প্রেম প্রতারিত হয়ে জীবন গেল অন্তঃসত্ত্বা কলেজ ছাত্রী ঐশীর

প্রকাশিত: ৭:৫০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি: হতভাগা এক কলেজ ছাত্রীর নাম মাহমুদা ঐশী (১৯)। প্রেমিক সৈয়দ শামীম তাকে আশ্বস্ত করেছিলো বিয়ে করে তারা সুখের সংসার করবেন। এরপর থেকে হয়েছে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক। কিন্তু ঐশী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর বিয়ে করতে তালবাহানায় মাতে প্রেমিক সেয়দ হাসান।

ওই কলেজ ছাত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করেছেন তিনি। প্রতারক প্রেমিকের কথা রাখতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত তাকে চলে যেতে হলো ফেরার দেশে। গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেছেন তিনি। ঐশী যশোর উপশহর এস ব্লকের আসাদুজামান আসাদের মেয়ে ও যশোর সরকারি এম এম কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করতেন।

এই ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় প্রেমিক শামীমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনায় সহযোগিতার অভিযোগে তার দুই ভাই নাসিম ও নাঈমকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নাসিম ও নাঈমের সাথে ঐশী একই কলেজে লেখাপড়া করে। তাদের মাধ্যমে দিয়ে বড়ভাই সৈয়দ শামীমের সাথে পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে তার সাথে ঐশীর কথাবার্তা চলতো। এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে।

এরপর বিয়ে প্রস্তাব দিয়ে তার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে। গত ৩ মে ঐশীর কলেজ ছুটি হলে তাকে ফুসলিয়ে শামীম তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। এবং তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে তাদের মধ্যে একাধিকবার দৈহিক সম্পর্ক হয়েছে।

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১২ জুলাই ঐশী শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু সে কাউকে কিছু বলতে চায়না। ১৭ জুলাই খুববেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে যশোরের কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানাযায় ঐশী আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

ঐশীর ছোট মা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে পরীক্ষা করে দেখা গেছে তার পেটের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থা রয়েছে। ডাক্তার নার্গিস আক্তার জরুরী ভিত্তিতে অপারেশনের জন্য পরামর্শ দেন। তাকে রাতেই কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাত ১২টার দিকে তার অপারেশন হয়। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। রাত সাড়ে ৩টার দিকে চিকিৎসক তাকে যশোর ইবনে সিনা হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানকার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে মারা যান ঐশী।

খবর পেয়ে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তিনি আরো জানান, ঐশী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিয়ের জন্য শামীমকে চাপ প্রয়োগ করে। ঐশীর মোবাইল ফোনের ম্যাসেজে তা উল্লেখ রয়েছে।

কিন্তু শামীম বিয়ে না করার জন্য তালবাহানা করতে থাকে। গর্ভপাতের জন্য শামীম কোন ওষুধ খাইয়েছে কি-না তা তিনি বলতে পারনে না। ঐশীর লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কাজল মল্লিক জানিয়েছেন, ঐশী আড়াই মাসের অন্তঃসত্বা ছিল এটা সঠিক।

তবে তার জরায়ুতে সমস্যা ছিল। বাচ্চা যেখানে কনসেপ্ট করার কথা সেখানে না করে পাশের টিউবে (নালীতে) রয়েছে। ফলে নালী বড় হয়ে তা ফেটে যায়। এই ধরনের সমস্যা হলে কোন নারী সন্তান জন্ম দিতে পারে না। বড় হওয়ার আগেই অপারশন না করলে মায়ের মৃত্যু হয়। এ ক্ষেত্রে তাই হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা তার।

এই বিষয়ে যশোর উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে শামীমকে আটক করা যায়নি। তবে তার ছোট ভাই নাসিমকে আটক করা হয়েছে। সে এই মামলার দুই নম্বর আসামি।

যশোর কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) শামসুদ্দোহা জানিয়েছেন, ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতেই মামলা (নম্বর-৪৪, তারিখ-১৮-০৭-১৯) রেকর্ড করে। এখন মৃত্যু হওয়ায় নতুন ধারা যোগ হবে। মুল আসামিকে আটকের জন্য অভিযান চলছে।

Comments