ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার প্রতিযোগিতায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা

প্রকাশিত: ৯:২১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি:  শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টা। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারী কেয়ার ইউনিটের সামনে মোবাইল ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ১৫/১৬ জন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি (রিপ্রেজেনটেটিভ)।

বর্হিবিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকের কক্ষ থেকে রোগী বের হলেই তারা হামলে পড়ছে। তারা রোগীর হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র ছোঁ মেরে কেড়ে নিচ্ছে। রোগীকে ঘিরে ধরেই তারা দেখছেন চিকিৎসক তাদের কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন কিনা।

এসময় তারা ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকছেন। সূত্র জানায়, শুক্রবার বাদে সপ্তাহের ৬ দিন কর্তৃপক্ষের নিয়ম না মেনে তারা হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে রোগীদের ও স্বজনদের বিড়ম্বনায় ফেলেন। তাদের কর্মকান্ডে সব চেয়ে বেশি বিব্রত হন নারী রোগীরা।

কারণ ছবি তোলার সময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর শরীরের উপর ঝুঁকে পড়েন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জানান,তাদের দমনে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রায় অভিযান পরিচালনা করে। মাঝে মধ্যেই তারা আটক হন। এছাড়া তিনি নিজেও তাদের ধাওয়া দেন।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকদের সাথে সাক্ষাতের জন্য সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ রয়েছে। প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার দুপর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত তারা চিকিৎসকের সাথে ভিজিট করতে পারবেন। বাকি দিনগুলোতে তারা হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতে পারবে না।

কিন্তু বাস্তবে নিয়মের কোন বালাই নেই। প্রতিদিন সকাল থেকেই তরা হাসপাতালে ভিড় করতে থাকে। তাদের বেপরোয়া কারনে রোগী ও স্বজনেরা বিড়ম্বনায় পড়ছে। ওষুধ কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি রোগীর বেশে হাসপাতালের বর্হিবিভাগ ও অন্তবিভাগে প্রবেশ করে।

আবার অনেকে প্রকাশ্যে চিকিৎসকের কক্ষে গিয়ে জটলা তৈরি করছে।এছাড়া চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ও বিভিন্ন কোনে অবস্থান নিয়ে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ছোঁ মেরে কেড়ে নেয়। আবার ব্যবস্থাপত্রের ছবিও তোলেন। ভুক্তভোগীরা এর প্রতিকার দাবি করেছেন।

এদিকে,গত ১৫ মে যশোর জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির ৯ জন প্রতিনিধিকে আটক করে।

তারা হলেন, যশোরের বেনাপোল পৌর এলাকার এরশাদ আলীর ছেলে ওহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়ার কুমারখালির আলাউদ্দিন নগর গ্রামের ইউনুচ আলীর ছেলে বিজয় হোসেন, দৌলতপুরের বসির উদ্দিনের ছেলে নাসির উদ্দিন, রাজশাহীর চারঘাট তালিবাড়িয়ার ইব্রাহিম আলীর ছেলে ইমরুল হোসেন, বাগমারার আনিসুর রহমানের ছেলে মোস্তাক আহমেদ, একই গ্রামের নজরুল ইসলাম, বরিশালের শ্যামলালের ছেলে সুব্রত মন্ডল, চাপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মুজিবুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরের আব্দুস সামাদের ছেলে মমিনুর রহমান।

তাদের ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে ২০০৯ এর ৫৪ ধারা মতে মোট ৪৫ শ টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপরেও তাদের অবৈধ প্রবেশ থামছেনা।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার বিষয়টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে।

তাদের অবাধ বিচরণের বিষয় নিয়ে ৪ জুলাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিংয়ে জোরালো আলোচনাও হয়েছে। জেলা প্রশাসক আশ্বস্ত করেছেন যে কোন ভাবে এদের অবাধ বিচরণ ও ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা ঠেকাতে হবে। সেই থেকে নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করছে ভ্রাম্যমান আদালত। এরপরেও তারা গোপনে সুযোগ নিচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের দৌরাত্ম্য কমাতে আরো কঠোর ভূমিকা পালন করা হবে।

Comments