যশোর জেনারেল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে অস্ত্রোপচার টেবিলে প্রসূতির মৃত্যু

প্রকাশিত: ৯:৪১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি:  যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির দুই ঘন্টা পর অস্ত্রোপচারের টেবিলে এক প্রসূতি নারীর মৃত্যু হয়েছে। ভর্তির পর উন্নত চিকিৎসা ও সঠিক সময়ে অস্ত্রোপচার না করার কারণে তিনি মারা গেছেন বলে স্বজনদের অভিযোগ অভিযোগ।

সরকারি এই হাসপাতালে গাইনী বিভাগে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার পরও তাদের অনুপস্থিতিতে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন গাইনী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রবিউল ইসলাম।

প্রসূতি ওয়ার্ডের রিপোর্ট খাতার তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ডহেরপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের স্ত্রী প্রসূতি পারভিনা বেগমকে (৩২) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন দায়িত্বরত সেবিকা। ইউনিট-১ এ রোগীর ভর্তি রেজিস্ট্রার নম্বর হলো ২৩৪১৬১/১৯।

আব্দুল মুজিদ জানান, ভর্তির পর রোগীকে ওয়ার্ডে আনার পর কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পাওয়া যাইনি। ১০ থেকে ১২ মিনিট পর দায়িত্বরত সেবিকা ও ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগীকে নরমাল ডেলিভারী কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে নেয়ার সময় রোগীর শরীরে হালকা খেচনি ছিলো।

কিছু সময় পর ওই চিকিৎসক বেরিয়ে এসে একজনকে মুঠোফোনে জানান ‘স্যার মনে হচ্ছে রোগী অ্যাকলেমশিয়ায় আক্রান্ত’। অপর প্রান্ত থেকে দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেন ইন্টার্ন। এরপর খেচুনি বেড়ে যাওয়ায় ওই ইন্টার্ন ফের ফোনে জানান ‘ স্যার সমস্যা কমছেনা। ফোন কেটেই আয়াকে বলেন রোগীকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যান। বেলা ১০টার দিকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেয়া হয় রোগীকে। তখনও কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওই রোগীর অস্ত্রোপচারের জন্য আসেননি। কয়েক মিনিট পরেই তাকে জানানো হয় রোগী মারা গেছেন।

রোগীর স্বামী আব্দুল মুজিদসহ স্বজনদের অভিযোগ, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় প্রসূতি পারভিনা বেগমের মৃত্যু হয়েছে। অস্ত্রোপচার কক্ষে দায়িত্বরত একজন সেবিকা নাম প্রকাশ না করার জানান, গাইনী ইউনিট-১ এর কোন চিকিৎসক ওটিতে ছিলেন না। ইউনিট-২ চিকিৎসকরা নিজস্ব ইউনিটের রোগীদের অস্ত্রোপচার করছিলেন।

তবে ইউনিট-১ এর প্রধান গাইনী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রবিউল ইসলাম দাবি করেছেন, ওই প্রসূতি ভর্তি হওয়ার পর প্রথমে ডা. শারমিন নাহার পলি তার চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। পরে তিনি নিজে ওয়ার্ডে ওই রোগী দেখেছেন।

প্রথমে নরমাল ডেলিভারীর চেষ্টা করা হয়েছে। অবস্থা খারাপ হলে নেয়া হয় ওটিতে। কিন্তু সিজারের আগেই টেবিলে তিনি মারা যান। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, ভর্তির সময় নাকি রোগীর অবস্থা খারাপ ছিলো। অজ্ঞান বিভাগের একজন চিকিৎসক তাকে বলেছেন সিজারের আগ মুহুর্তে রোগীর খেচুনি শুরু হয়। একপ্রকার মারা যান ওই প্রসূতি।

তিনি আরো জানান, গাইনী বিভাগের কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওই রোগীকে দেখভাল না করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মারা গেলে অবশ্যই তার জবাবদিহিতা করতে হবে।

Comments