রিফাত হত্যা: ৫ দিনের রিমান্ডে রিশান ফরাজী

প্রকাশিত: ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০১৯

বরগুনা সদরে রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলায় গ্রেফতার তিন নম্বর আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শুক্রবার সকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে রিশান ফরাজীকে গ্রেফতারের পর শুক্রবার সকালে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত রিশান ফরাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিশান এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রিশান ফরাজীকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত রিশান ফরাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলার রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ তিনজন রিমান্ডে রয়েছেন।

বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেনের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অভিযান চালিয়ে রিশানকে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, এ পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া সব আসামি এবং মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কারণে সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মিন্নিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিন্নি এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতেন। শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটাতে যা যা প্রয়োজন, তা সম্পাদনে খুনিদের সব ধরনের মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন মিন্নি। মিন্নি নিজেও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আগে ও পরে খুনিদের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনও হয়েছে।

রিফাত হত্যাকাণ্ড মাদকের কারণে হয়নি দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডটি কোনো মাদকের কারণে ঘটেনি। ঘটেছে ব্যক্তিগত জিঘাংসার কারণে। মাদক বা অন্য কোনো ইস্যুর কথা উঠলে মামলাটির ফোকাস ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে পারে। এ মামলায় বাদী যাদের হত্যাকারী দাবি করেছেন, আমরা তাদের প্রায় সবাইকেই ধরেছি এবং কাউকেই ছাড় দিচ্ছি না। এ পর্যন্ত আমরা এজাহারনামীয় আটজনকে গ্রেফতার করেছি। সর্বমোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অতএব এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।

এ মামলায় নয়ন বন্ডদের যারা ছত্রছায়া দিয়েছে, তাদের কী হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, যাদেরই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।

বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, চারজন রিমান্ডে আছে।

Comments