উদ্বোধনের অপেক্ষায় যশোর সদর হাসপাতালের ক্যাশ কাউন্টার, অসন্তোষ বিরাজ

প্রকাশিত: ৯:২৮ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি: সকল প্রস্তুতি শেষ। শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের ৪ বছর পর এটি চালু করা হচ্ছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, আগামী ৩ জুলাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা শেষে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্য ক্যাশ কাউন্টারের পাশাপাশি কালার আল্ট্রাসনো মেশিন, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ও রোগীর স্বজনদের গেট পাশ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।

এদিকে, ক্যাশ কাউন্টার চালুর বিষয় নিয়েও হাসপাতালের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদের দাবি কয়েকটি বিভাগ নয় সম্পূর্ণ রাজস্ব খাত ক্যাশ কাউন্টার দিয়ে পরিচালনা করতে হবে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলীর মোল্যার লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ হাসপাতালে কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টার স্থাপনের অনুমোদন দেয়। ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি অনুমোদনপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব হাফিজুর রহমান চৌধুরী আদেশপত্রের স্মারক নম্বর-১৯২৯।

পত্রে উল্লেখ করা হয়, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এক্স-রে, ইসিজি, ইকো কার্ডিওগ্রাম, আলট্রাসনোগ্রাম, পেয়িং বেড ও কেবিন, বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীর টিকিটের ফি, ব্লাড স্ক্রিনিং ফি, অপারেশন ফিসহ অন্যান্য ইউজার ফি কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টারের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। ওই ক্যাশ কাউন্টারের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ নির্মাণ করা হয়। নিজের টাকায় ক্যাশ কাউন্টারের জন্য কম্পিউটার ও প্রিন্টার কিনে দেন ডা. ইয়াকুব আলী।

অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারও কেনা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি কর্মজীবন শেষ হওয়ায় ক্যাশ কাউন্টার চালু করতে ব্যর্থ হন তিনি। তারপর ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক হন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ সাহা। তিনিও ক্যাশ কাউন্টার চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু একটি পক্ষের বিরোধিতার কারণে সফল হতে পারেননি।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৬ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. একেএম কামরুল ইসলাম বেনুকে এ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পদে সংযুক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আদেশ দেয় মন্ত্রণালয়। ১৮ মার্চ তিনি এ পদে যোগ দেন। এরপর ক্যাশ কাউন্টার চালুর আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ডা. বেনুর নির্দেশে নির্দিষ্ট ভবনের গা থেকে ‘ক্যাশ কাউন্টার’ লেখাও মুছে ফেলা হয়। এরপর সরকারি অর্থ ইচ্ছামতো হরিলুট হতে থাকে।

সূত্রটি আরো জানায়, ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু এ হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন। তারপর তিনি হাসপাতালে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় ঘোষণা দেন এখানে সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টার চালু করা হবে কোনো রকম বাধা তাকে দমাতে পারবে না। সরকারি অর্থ লুটপাটে তিনি কঠোর ভূমিকা রাখবেন। সেই থেকে ক্যাশ কাউন্টার চালুর বিষয়ে এ চিকিৎসক কর্মকর্তা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ক্যাশ কাউন্টারের কক্ষ সাজানোর কাজ শুরু করেন। ক্যাশ কাউন্টার চালুর সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

এদিকে, ক্যাশ কাউন্টার চালু করা নিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি পক্ষের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

বুধবার তারা হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথাও বলেছেন। এসময় তারা দাবি করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশপত্রে উল্লেখ অনুযায়ী সকল রাজস্ব খাত ক্যাশ কাউন্টারের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। দুই তিনটি বিভাগ ক্যাশ কাউন্টার দিয়ে পরিচালনা করলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, কর্মকর্তা কর্মচারীরা যতই বিরোধিতা করুক না কেনো বিষয়টি তিনি ভাবছেন না। তার প্রধান উদ্দেশ্য ক্যাশ কাউন্টার চালু করা। কারো ব্যক্তিগত লাভের জন্য কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।

Comments