যুগ ধরে নরসুন্দরের কাজ করছেন। তিনি পশ্চিম ছিটকী গ্রামের দরিদ্র যাদব শীলের চতুর্থ সন্তান। দারিদ্রতার কারণে ৫ম শ্রেণি পর্যন্তই লেখাপড়ার সৌভাগ্য হয় তার। নিজের ইচ্ছা না থাকলেও পরিবারের চাপে বাধ্য হয়ে আতরআলী গ্রামের বিশ্বনাথ শীলের সাথে মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। জীবনকে বুঝে উঠার আগেই চার মেয়ে ও এক ছেলের মা হন। একদিকে স্বামীর অবহেলা ও বেপরোয়া উদাসী জীবনযাপনের কারণে তার জীবন বিষন্নময় হয়ে ওঠে। এরপর তিনি প্রথমে তার পিতার বাড়িতে থাকা শুরু করেন এবং এক সময় পিতার বাড়ি থেকে বলতলা গ্রামের দোগনা বাজারে চলে আসেন। বলতলা গ্রামের দোগনা বাজারে আসার পরও স্বামী কাজ করতো। কিন্তু কয়েক বছর পূর্বে স্বামী প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অভাবের কারণে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারায় একসময় তার স্বামী মানসিক বিকারস্ত হয়ে যায়। এ অবস্থার কিছুদিনের মধ্যে তার স্বামী কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরপর থেকেই পরিবারের দায়িত্বভার পুরোটাই শেফালিকে নিতে হয়। পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দেয়ার জন্য প্রথমে তিনি অন্যের বাড়ি কাজ করলেও সংসার যখন চলছিল না তখন চুল কাটার পেশা বেছে নেন। যখন তিনি গ্রামের বাজারে চুল কাটতে শুরু করেন তখন গ্রামের কিছু লোক তার পেশা কে ভাল চোখে দেখেনি। গ্রামে বাজারের মধ্যে মেয়ে মানুষ পুরুষ লোকের চুল কাটছে দেখে সবাই হাসি-ঠাট্টা করতো। অনেকে সমালোচনাও করতো। আবার গ্রামের কিছু লোক শেফালির অভাব দেখে সহযোগিতাও করেছে। এ সময় গ্রামের লোকজন টাকা তুলে চুল কাটার জন্য তাকে একটি চেয়ারও কিনে দিয়েছিল। ২০১৬ সালে ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া ব্র্যাক অফিসের টিইউপি কর্মসূচির আওতায় জরিপ এর মাধ্যমে চুড়ান্তভাবে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন এবং গবাদী প্রাণী পালনের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে তাকে একটি বকনা গরু ও ছাগল প্রদান করা হয়। প্রতিদিন সকালে গৃহস্থলির কাজ করে মাঠে গরু- ছাগল রেখে দোকানে যান তিনি। দুপুরে বাড়ি ফিরে রান্নাবান্না করেন ও মাঠে গিয়ে গরু- ছাগলকে পানি খাওয়ান। এরপর বিকেলে দোকানে গেলে ফেরেন রাত ১০টায়। এভাবে নিজের প্রচেষ্টায় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এবং আরো দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। ব্র্যাক কর্মীদের অনুরোধে বলতলা জিডিবিসি কমিটি দোগনা বাজারের পাশে ৩ কাঠা খাস জমিতে শেফালিকে একটি ঘর তুলে দিয়েছে। Comments SHARES সারাদেশ বিষয়: