ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের মাঝেও বিরাজ করছে গলা কাটা আতঙ্ক নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:২৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৯ মোঃ ইলিয়াস আলী, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কয়েকদিনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং স্থানীয়দের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গলাকাটা বিষয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটাসের প্রভাব পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচটি উপজেলাতেও। ইতোমধ্যে গলাকাটা সন্দেহে গণপিটুনির শিকারও হয়েছেন কয়েকজন ব্যক্তি। ছেলেধরা দুইজনকে তুলে দেওয়া হয়েছে পুলিশের হাতে। আতঙ্কে ও ভয়ে অভিভাবকরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে বন্ধ করেছে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠানো। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘গলাকাটা’ বিষয়টি একেবারেই গুজব। এটির প্রচার ঘটিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছে একটি মহল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার (২০ জুলাই) সকালে রানীশংকৈল উপজেলার আমপাতারী এলাকায় একজন মানসিক রোগীকে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। পরে ছেলে ধরা নয়, তিনি একজন মানসিক রোগী। ঢাকা থেকে ভুলকরে ওই এলাকায় এসেছেন। মুঠোফোনে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে রাতে ঢাকার গাড়িতে উঠিয়ে দেয় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসী। তবে রাণীশংকৈল থানা পুলিশ বলছে, এমন কোনো ঘটনার বিষয় স্থানীয়রা কেউ অবগত করেনি। একই দিন পীরগঞ্জ উপজেলায় পৃথক দুইটি ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় জাবরহাট ইউনিয়নের হাটপাড়া করনাই এলাকায় অজ্ঞান করে দুই যুবকের গলা কাটার চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন দেখে ফেললে দ্রুত মাইক্রোবাসে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা ওই দুইজনকে উদ্ধার করে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় উপজেলার পীরগঞ্জ ইউনিয়নের চাপোড় গ্রাম থেকে ছেলে ধরা সন্দেহে দিনাজপুরের কাহারোল থানা থেকে আসা এক যুবককে গণপিটুনি দিয়ে মাথা ও নাক ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে স্থানীয়রা। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ওই যুবককে উদ্ধার করে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করায়। এর আগেও একজন মানসিক রোগীকে মারপিট করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকেও ছেড়ে দেয় পুলিশ। পীরগঞ্জ থানার ওসি বজলুর রশিদ আমাদের প্রতিনিধিকে জানন, স্থানীয় ভুলবশত ছেলেধরা সন্দেহ করে যুবককে পিটিয়ে আহত করেছে। ররিবার দুপুরে পুলিশ ওই যুবককে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ওষুধপত্র কিনে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছে। পীরগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক আবু তারেক বাধন জানান, আমার ভাগ্নি পিংকিসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বেসরকারি এনজিও পরিচালিত ব্র্যাকের শিখন স্কুলে অধ্যয়নরত। গলাকাটা আতঙ্কের ভয়ে দুইদিন ধরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তারা। কাঁচকালী মডার্ণ কেজি এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক আঃ রশিদ বলেন, অভিভাবকরা আতঙ্কে ছেলেদের স্কুলে পাঠাতে চাচ্ছেনা,অভিভাবকদের নির্ভয় দেওয়া সত্ত্বেও স্কুলে পাঠাতে চাইনা এমনকি স্কুলে আসলেও অভিভাবকরা ৩-৪ বার কল দিয়ে খবর নিচ্ছে ৷ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসার জাহিদুর রহমান আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, কিছু প্রভাব পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর। ভয়ও কাজ করছে। তবে অভিভাবকদের প্রতি আপাতত পরামর্শ হলো শিক্ষার্থীদের যত্ন সহকারে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া এবং শিক্ষার্থীরা সময়মতো ঘরে ফিরল কি না সে খবর নেওয়া। ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মো. মুনিরুজ্জামান সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তা চেয়ে বলেছেন, ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে একটি মহল জনমনে ভীতি ছড়ানোর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এর ফলে ভবঘুরে, নিরীহ ও অপরিচিত ব্যক্তি মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ছেলেধরা বিষয়টি নিছক গুজব। তাছাড়া গুজব ছড়িয়ে নিরীহ ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ফৌজদারী অপরাধ। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ধরণের ঘটনা ঘটলে নিকটস্থ থানায় খবর দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। Comments SHARES সারাদেশ বিষয়: